যমুনার চরে ভেড়া পালনে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন

গাইবান্ধার দুর্যোগকবলিত যমুনা নদীর বালু চরে দুর্যোগ সহনীয় ভেড়া পালন করে সাবলম্বী হচ্ছে চরের নারীরা। উন্নত জাত, দুর্যোগ সহনীয় ও প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় ভেড়া পালনে ঝুকে পড়েছে চরের নারীরা। এতে সংসারের চাহিদা মিটিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছে তারা।

মোল্লার চরের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাইদুজ্জামান বলেন, গাইবান্ধার তিস্তা যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর বুকজুড়ে ১ শ ৬৫টি চর রয়েছে। গাইবান্ধার, ফুলছড়ি, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জসহ চার উপজেলার এসব চরে অন্তত ৩ লাখ মানুষ বাস  করে। বিশেষ করে তিস্তাসহ তিন নদীর দুর্গম চরাঞ্চল কাপাসিয়া, বেলকা, তারাপুর, হরিপুর। গাইবান্ধার মোল্লারচর, কামারজানি, এ্যাড়েন্ডাবাড়ি, উড়িয়া ও কঞ্চিপাড়া। সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া,কামালেরপাড়া ,সাঘাটা সদরসহ অন্তত ১৩ টি ইউনিয়ন দুর্গম চরাঞ্চল।

চরাঞ্চলের বাসিন্দা ও উপকার ভোগী শিল্পি বেগম বলেন, এসব এলাকার প্রায় ৩ লাখ মানুষ তাদের জীবন জীবিকা যাপনে চাষাবাদ ও গবাদী পশু সম্পদের ওপর নির্ভর করে। তারা সারা বছর কোন না কোন দুর্যোগ মোকাবিলা করে বুক উচু করে বাস করে। বিয়েসহ অন্যান্য বিপদ কাটে গরু ছাগল হাঁস মুরগি বিক্রি করে। তারপরেও তারা সুখি মানুষ। গবাদী পশু সম্পদ হিসাবে পালন করলেও এই চরগুলোতে কোন ভেড়া পালনের প্রচলন ছিল না।

তিনি বলেন, ‘আমি একটি ভেড়া পেয়েছি, তার অল্প কিছুদিনের মধ্যে আমি এখন পাঁচটি ভেড়ার মালিক হয়েছি। একেকটি ভেড়ার ওজনেও অনেক বেশি। দুর্যোগে বিক্রি করে সংসারে খরচ বহন করবো। ’

সাজেদা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ফ্রেন্ডশীপ নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের গবেষণার নতুন সফলতা হিসাবে উন্নত মানের ভেড়া দিয়েছেন। যেমন উচু, তেমন লম্বা। দেখতে বেশ সুন্দর। অল্প সময়ে অনেক বড় হওয়ায় তাদের আনন্দের সীমা নাই।

তিনি বলেন, ‘এই প্রজননের সফলতা হিসাবে ভেড়ার উন্নত জাত অন্তত ৩০ কেজি ওজন ও বছরে ৪ বার বাচ্চা দেয়া হয়।

ফ্রেন্ডশিপ কর্মকর্তা দিবাকর বিশ্বাশ বলেন, সারা বছর বন্যা, খড়া, নদী ভাঙনসহ বিভিন্ন দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে চরবাসীদের বাঁচতে  হয়। সে কারণে পশু সম্পদ রক্ষা করা তাদের কঠিন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাবিলপুর চরজুরে উন্নত জাতের ভেড়ার দেখা মেলে।

তিনি বলেন, ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ের গবেষণায় এই নতুন জাতের ভেড়া সারা ফেলেছে। দেশি প্রজন্মের সাথে উন্নত জাতের ভেড়ার বীজ ক্রস করে নতুন জাতের ভেড়া উৎপান করা হয়েছে। দুর্যোগ সহনশীলতা অর্জনে এই ভেড়া পালনে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

মোমেনা বেগম  জানান, এই জাতের ভেড়া পালনে খরচ কম, দুর্যোগ সহনীয়, রোগবালাই কম হয় এবং আকারে বড় হয়। কাবিলপুর চরের ২শ ৪০ জন নারী ২শ ৪০টি ভেড়া দিয়ে ভেড়া পালন শুরু করেন। প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় ইতোমধ্যে তারা একটি  থেকে ৮ থেকে  ১০টি করে ভেড়ার মালিক হয়েছেন। এই পরিবারগুলো এখন ভেড়া পালন করে নতুন আশার স্বপ্ন দেখছেন। সংসারের চাহিদা , ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েও নিজেরা স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাছুদার রহমান সরকার বলেন, এইটা ভেড়ার নতুন জাত। উন্নত মানের ভেড়ার সাথে ক্রস করে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয় এই ভেড়া উদ্ভাবন করেছেন। চরাঞ্চলের দুর্যোগ এলাকায় এই ভেড়া চাষ করে অনেকেই অল্প সময়ে স্বাবলম্বী হতে পারে।