যানবাহনে ওভার লোড ঠেকাতে কমিটি

শাহ্জাহান সাজু: এক্সেল লোড সংক্রান্ত সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতি ও বিধিমালা থাকলেও তা কেউ মানছে না। অতিলোভের কারণে ড্রাইভার ও শ্রমিকরা ওজনসীমার অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করছে। এতে ওভার লোডের কারণে সড়ক ও সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর তাই ওভার লোড ঠেকাতে এবার উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গঠন করেছে সরকার। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে আহবায়ক করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি মহাসড়কে অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণে স্বল্প সময়ে সুপারিশ মালা প্রণয়ণ করবে।

সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন উপদেষ্টা পরিষদের ৪১তম সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, এক্সেল লোড সংক্রান্ত সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতি ও বিধিমালা রয়েছে। কিন্তু এর প্রায়োগ নেই খুব একটা। ওভার লোডের কারণে সড়কের ও সেতুর ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সরকার অনেক অর্থ ব্যয় করে নবীনগর-চন্দ্রা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ইত্যাদি চার লেনের সড়ক মাত্র কিছুদিন আগে তৈরী করেছে। কিন্তু যানবাহনের ওভার লোডের কারণে নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যগুলোও ক্ষতির মুখে। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের সড়কে দ্বিতীয় কাঁচপুর, মেঘনা, মেঘনা গোমতি সেতু জাইকার অর্থায়নে নির্মাধীন রয়েছে। বর্তমানে ওই সড়কে যে সেতুগুলো রয়েছে, ওভার লোডের কারণে সেগুলো যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে দেশের “অর্থনীতির লাইফ-লাইন” হুমকির মুখে পড়বে। তাই ওই সেতুগুলোতে ওভার লোড যানবাহন না চালানোর জন্য মোটরযানের মালিক শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান সেতু মন্ত্রী। সভায় তিনি নীতিমালা অনুযায়ী যানবাহনে মালামাল পরিবহনের তাগিদ দেন।

সভায় জানানো হয়, বিআরটিএ’র প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী দুই এক্সেল গাড়ির মালামাল পরিবহন ক্ষমতা ১৫ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। তবে এই বিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মালামাল পরিবহন করতে হলে আইন সংশোধন করতে হবে।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী সভায় বলেন, বিআরটিএ যানবাহনে মালামাল পরিবহনের জন্য সর্বোচ্চ যে ওজন সীমা নির্ধারণ করেছে, তা আন্তর্জাতিক মান, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ওজনসীমার নিয়ম-নীতি অনুস্মরণ করে নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই এটি কোনক্রমেই পরিবর্তন করা যাবে না। এই ওজন সীমার বাইরে মালামাল পরিবহন করা হলে, যে কোন সড়কের স্থায়ীত্ব খুব কম সময়ের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

সভায় নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বলেন, উৎসমূলে মালামাল পরিবহনের ওজনসীমা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিশেষ করে বন্দর এবং এজেন্ট পর্যায়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, মালিকরা মাঠে থাকেন না। মাঠে থাকেন ড্রাইভার ও শ্রমিক। অতিলোভের কারণে তারা ওজনসীমার অতিরিক্ত মালামাল পরিবহন করেন। বিষয়টি মাঠ পর্যায়ে যারা দায়িত্বে রয়েছেন-যেমন পুলিশ প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরিবহন এজেন্ট পর্যায়ে কার্যকর মনিটরিং করা প্রয়োজন। সভায় এ বিষয়ে একমত পোষণ করা হয়।

জানা যায়, সরকার ২০১২ সালের ১১ জুন মোটরযানের এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র পরিচালনা সংক্রান্ত একটি নীতিমালা অনুমোদন হয়। যা ২০১২ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর রয়েছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী সড়ক বিভাগের অধিনস্থ সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন সকল এক্সেল লোড কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে।

আজকের বাজার : এসএস / এলকে ৭ ডিসেম্বর ২০১৭