মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে মুফতি হান্নানের রিভিউ খারিজ

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী হত্যাচেষ্টা ও একই ঘটনায় পুলিশসহ তিনজনের মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে হরকতুল জিহাদ নেতা মুফতি হান্নানসহ ৩ জনের করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। রবিবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ রিভিউ খারিজ করে এই রায় দেন।

এর ফলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর কোনো বাধা নেই। তবে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে আবেদন করতে পারবেন। এর আগে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আপিলে বহাল থাকা মৃত্যুদণ্ডের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদন করেন মুফতি হান্নান। গত ৭ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ মুফতি হান্নানসহ আসামিদের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করে দেন। এই মামলায় মুফতি হান্নান ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুজন হলেন- শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার ওরফে রিপন।

এছাড়া হাইকোর্টে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল থাকা দুই আসামি মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দাল আপিল করেননি।

মামলার বিবরণীতে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেট জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন।

ঘটনার দিন অজ্ঞাতপরিচয় আসামির বিরুদ্ধে মামলা করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র প্রদান করা হলে ২০০৭ সালের ৩১ জুলাই মুফতি হান্নানসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর সম্পুরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের নাম অন্তর্ভুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়।

২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত মুফতি হান্নান, শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন ওরফে রিপনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। অন্যদিকে মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে মফিজ এবং মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে আসামিরা জেল আপিলও করেন। প্রায় সাত বছর পর ২০১৬ সালের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে শেষ হয় ৩ ফেব্রুয়ারি। পরে বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই বছর ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।

পরে একই বছর ১৩ জুলাই হাইকোর্টে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন মুফতি হান্নান ও শরীফ শাহেদুল আলম ওরফে বিপুল। তাদের সঙ্গে আদালত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপনের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত করে একইসঙ্গে তিনজনের আপিল শুনেন আপিল বিভাগ।

গত বছর ১৫ নভেম্বর এই মামলায় হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকা মুফতি হান্নানসহ তিন আসামির করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আপিল বিভাগ। সেই আপিল শুনানি গত ৩০ নভেম্বর শুরু হয়, যা শেষ হয় ৬ ডিসেম্বর। শুনানি শেষে ৭ ডিসেম্বর তিনজনের মৃত্যুদণ্ডই বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ।
\