মাসটেক্স’র ১২০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি

মেসার্স মাসটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধা অপব্যবহারের মাধ্যমে ১২০ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার ২ জানুয়ারি এ মামলা করা হয়েছে বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ড. মইনুল খান জানান, গত ২০ আগস্ট ভোর ৪ টায় শুল্ক গোয়েন্দার টহল দল রাজধানীর ইসলামপুর থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে একটি কাভার্ড ভ্যান আটক করে।

কাভার্ড ভ্যানটিতে মেসার্স মাসটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে একটি বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের আমদানিকৃত কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে আনা হয়।

পরে শুল্ক গোয়েন্দা ভ্যানটি আটক করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে দায় স্বীকার করে জরিমানা ও যাবতীয় শুল্ক-করাদি পরিশোধ করেছেন।

মইনুল খান জানান, এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শুল্ক গোয়েন্দা একটি কমিটি গঠন করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে।

অনুসন্ধান চলমান অবস্থায় শুল্ক গোয়েন্দা ইসলামপুর থেকে প্রতিষ্ঠানটির অপর একটি পণ্য চালানের কাভার্ড ভ্যান আটক ও মামলা দায়ের করে।

সেটিও ইতোমধ্যে অনুরূপভাবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে জরিমানা ও যাবতীয় শুল্ক-করাদি আদায়পূর্বক নিষ্পত্তি করা হয়েছে।

অনুসন্ধান দল প্রতিষ্ঠানটির লিয়েন ব্যাংকসমূহ যথা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের আমদানি ও রপ্তানি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে।

এছাড়াও বিজিএমইএ হতে ইস্যুকৃত ইউডিসমূহ সংগ্রহ ও এনবিআরের সিআইএস সেল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ১২৬ কোটি ২৯ লাখ ৫৪ হাজার ৭৩৮ টাকার কাঁচামাল আমদানি করেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা দল গত ২১ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করে দেখতে পায়, মাত্র ৯২০৬.৯০ কেজি কাঁচামাল প্রতিষ্ঠানের প্রোডাকশন ফ্লোরে ও বন্ডেড ওয়্যারহাউজে মজুদ রয়েছে।

প্রতিষ্ঠানের ইউডি, আমদানি ও রপ্তানি তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্ন থেকে গত ২০ আগস্ট পর্যন্ত বন্ড সুবিধায় শুল্ক-করাদি মুক্তভাবে আমদানি করে সর্বমোট ৫৬,৫৮,৯৬১.১৩ কেজি কাঁচামাল খোলা বাজারে বিক্রি করেছে।

যার মূল্য ১২০ কোটি ৫৩ লাখ ৫৭ হাজার ২৪৩ টাকা ৮৮ পয়সা। যা প্রতিষ্ঠানটি ফাঁকি দিয়েছে। খোলা বাজারে বিক্রি করে প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমস আইন লঙ্ঘন করেছে।

তিনি বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যহারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছে বিধায় উল্লিখিত অর্জিত অর্থ ‘ডার্টি মানি’ হিসেবে বিবেচিত।

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণ করে শুল্ক আইনের শর্ত ভঙ্গ করে খোলাবাজারে বিক্রি এবং এ থেকে অর্জিত অর্থ বিভিন্নভাবে বিনিয়োগ ও লেনদেন করেছেন। এ ধরণের অবৈধ অর্থের লেনদেন মানিলন্ডারিং এর পর্যায়ে পড়ে।

এই অবৈধ আর্থিক কর্মকাণ্ড চোরাচালান ও শুল্ক সংক্রান্ত ‘সম্পৃক্ত অপরাধ’ হওয়ায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫) এর ধারা ৪ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।

প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সহযোগিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে শুল্ক ফাঁকিসহ মানিলন্ডারিং এর অপরাধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে জানান মইনুল খান।

আজকের বাজার:এলকে/ ৩ জানুয়ারি ২০১৮