৫ কারণে ঊর্ধ্বমুখী বিশ্ব পুঁজিবাজার

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ বেশকিছু ইস্যুতে গত কয়েকদিন বিশ্ব পুঁজিবাজারে একটু শঙ্কা বিরাজ করছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তা সীমিত হয়ে আসছে। বিনিয়োগকারীরা এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপ থেকে ইতিবাচক সংকেত পাচ্ছেন। তার কারণে বাজারে আস্থা ফিরেছে। গত সোমবার লেনদেনের এক পর্যায়ে দেখা যায়, বৈশ্বিক পুঁজিবাজারগুলো নিয়ে গঠিত এমএসসিআই সূচক নতুন উচ্চতায় পৌঁছায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডো জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ এবং ব্রিটেনের এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচকও আরও একবার রেকর্ড করে। ইউরোপ এবং ব্রিটেনের বাজার আবারও বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হচ্ছে।

কিন্তু কেন এই ঊর্ধ্বগতি? বাজার কেন বাড়ছে? তা ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

রাজনৈতিক উদ্বেগ কমছে
নভেম্বরে নির্বাচনের পর মার্কিন অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ট্যাক্স কমানো ও ব্যয় কমানোর ঘোষণা দেন। এতে পুঁজিবাজারে কিছু আস্থার সৃষ্টি হয়। কিন্তু ট্রাম্পের প্রধান প্রধান সংস্কারে সফলতা না আসায় অন্যান্য পরিকল্পনা ও সংস্কারের ব্যাপারেও সন্দেহ তৈরি হয়। অধিকাংশ ব্যাপারে ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যও উদ্বেগের সৃষ্টি করে। সম্প্রতি বিনিয়োগকারীরা আবার বিশ্বাস করতে শুরু করেছে- ট্রাম্প তার অবস্থানের বাস্তবতা বোঝাতে শুরু করেছেন। এবং তার পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে প্রস্তুত। এদিকে ফ্রান্সের নির্বাচনের পর ইউরোপের পরিস্থিতি আরও স্থিতিশীল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই সপ্তাহে জার্মান নির্বাচনে অ্যাঞ্জেলা মার্কেল তার পদে বহাল থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এসব ইস্যু পুরো বিশ্ববাজারে এক ধরনের ইতিবাচক প্রণোদন যোগাচ্ছে; যার কারণে বাজার বাড়ছে।

সোমবার লেনদেনের একপর্যায়ে বিশ্বের স্টক মার্কেটগুলো সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছায়।

উত্তর কোরিয়া উত্তেজনা ‘শিথিল’
উত্তর কোরিয়ার সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার প্রতিক্রিয়ায় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির উত্তেজনা বৃদ্ধি নিয়ে গত কয়েকদিন বিশ্ব পুঁজিবাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। কিন্তু এ উত্তেজনা দ্রুত কমে যাচ্ছে বলে জানান এক বাজার বিশ্লেষক। মাইকেল হিউসন নামের ওই বিশ্লেষক বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। তবে বাজার তা তোয়াক্কা করছে না। এই উত্তেজনা শিগগির শিথিল হয়ে যাবে বলেও আশা তার। আর সে কারণে এটা বাজারে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার
মার্কিন সুদ হার নিয়ে বাজারে এক ধরনের প্রভাব বিস্তার করে। এ সপ্তাহে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। তবে এ দফায় সুদহার বাড়বে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরে ফেড সুদহার বাড়াতে পারে। এর আগে গত এক বছরে ৩ দফা সুদের হার বাড়ায় ফেড। এদিকে সম্প্রতি আঘাত হানা দুইটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতিও এখনো নিরূপণ করা হয়নি। যার কারণে এটা পুঁজিবাজারে আপাতত নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে হচ্ছে না।

ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ইউরোপের অর্থনীতি
পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পেছনে আরও একটি কারণ হচ্ছে ইউরোপের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ইউরোজোনের অর্থনৈতিক চিত্র এখন আগের থেকে স্বাভাবিক। আর্থিক সংকটে স্পেন, পর্তুগাল ও গ্রিসের অর্থনীতি যে পঙ্গু হয়েছিল, সে অবস্থা এখন নেই। শিগগির এ অঞ্চলের অর্থনীতি ঘুঁরে দাঁড়াবে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইউরোজোনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.১ শতাংশে। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ১.৯ শতাংশে।

চীনের অর্থনৈতিক অবস্থান অনড়
অর্থনীতিতে মন্থর গতি থাকা সত্ত্বে চীন বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে তার অবস্থান ধরে রেখেছে। এ অবস্থা বাজারকে ইতিবাচক প্রণোদন যোগাচ্ছে।

আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭