মেহেরপুরের গাংনীতে ব্লাকবেবি জাতের তরমুজ চাষ

মেহেরপুরের গাংনীতে ব্লাকবেবি জাতের তরমুজ চাষ করে অনেকেই সফলতা পেয়েছেন। লিজন তাদের এক জন।  প্রবাস জীবন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্ম ভালো না লাগায় দেশে ফিরে এসে ব্লাকবেবি তরমুজ চাষ শুরু করেন। সফলতাও পেয়েছেন তিনি। তার দেখাদেখি এখন এলাকার যুবকরা ব্লাকবেবি তরমুজ চাষে ঝুঁকছে।

প্রায় আটমাস আগে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে স্থায়ীভাবে দেশে ফিরে আসেন লিজন। দেশে এসে স্থানীয় বন্ধু আজাদ ও সাইফুলকে সাথে নিয়ে নিজস্ব তিনবিঘা আর সাত বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ১০ বিঘা জমিতে ব্লাকবেবি তরমুজ চাষ শুরু করেন। সেই জমিতে তরমুজে তরমুজে ভরে গেছে। লিজন জানান, মাত্র ৬০-৬৫ দিনের মধ্যে ক্ষেতজুড়ে এখন গাঢ় সবুজ তরমুজ। বিঘাপ্রতি দুই লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন তিনি। যেখানে খরচ হয়েছে মাত্র ৫০-৬০ হাজার টাকা।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ব্লাকবেবি জাতের তরমুজ চাষ হলেও মেহেরপুর জেলায় ব্লাকবেবি জাতের তরমুজ চাষ এবারই প্রথম। চরম তাপদাহের মধ্যে এখন তরমুজের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। তাপদাহের কারণে ব্লাকবেবি তরমুজের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। লিজন বলেন, বিদেশে যখন ভালো সময় যাচ্ছিল না, তখনই ইন্টারনেটে ব্লাকবেবি তরমুজের তথ্য পাই। খুব অল্প সময়ে স্বল্প খরচে বেশি লাভ করা যায় এ তরমুজে। তাই দেরি না করে দেশে ফিরে এসেই জমি লিজ নিয়ে আবাদ শুরু করি।

বিঘায় অন্তত ১৫০ মণ ফলন আসতে পারে। স্থানীয় বাজারে এখন ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার কারওয়ান বাজারের এক ব্যবসায়ী দেড় হাজার টাকা করে মণ হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় সেই ব্যবসায়ী সব তরমুজ কিনে নিয়েছে। তরমুজ সংগ্রহর সময় হলেই সেই ব্যবসায়ী তরমুজ তুলে নিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ব্লাকবেবি তাইওয়ান থেকে আনা ছোট আকারের একটি জাতের তরমুজ। গায়ের রঙ গাঢ় সবুজ, কিন্তু পাকলে ভেতরে টকটকে লাল হয়। তিন থেকে পাঁচ কেজি ওজনের তরমুজগুলো পাকলে সুমিষ্ট হয়। আর শীতকাল ছাড়া বছরের বাকি যেকোনো সময় এ তরমুজ চাষ করা যায়। সাধারণত দেশী তরমুজ বেলে দো-আঁশ জমিতে চাষ হলেও ব্লাকবেবি জাতের তরমুজ সব ধরনের জমিতে চাষ করা যায়। তবে এ তরমুজ মাচা পদ্ধতিতে চাষ করতে হয়। প্রতিটি তরমুজ মাচার সাথে নেট দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হবে যাতে তরমুজের ভারে ছিড়ে না পড়ে।

গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সাহাবুদ্দীন জানান, ব্লাকবেবি জাতের তরমুজ এ প্রথম গাংনী উপজেলায় চাষ হচ্ছে। স্বল্প মেয়াদী এ তরমুজ চাষের ব্যাপারে খুব আগ্রহী। ফলে আগামী বছর থেকে এ তরমুজ মেহেরপুরের অন্যান্য উপজেলায় চাষ হবে বলে আশা করা যায়। তিনি আরও জানান, উপজেলার অনেক যুবকই এখন এ জাতের তরমুজ চাষে নামছে।

জেলা কৃষি খামার বাড়ির বাড়ির উপ-পরিচালক ড. আখতারুজ্জামান জানান, নতুন এ জাতের তরমুজটির আদি নিবাস তাইওয়ান। এখন বাংলাদেশে চাষ হচ্ছে। এবারই প্রথম মেহেরপুরে চাষ শুরু হয়েছে। আগামী বছর থেকে এ তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হবে।

আরজেড/