বিশ্বের বর্তমান আলোচিত কয়কেটি ইস্যুর মধ্যে রোহিঙ্গা ইস্যু একটি। তবে মানবিক বিপর্যয়ে দিক থেকে বিবেচনা করলে সবার আগেই এই ইস্যুটি আসে। গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মায়ানমারর সরকার ও সেনাবাহিনী দমন-পীড়নের মুখে সেখান থেকে পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা। পালিয়ে ঢুকছে বাংলাদেশে। ভারতেও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে তারা।
ভারত সরকার জানিয়েছে তারা কোনো রোহিঙ্গাকে তাদের দেশে প্রবেশ করতে দেবে না। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সাউন্ড গ্রেনেড ও মরিচের গুড় ব্যবহার করছে।
আর কয়েক দিন আগে ভারত ঘোষণা দেয় তাদের দেশে আগে থেকে থাকা প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
তবে ভারতে থাকা রোহিঙ্গা জানিয়েছে তারা ভারতের মাটিতে মরে গেলেও মিয়ানমারে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে যাবেন না।
দেশটির রাজধানী দিল্লিতে থাকা কয়েকজন রোহিঙ্গা শরনার্থী সম্প্রতি ইকোনোমিকস টাইমসকে এমনটাই টাই জানিয়েছে।
দিল্লির একটি শরনার্থী শিবিরে থাকা নুর বেগম শুকরিয়া আদায় করেন যে তিনি সেখানে ৮০ বর্গফুটের একটি ঘর পেয়েছেন। তিনি সন্তান ও স্বামীসহ সেখানে থাকছেন তিনি। সন্তানের স্কুলেও যাচ্ছে।
তিনি জানান, মায়ানমার সরকার তাদের সঙ্গে যেটা করেছে সেটার পর তার মনে মিয়ানমারের জন্য আর কোনো অনুভুতি কাজ করে না।
নুর বেগম জানান, মায়ানমারের সেনারা চোখের সামনেই তার বাবাক গুলি করে হত্যা করেছে। এর পরই তারা মিয়ানমার ছাড়েন।
কিন্তু বাস্তবতা হল, নুর বেগমরা মায়ানমারের নাগরিক। আর ভারত তাদের আর আশ্রয় দিতে আগ্রহী না।
এই অবস্থায় নুর বেগমের মতো দিল্লির অনেক রোহিঙ্গা শরনার্থী মনে করেন, নিজ দেশে তাদের জন্য এখন অপেক্ষা করছে নিশ্চিত মৃত্যু। সেখানে ফিরে যাওয়ার চাইতে যমুনায় ডুবে মরা ভালো।
আব্দুল করিম নামের আরেক রোগিঙ্গা শরনার্থী বলেন, আমরা প্রাণটা হাতে নিয়ে পালিয়ে এসেছি। সেখানে এখন ফিরে যাওয়া মানে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে যাওয়া।
করিম বলেন, আমরা মরতে চাই না। ভারত সরকারকের কাছে আমাদের আবেদন, আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর চাইতে যমুনার জলে ডুবিয়ে মেরে ফেলুন।
উল্লেখ, ভারত ইতোমধ্যে সেখানে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিজ দেশে ফেরানোর ব্যাপারে কঠোর মনভোবের কথা জানিয়েছে। এছাড়া দেশটির শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে রোহিঙ্গাদের প্রতি ‘নিষ্ঠুর’ হওয়ার বিষয়টিও অনুমোদন দিয়েছে।
পশ্চিমবাংলার পূর্ব সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা বিএসএফ এর সহকারী মহাপরিদর্শক আর পি এস জাসওয়াল জানান, তার জওয়ানদের নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ফেরত ফাঠাতে সাউন্ড গ্রেনেড ও পিপার স্প্রে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ, গত ২৫ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা শরনার্থীদের স্রোত বাংলাদেশ ছাড়িয়ে ভারতেও গিয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিলেও ভারত এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এমন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার দেশ মায়ানমার সরকারের পাশে আছে।
আজকের বাজার: এলকে / এলকে ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭