মায়ানমারে ‘হিন্দুদের গণকবর’: দোষীদের কঠোর শাস্তি চাইল ভারত

মায়ানমারের রাখাইনে হিন্দুদের কথিত গণকবরের সন্ধানের খবরে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি দোষীদের কঠোর শাস্তি দেয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত। ভারতের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার যথাযথ তদন্তের দাবি জানিয়ে অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করার কথা বলা হয়েছে।

২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রাবিশ কুমার বলেছেন,মায়ানমারের স্টেট কাউন্সেলরের কার্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত বিবৃতি অনুসারে গণকবরে পাওয়া সমস্ত লাশ হিন্দুদের। ভারত এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের রিপোর্ট দেখেছে এবং মায়ানমার সরকারের বিবৃতিও পড়েছে। এরকম অবস্থায় ভারত সবধরণের সন্ত্রাসবাদের বিরোধিতা করে।

মুখপাত্রটি বলেন,ভারত একথা জোরের সঙ্গে বলতে চায় যে, কোনোভাবেই ওই সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দেয়া যায় না যাতে সংঘর্ষের সময় সাধারণ নাগরিকদের টার্গেট করা হয়। ভারত আশা করছে, মায়ানমার সরকার সন্ত্রাসবাদীদের সাজা দেবে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সকলকে যথাসম্ভব সাহায্য করবে যাতে তাদের মধ্যে নিরাপত্তার অনুভূতি আসে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ভারত রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে বলেও রাবিশ কুমার জানান।

প্রসঙ্গত, গত (রোববার) মায়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রাখাইন প্রদেশের ইয়ে বও কেয়া গ্রামে গণকবর থেকে নারীসহ ২৮ জন হিন্দুর দেহ উদ্ধার হয়েছে দাবি করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ওই ঘটনার নেপথ্যে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হাত রয়েছে বলেও দাবি করা হয়।

কিন্তু মায়ানমারের ওই দাবির সত্যতা কোনো নিরপেক্ষ গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। যেসব ছবি এ ব্যাপারে প্রকাশ করা হয়েছে তা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ মায়ানমারের ভূমিকাকে ‘লাশের রাজনীতি’ বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) ওপর হিন্দুদের হত্যার দায় চাপিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা নিধন সংক্রান্ত ঘটনার যথাযথ তদন্তে নিজেদের অনাগ্রহকেই প্রকাশ করেছে।

সংস্থাটি বলছে, ময়ানমারের মরদেহ নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা উচিত এবং সামরিক নৃশংসতার অবসান ঘটিয়ে জাতিসংঘের তদন্ত দলকে রাখাইনে প্রবেশ করতে দেয়া উচিত, যাতে সব ধরনের অপরাধের যথাযথ তদন্ত করা যায়।

এদিকে, তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নাকচ করে ‘আরসা’র দাবি, তারা বেসামরিকদের লোকেদের ওপর কোনো হামলা চালায় না এবং কোনো হিন্দুকে তারা হত্যাও করেনি।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস-এর গবেষক জারনি ‘মিয়ানমারের অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন। পাশাপাশি যেসব হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের মরদেহ এবং গণকবর কোথায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ওই তথ্য মিয়ানমার সরকারের দাবি করা এবং তা কোনো স্বাধীনসূত্র থেকে পাওয়া নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।

মায়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধদের চলমান নির্যাতনের মুখে প্রাণ বাঁচাতে কমপক্ষে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭