যে দই খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ

ষাটের দশকে ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও বগুড়ার দই খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

সারা পৃথিবীর নানা জায়গার মানুষ দই খেতে পছন্দ করেন। আর বাঙালি সমাজে দইয়ের কদর যথেষ্টই। টক দইয়ের পাশাপাশি মিষ্টি দই খেতেও ভালোবাসেন বাংলার মানুষ। প্রধানত ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্বাঞ্চলে, অর্থাৎ ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশে মিষ্টি দই পাওয়া যায়। কোনো কোনো জায়গার দইয়ের মধ্যে রয়েছে আলাদা বিশেষত্ব।

নবদ্বীপের লাল দই পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বিখ্যাত মিষ্টি। বাংলাদেশে দই উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ফরিদপুর জেলার বাঘাট, মাগুরা জেলার খামারপাড়া এবং আরও কিছু জায়গা। বগুড়া জেলার মিষ্টি দইয়ের খ্যাতি বাংলাদেশ ছাড়িয়ে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে পৌঁছে গিয়েছে। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খান এখানকার দইয়ের প্রেমে পড়েছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মন জয় করতে তিনি বগুরার দই পাঠান। লোকে বলে, ষাটের দশকে ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথও এই জায়গার দই খেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন।

অবশ্য বগুড়ায় মিষ্টি দই ছাড়াও সাদা টক দইও তৈরি হয়ে থাকে। তবে খুব বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেনি তা। বগুড়ার মানুষ এখনও মিষ্টি দই বলতে অজ্ঞান। দই না খেলে ওই জেলায় ভ্রমণ সম্পূর্ণ হয় না। প্রবীণ লোকেরা বলে থাকেন, এখানকার দই শিল্পের ইতিহাস প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো। বগুড়া শহর থেকে মোটামুটি ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে আছে শেরপুর উপজেলা। সেখানে ঘোষ সম্প্রদায়ের মানুষেরা মিষ্টি তৈরি করতেন। তাদের বানানো দইয়ের স্বাদে মজতে থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১৯৩৮ সালে বগুড়ার নবাবের আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন বাংলার ব্রিটিশ গভর্নর স্যার জন অ্যান্ডারসন। কাচের পাত্রে বানানো দই খাওয়ানো হয় তাকে। সেটা খেয়ে তিনি এতটাই পছন্দ করে ফেলেন যে ইংল্যান্ডে বগুড়ার দই পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

তবে বগুড়া জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম সরায় দই তৈরি করে ছিলেন গৌর গোপাল ঘোষ। কেউ কেউ বলে থাকেন, তার পদবী ঘোষ নয়, পাল। দেশভাগের সময়ে তিনি ভারত থেকে বগুড়ার শেরপুরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। একটা মত প্রচলিত আছে যে, তিনি ছিলেন শেরপুরের গোয়ালা ঘোষদের আত্মীয়। তিনি বগুড়ার নবাব পরিবার এবং সাতানী পরিবারের কাছে দই সরবরাহ করতেন। বগুড়ার নবাব মোহম্মদ আলীর পরিবার তাকে ডেকে প্যালেসের আমবাগানে থাকার বন্দোবস্ত করে দেয়। গৌর গোপালের ফর্মুলাতে প্রস্তুত করা দইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিকে দিকে। পরবর্তীকালে অনেকেই সেই ফর্মুলা ব্যবহার করে দই বানাতে থাকেন।

শেরপুরের দই নিয়ে প্রবাদ আছে, “দই মিষ্টির ক্ষিরসা, রাজা বাদশা শেরশাহ, মসজিদ মন্দির মূর্চাঘুর, এসব মিলেই শেরপুর”। এখানকার মতো সুস্বাদু দই বাংলাদেশের আর কোথাও তৈরি হয় না। গোটা জেলা এবং বগুড়া শহরে যেমন এই দই পাওয়া যায়, তেমনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেও বগুড়ার দই মেলে। পৃথিবীর নানা দেশে রপ্তানি করা হয় শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী দই। খবর-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান