জরুরি ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্থানীয়ভাবে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শক্ত চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
বর্তমানে বাংলাদেশ ১১ লাখের ওপর রোহিঙ্গাকে থাকার সুযোগ দিয়েছে, যারা তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চালানো নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
ইতালি সফরকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সোমাবার এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং এটি সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার ওপর জোর দেন বলে মঙ্গলবার পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার জন্য ‘অনুকূল পরিবেশের তৈরির অভাব’ এবং মিয়ানমার ‘বিশ্বাসের ঘাটতি দূর করতে ব্যর্থ’ হওয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
২৪ অক্টোবর, মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিচালিত কোম্পানি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কমান্ডারদের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউরোপে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে ড. মোমেন সোমবার ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট ম্যানলিও ডি স্টেফানো এবং রোমে ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড ব্যাসলির সাথে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি উত্থাপন করেন।
ম্যানলিও ডি স্টেফানোর সাথে বৈঠকে পরারাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপদ, সম্মানজনক ও স্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো চাপ দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
ইতালিয়ান সেক্রেটারি অব স্টেট রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং ইতালি সরকার রোহিঙ্গাদের পক্ষে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দেবে বলে জানিয়েছেন।
তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, ইতালি ইইউর সঙ্গে থেকে এবং পৃথকভাবেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে।
আরেক বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, রোহিঙ্গাদের স্বদেশ মিয়ানমারে ‘স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী’ উপায়ে ফিরিয়ে দিতে ডব্লিউএফপির আরও অনেক কিছু করা দরকার।
ড. মোমেন কক্সবাজারের আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ডাব্লিউএফপির দীর্ঘদিনের সম্পর্কের প্রশংসা করেন।
গত সপ্তাহে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বাংলাদেশ সফরে আসা ডাব্লিউএফপির নির্বাহী বোর্ড অ্যাম্বাসেডর হিশাম মোহাম্মদ বদর রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে তাদের সফর সম্পর্কে ড. মোমেনকে ব্রিফ করেছিলেন।
বোর্ডের সভাপতি এবং প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে বাংলাদেশ যে মানবিক অবস্থান নিয়েছে তার প্রশংসা করেন।
নির্যাতনের কারণে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থেকে পালিয়ে আসা ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে অসাধারণ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন তার প্রশংসা করেন ডাব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক।
তিনি উল্লেখ করেন, মিয়ানমারকে জরুরি ভিত্তিতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ীভাবে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য তাদের ওপর একটি শক্ত চাপ দেয়া দরকার।
বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য ডাব্লিউএফপি যথাসাধ্য চেষ্টা করবে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেনকে জানান নির্বাহী পরিচালক এবং নির্বাহী বোর্ডের সভাপতি। তথ্য-ইউএনবি
আজকের বাজার/এমএইচ