মেডিয়েশন প্রক্রিয়া মামলাজট নিরসনে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে : প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, মেডিয়েশন প্রক্রিয়া মামলাজট নিরসনে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আজ শনিবার মেডিয়েশন বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সারাদেশের ২৮০ জন বিচারককে সনদ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটি (বিমস)। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক মেডিয়েশন অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত সুপ্রিমকোর্টে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী। স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মেডিয়েশন সোসাইটির (বিমস) চেয়ারম্যান এডভোকেট এস এন গোস্বামী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন, ভারতের সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক প্রধান বিচারপতি গীতা মিতালী, জাতিসংঘের অম্বুসম্যান ড. কেভিন বেরি ব্রাউন, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ ফজলে খোদা মোহাম্মদ নাজির, সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ জয়শ্রী সমাদ্দার ও বাংলাদেশ ইন্ডিয়া মেডিয়েটর্স ফোরামের চেয়ারম্যান জর্জ যিশু ফিদা ভিক্টর।
এ সময় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া, বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেল। অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মেডিয়েশন অ্যাওয়ার্ড ২১ এর জন্য ৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, বিচারক, আইনজীবী ও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে অবশ্যই মেডিয়েশনের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তিতে আগ্রহী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কেননা, মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হলে তা বিচারের ব্যাপ্তিকে ক্ষুন্ন করে। এতে মামলার পক্ষসমূহের খরচ বেড়ে যায় এবং আদালতে মামলার জট বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রধান বিচারপতি বলেন, সকল বিচারপ্রার্থী দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার পাওয়ার অধিকারী। সে ক্ষেত্রে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে মেডিয়েশন প্রক্রিয়া মামলাজট নিরসনে অনন্য ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি বলেন, মূলত মেডিয়েশন হলো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির একটি পদ্ধতি। যে পদ্ধতি আদালত-ট্রাইব্যুনালের প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে থেকে অভিযোগ নিষ্পত্তিতে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশে মেডিয়েশন পদ্ধতি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে অনুসরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে পঞ্চায়েত অন্যতম। পঞ্চায়তের সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগ দ্বারাও সমাদৃত হয়ে থাকে।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, মেডিয়েশন পদ্ধতিতে একজন মেডিয়েটরের মাধ্যমেই অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়। যেখানে উভয়পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা হয়। ফলে উভয়পক্ষের সর্বসম্মতিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয়। এটি বিচার বিভাগের ওপর থেকে মামলার চাপ নিরসনে কাজ করে এবং বিচারে সমতা নির্ণয় করে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে সফলভাবে দেওয়ানি-ফৌজদারি মামলায় মেডিয়েশনের প্রয়োগ হচ্ছে। বর্তমানে নিউইয়র্কে ১০ শতাংশ দেওয়ানি মামলা বিচারের বিভিন্ন পর্যায়ে থেকেও মেডিয়েশনের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হচ্ছে। কানাডায় প্রায় ৮০ শতাংশ মামলা এভাবে নিষ্পত্তি হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াতেও মেডিয়েশনের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তিতে জোর দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে সমগ্র বিশ্বেই মামলা নিষ্পত্তিতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির পন্থা হিসেবে মেডিয়েশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।