মূল কাজ শুরুর লাইসেন্স পেল রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র

রেগুলেটরি বা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়েরা) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে (বাপশক) ডিজাইন ও কনস্ট্রাকশন লাইসেন্স দিয়েছে। এর ফলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল নির্মাণকাজ শুরু করা যাবে। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) গাইডলাইন অনুযায়ী মূল নির্মাণকাজ শুরুর আগে এ লাইসেন্স গ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

৪ নভেম্বর শনিবার ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বায়েরার চেয়ারম্যান ড. নঈম চৌধুরী বাপশকের চেয়ারম্যান ড. দিলীপ কুমার সাহার কাছে এ লাইসেন্স হস্তান্তর করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

অনুষ্ঠানে স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এ লাইসেন্সের মাধ্যমেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল কাজ শুরু হবে। বাংলাদেশ আজ থেকেই পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদনের দেশগুলোর ক্লাবে প্রবেশ করলো।

মন্ত্রী বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ হচ্ছে। এটি আমাদের জাতীয় আত্মবিশ্বাসও বৃদ্ধি করবে যে, বাঙালিও পারে পরমাণু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহ, উদ্যোগ, সাহস এবং দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (বায়েরা) এ অনুমতি প্রদানে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সব সেফটি মানদণ্ড ও গাইডলাইন এবং বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ও বিধিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করেছে। এছাড়াও রাশান ফেডারেশন, ভারত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাসহ স্থানীয় ও নিজস্ব জনবলের মাধ্যমে সব রেগুলেটরি ডকুমেন্টের কারিগরি মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞ মতামতও গ্রহণ করা হয়েছে।

লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক এবং মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) মো. আবুল কালাম আজাদ। গেস্ট অভ্ অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আনোয়ার হোসেন।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (বায়েরা) চেয়ারম্যান ড. নঈম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. দিলীপ কুমার সাহা, রাশিয়ার রেগুলেটরি সংস্থা রোস্টেকনজরের ডেপুটি চেয়ারম্যান আ্যলেক্সি ফেরাপনটভ এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বায়েরার পরিচালক ড. সত্যজিৎ ঘোষ।

প্রসঙ্গত, রাশিয়ার দেয়া প্রকল্প ব্যয়ের ৯০ শতাংশ সরবরাহ ঋণে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পে রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক (থ্রি প্লাস জেনারেশন) ‘ভিভিইআর ১২০০’ প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হবে। প্রতিটি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি চুল্লি স্থাপন করা হবে রূপপুরে। ২০২৩ সালে এর প্রথমটি এবং পরের বছর দ্বিতীয় চুল্লিটি চালু হওয়ার কথা।

বর্তমানে পৃথিবীর ৩১টি দেশে ৪৫০টি পারমাণবিক বিদ্যুতের ইউনিট চলমান আছে। এগুলোর মোট উৎপাদনক্ষমতা প্রায় তিন লাখ ৯২ হাজার মেগাওয়াট (৩৯২ গিগাওয়াট)। বাংলাদেশ ছাড়া আরও ৬০টি ইউনিট বিভিন্ন দেশে নির্মাণাধীন রয়েছে, যার সর্বমোট ক্ষমতা প্রায় ৬০ হাজার মেগাওয়াট।

আগামী ৩০ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের মূল্য কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৪ নভেম্বর ২০১৭