নতুন ভ্যাট আইনের বাস্তবায়ন হলে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট হারের প্রভাব পড়বে না; ফলে দামও বাড়বে না। সুতরাং মূল্যস্ফীতি বাড়ার কোনো কারণ নেই। নতুন আইনের কারণে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতি কিছুটা বাড়তে পারে; তবে শূন্য দশমিক ৬ শতাংশের বেশি বাড়বে না।
আজ ২০ মে শনিবার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের সম্মেলন কক্ষে ‘মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ বাস্তবায়ন’ বিষয়ক আলোচনা সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প আয়োজিত এ সভায় দেশের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিজনেস এডিটর, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সংবাদকর্মীরা অংশ নেন।
এনবিআর সদস্য (মূসক নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর বলেন, বিশ্বে গড় ভ্যাট হার ১৬.৫ শতাংশ আর আমাদের ১৫ শতাংশ। নতুন আইনে ভ্যাট হার বাড়ছে না। ভারতে যেসব পণ্যে ভ্যাট হার ৫ শতাংশ, আমাদের দেশে সেসব পণ্যে কোনো ভ্যাট নেই। অনেক দেশে ভ্যাট হার ৬-৭ শতাংশ। কিন্তু সেসব দেশে রেয়াত নেওয়ার সুযোগ নেই। নতুন আইনে হিসাব রাখলে রেয়াত নেওয়া যাবে, ফলে পণ্যের দাম বাড়ার সুযোগ নেই। আগের আইনে অনেক পণ্যে রেয়াত নেওয়া যেত না।
ভ্যাটের কারণে বিদ্যুতের দাম বাড়বে কি না- সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয় সরকার। ভতুর্কি না দিলে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি হতো। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সঠিকভাবে উপকরণ কর রেয়াত নেওয়ার পর ভতুর্কি বহাল থাকলে কোনো অবস্থায় এর দাম বাড়বে না। শুধু বিদ্যুৎ নয়; কোনো খাতেই ভ্যাটের কারণে দাম বাড়বে না।
তিনি বলেন, ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৮ লাখ ৬৪ হাজার। ইতোমধ্যে অনলাইনে প্রায় ১৫ হাজার প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে; এরমধ্যে প্রায় ৯ হাজার নতুন প্রতিষ্ঠান। আমরা ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন মেলা করছি। ভ্যাট দেওয়ার যোগ্য সব প্রতিষ্ঠানকেই এর আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ব্যবসার হিসাব সঠিকভাবে রাখলে রেয়াত নেওয়া সহজ হবে। রেয়াত নেওয়ার ক্ষেত্রে ডেডো (কর রেয়াত) অফিসে যেতে হবে না। ডেডোর যে সীমাবদ্ধতা ছিল- তা নতুন আইনে সহজ করা হয়েছে।
ভ্যাট বিষয়ে ভোক্তাদের সঙ্গে এনবিআর কথা বলেনি- এমন মন্তব্যের পর ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর বলেন, ক্যাবের মাধ্যমে আমরা ভোক্তাদের আশ্বস্ত করেছি, কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। আইন প্রণয়ন হয়েছে সংসদে, সেখানে ভোক্তাদের প্রতিনিধি সংসদ সদস্যরা ছিলেন।
ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা নতুন ভ্যাট আইনের পক্ষে। আমরা মনে করি, নতুন ভ্যাট আইনের মধ্যদিয়ে ইনফারমাল ইকোনমির একটি বড় অংশ ফরমাল ইকোনমিতে আসবে। এটি অর্থনীতি ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক।
তিনি বলেন, আমরা মানুষ নিয়ে কাজ করি, এনবিআরও মানুষ নিয়ে কাজ করে। মানুষের ওপর নতুন ভ্যাট আইনের প্রভাব কেমন হবে- সেটা উদ্বেগের বিষয়। এনবিআর সেটি পরিষ্কার করেছে। এনবিআর আশ্বস্ত করেছে, ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের ফলে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়বে না।
জিয়াউর রহমান বলেন, দ্রব্যমূল্য মনিটরিং করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ভোক্তা অধিকার, ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে আছেই। তিনি বলেন, ভোক্তাদের দেওয়া ভ্যাট কোষাগারে যাচ্ছে কি না- তা নিয়ে জনমনে শঙ্কা ছিল। নতুন আইনে ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকবে না।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এনবিআর সদস্য (শুল্ক ও ভ্যাট প্রশাসন) ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল হাসান। নতুন ভ্যাট আইনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন। এছাড়া নতুন ভ্যাট আইন নিয়ে উপস্থাপনা দেন ভ্যাট অনলাইন উপ পরিচালক মুহম্মদ জাকির হোসেন।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ২০ মে ২০১৭