যোধপুর পার্ক উৎসবে ‘বাংলাদেশ দিবস’

পশ্চিমবঙ্গের যোধপুর পার্ক উৎসবে উদযাপিত হল ‘বাংলাদেশ দিবস’। দক্ষিণ কলকাতার তালতলা মাঠে এই উৎসবটি শুরু ৫ জানুয়ারি এবং চলবে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই উৎসবের মাহাত্ম বাড়াতে এবারই প্রথম এই উৎসবে বাংলাদেশ দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বাংলাদেশ থেকে এদিন প্রথমে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বাউল শিল্পী ভগীরত মালো, এরপর যথাক্রমে কিংবদন্তী ভাওয়াইয়া শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের নাতনি নাশিদ কামাল, আঁখি আলমগীর গান শোনান। এদিনের শেষ শিল্পী হিসাবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু।

শিল্পীরা ছাড়া বাংলাদেশ দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নগরায়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার তৌফিক হাসান, উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান প্রখ্যাত সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। উৎসব কমিটির তরফে মঞ্চে উপস্থিত বাংলাদেশি শিল্পীদের সম্মানিত করা হয়।

নাশিদ কামাল বলেন, এমন একটি দিন আমি অনেক বছর ধরে অপেক্ষা করছিলাম। কারণ শিল্পীরা হলেন গাঙচিল, তাদের কোনো দেশ থাকে না। ‘গাঙচিল সবসময় গাঙ ছাড়িয়া উজানে বসিয়া রাঙা বউয়ের কান্ড দেখে বসিয়া রসিয়া’। এর আগেও কলকাতায় এসেছি কিন্তু ভাবিনি গাঙচিলের মতো এখানে হাজির হয়ে গাঙচিলের মতো ছোট ছোট করে মাছের টুকরো মুখের মধ্যে নিয়ে যাবো।

আঁখি আলমগীর জানান, আমি অনেক বছর ধরে গান গাইছি। মঞ্চই আমার জীবন। আমি গানের ফেরিওযালা, অলি-গলি, দেশে-বিদেশে আমি গান গেয়ে বেড়াই কিন্তু এই কলকাতাতেই গাওয়া হয়নি। সেদিক দিয়ে আমার ক্ষেত্রে এটা নবজাগরণ।

তবে শুধুমাত্র সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজনই নয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক একটি বিশেষ স্টল ও প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে যোধপুর পার্ক উৎসবে। এদিন সন্ধ্যায় এই স্টলটির উদ্বোধন করেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, সাথে ছিলেন তৌফিক হাসান। পরে তারা দুইজনেই স্টলটি ঘুরে দেখেন।

এই উৎসব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ফিরহাদ বলেন, আমরা দুই বাংলার মানুষ, আমাদের হৃদয় এক। আমরা দুই দেশই বন্ধুত্বপূর্ণভাবে থাকি। তাই দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতির আদানপ্রদান যত বেশি হবে, বন্ধুত্ব ততই গাঢ় হবে। সেক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও এই ধরনের সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানটা অত্যন্ত জরুরি।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, বাংলাদেশ আমারও দেশ, আমার অর্ধেক ওখানেই পড়ে থাকে। এখনো দেশ বলতে ঢাকা বিক্রমপুরের কথাই মনে পড়ে। দেশ আলাদা হয়ে গেছে, রাজনৈতিক ভাগাভাগি হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমার মনটা ওখানেই পড়ে থাকে। যখনই বাংলাদেশে যাই তখনই মনে হয় যে বোধহয় বাড়ি ফিরে এলাম। এটা কিছুতেই ভুলতে পারি না আবার অস্বীকারও করতে পারি না।

তৌফিক হাসান তার বক্তব্যে বলেন, একটি দিনকে বাংলাদেশ দিবস হিসাবে উদযাপন করাটা একজন বাংলাদেশি হিসাবে আমাদের কাছে অত্যন্ত আনন্দ ও গর্বের বিষয়। সাংস্কৃতিক যোগাযোগের মাধ্যম দুই দেশকেই সহজ করে তোলে আর সেখানে ভাষা যদি এক হয় তবে সেই সম্পর্ক আরও মধুর হয়ে ওঠে। আমরা নদীর পানি, সুন্দরবন ভাগাভাগি করি, আমাদের দুই দেশের জাতীয় কবিও এক। এই সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের কোন তুলনা নেই।

৫ জানুয়ারি উৎসবের উদ্বোধনী দিনে এখানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। আগামী ১০ তারিখ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন স্বপ্নিল সজীব। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এই অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনাচ্ছেন জিৎ গাঙ্গুলী, কুনাল গাঞ্জাওয়ালা, নচিকেতা, ইন্দ্রনীল সেন, রাঘব চট্টোপাধ্যায়, মনোময় ভট্টাচার্য, রূপংকর, জুবিন গর্গ, জোজোসহ বিভিন্ন শিল্পীরা।

আজকের বাজার:এলকে/ ৯ জানুয়ারি ২০১৮