মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমান্ত খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মানবিক কারণেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
৮ অক্টোবর রোববার সকালে রাজধানীর বনানীতে ফিটনেসবিহীন পরিবহনের বিরুদ্ধে বিআরটিএর অভিযান দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
গত আগস্টের শেষ দিকে মায়ানমারে কয়েকটি চেকপোস্টে হামলার জের ধরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা। অভিযানের নামে তারা অনেক রোহিঙ্গাকে হত্যা করে এবং হাজার হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়।
নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের অভিমুখে ঢল নামে রোহিঙ্গাদের। ইতোমধ্যে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মাঝখানে রোহিঙ্গা ঢল কমে আসলেও আবারও নতুন করে রোহিঙ্গা আসতে শুরু করছে বাংলাদেশে।
বাংলাদেশে আবারও নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল আসতে পারে বলে জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ দপ্তরের প্রধান মার্ক লোকক দুই দিন আগে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন ছিটেফোঁটা লোক আসছে। কিভাবে জনস্রোত আসছিলো সেটা আমি দেখেছি। তবে এখন আর সেই জনস্রোত নেই। আসতে পারে সেই আশঙ্কা জাতিসংঘ করছে। কাজেই জাতিসংঘেরই এখানে কঠোর অবস্থান নেয়া উচিত। যাতে করে নতুন করে ইনফ্লাক্স না হতে পারে।
রোহিঙ্গা ইস্যূতে সরকার কূটনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের দাবি করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন,আমাদের কূটনৈতিক তৎপরতা যদি ব্যর্থ হতো, তাহলে মিয়ানমারের সুর নরম হলো কেন? মায়ানমারের মন্ত্রী সফরে এসে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের সব কিছুর আরেকটু ধৈর্য্য ধরে ঠান্ডা মাথায় অপেক্ষা করতে হবে। উস্কানির ফাঁদে পা দিলে ক্ষতি হবে গোটা দেশের, এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে।
সেতুমন্ত্রী বলেন,বিএনপি রোহিঙ্গা সমস্যা সম্পর্কে কতটুকু আন্তরিক সেটা আজকে দেখতে হবে। বাংলাদেশ যে সংকটে পড়ছে তা নিয়ে তারা কতটুকু কনসার্ন। দেশের এ গভীর সংকটের সময় তাদের নেত্রী দেশে আসার তারিখ দিয়েও আসছেন না। তাদের এক নম্বর নেতার তো কোন উদ্বেগের বিষয় চোখে পড়ছে না। আর দেশে যারা আছেন তারাও সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করছেন। চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে হতাশ কর্মীদের চাঙ্গা করতে আবোল তাবোল বকছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন,এ মানববোঝায় আমাদের অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। পর্যটনেও প্রভাব পড়ছে। সেইসব চিন্তা করে প্রতিবেশী দেশ চীন, ভারত ও বিশ্বজনমতের কাছে আমাদের অনুরোধ যাতে দ্রুত আমাদের উপর যে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মায়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করতে। এ ইস্যুতে বিশ্ব সভাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোর বড় ভূমিকা রাখা দরকার। কারণ আমাদের এখানে স্থিতি নষ্ট হলে, প্রতিবেশির ঘরে আগুন লাগলে এ আগুনের আঁচ অন্য প্রতিবেশিও পাবে।
নতুন করে রোহিঙ্গা চাপ বাংলাদেশের উপর বাড়তি জনসংখ্যা চাপানোর ষড়যন্ত্রের অংশ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন,সেটা আমি জানি না। ষড়যন্ত্র তো একটা আছেই। এখন মায়ানমার তাদেরকে নাগরিক বলেই স্বীকার করে না। এ মূহুর্তে কেন হলো সেটা আরও ভেবে দেখতে হবে। চক্রান্ত তো একটা আছে কিন্তু এর স্বরূপ এখন বলা যাচ্ছে না।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৮ অক্টোবর ২০১৭