রংপুরের পীরগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষের আগ্রহ বাড়ছে

মাল্টা সাইট্রাস পরিবারভুক্ত একটি বিদেশী ফল। কমলা আর বাতাবি লেবুর সংকরায়ণে এ ফলের সৃষ্টি। এর আদি উৎপত্তিস্থল ভিয়েতনাম, দক্ষিণ চীন এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত। রোগীর পথ্য হিসেবে মাল্টা ভালো। যা খেতে সুস্বাদু। দারুণ গন্ধ এবং পুষ্টিতে ভরপুর। এ মাল্টা বাণিজ্যিক ভাবে চাষের আগ্রহ বেড়েছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায়। বর্তমানে ছোট-বড় মিলে এ উপজেলায় প্রায় ২শতাধিক মাল্টা চাষের বাগান রয়েছে।

কুমেদপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে মাল্টা চাষ করছে মালোশিয়া প্রাবাসী মিজানুর রহমান। ২০১৬ সালে দেড় একর জমিতে ৪০০টি মাল্টার গাছ দিয়ে বাগান করেন তিনি। ৫ বছরেই তিনি আজ সফল মাল্টাচাষি। বছরে ওই বাগান থেকে প্রায় ৮ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি হচ্ছে। তিনি মালোশিয়ায় থাকা অবস্থায় চ্যানেল আইয়ের হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের প্রতিবেদক শাইখ সিরাজের প্রতিবেদন দেখে মাল্টা চাষের ওপর আগ্রহী হন। প্রবাস থেকে দেশে ফিরে এসে মাল্টা চাষ শুরু করেন। বর্তমানে তার বাগানে ৪০০টি মাল্টা গাছসহ নানান ফলের গাছ রয়েছে। তবে এ মাল্টা খেতে অনেক সুস্বাধু ও মিষ্টি। বর্তমানে এ মাল্টা নিজ এলাকা ছাড়িয়ে দিনাজপুর, রংপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাতকরণ করা হচ্ছে।

বাগানে মাল্টার পাশাপাশি আরও আছে সৌদি আরবের খেজুর, কমলা ও লিচু। তবে মাল্টা চাষের উপর তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন। চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। কিন্তু ৩ বছর পর একটি গাছে পূর্ণাঙ্গভাবে ফল ধরা শুরু করে। তিন বছর পরে গাছপ্রতি মৌসুমে ৪০০ থেকে ৪৫০টি মাল্টা ধরে। তিনি এখন নিজেই চারা উৎপাদন করেন। প্রায় এক যুগ প্রবাসী জীবন কাটিয়ে ফিরে আসা মিজানুর গরুর খামার, মাছচাষ ও বিভিন্ন ফলের চাষ নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। মিজানুরের অনুপস্থিতিতে বাগানের নিয়মিত পরির্চচা করেন তার ছোট ভাই মাসুদ রানা।

মাল্টাচাষি ভেন্ডাবাড়ির ইউনিয়নের জোদবাজ গ্রামের সাইফুল ইসলাম, মিল্কি আশ্বিনের পাড়ার মিলন মিয়া বড়দরগাহ ইউনিয়নের ছোট মির্জাপুরের রয়েল মিয়া, হাজিপুরের আব্দুল্লাহ জানান, মাল্টাচাষ বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ায় মাল্টাচাষে মনোযোগ হয়েছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, প্রায় ৩০একর জমিতে ছোট বড় মিলে দুই শতাধিক বাগানে মাল্ট চাষ হচ্ছে। এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রর্দশনী প্লটে চারা ও সার বিনামুল্যে দিয়ে মাল্টা চাষে আগ্রহ তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও রাজস্ব খাতেও মাল্টাচাষিদের বিভিন্ন সহায়তা চলমান রয়েছে। সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ উর্দ্ধে দেড় একর জমির বাগান রয়েছে এ উপজেলায়। কৃষকদের মাঠ ফসল ধান, গম, ভুট্টা চাষের পাশাপাশি উচ্চ মূল্যের ফসল চাষে দিকনিদের্শনা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। মাঠ ফসলের চেয়ে কয়েকগুণ লাভবান হওয়ায় উচ্চ মূল্যের ফসলের প্রতি এ উপজেলার কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান