খেজুরের দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই

কদিন বাধেই শুরু হচ্ছে মুসলমানদের পবিত্র মাস, রমজান। আর রমজান যতো কাছে আসছে, বাজারে ততোই বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম। দর বৃদ্ধির তালিকায় শীর্ষে আছে আলু, ছোলা, চিনি, বেগুন, লেবুসহ রোজার সময় প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য। এ তালিকা থেকে বাদ পড়ছে না মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে কয়েক মাস আগে আমদানি করা খেজুরও।

মহানবী হযরত মুুহম্মদ (সাঃ) ইফতারির শুরুতে খেজুর খেতেন- বিভিন্ন হাদিসে এমন তথ্য রয়েছে। ফলে রমজান মাসে সারাদিন রোজা পালনের পর খেজুর দিয়ে ইফতারি শুরু করাকে সুন্নাতের অংশ হিসেবে পালন করেন মুসলমানরা।

এতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে রমজানের সময় খেজুরের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সাধারণত সারা বছর বাংলাদেশে খেজুর আমদানি হলেও রমজানের আগে এর পরিমাণ বাড়ানো হয়। বাড়তি চাহিদার কথা বিবেচনায় প্রতি বছর রমজান শুরুর কয়েক মাস আগেই প্রয়োজনীয় খেজুর আমদানি করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

তবু প্রতি বছরই রমজানের আগে খেজুরের দাম বাড়ানো হয়। পুরো রমজান মাসজুড়ে বাড়তি দামেই বিক্রি হয় এ ভোগ্যপণ্য। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। গত এক মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে খেজুরের দাম দেশের বাজারে দুই দফা বাড়ানো হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৬ মে সব ধরনের খেজুরের কেজিতে ১০ টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। এর আগে এপ্রিল মাসের শেষ দিকেও এ পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ানো হয়েছিল। প্রতি বছরের মতো এবারের রমজানেও খেজুরের দাম আরও বাড়ানো হবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতা এবং ভোক্তারা।

চট্টগ্রামের খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি কেজি প্রতি ১৩০-১৫০ টাকা; শুকনা খেজুর ১০০-১২০ টাকা; ভেজা খেজুর ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আরব আমিরাতের ১ কেজি প্যাকেটের নাগাল খেজুর ২১০ টাকা; ইরানের মরিয়ম খেজুর কেজি প্রতি ৭০০-৭৮০ টাকা; বরই খেজুর ১৪০ টাকা; বাবরী খেজুর ৩৫০-৩৮০ টাকা; তিউনিসিয়ার খেজুর (সুপার খেজুর) ৭৩০-৭৫০ টাকা; সৌদি আরবের কেস খেজুর ১৫০-২৫০ টাকা; আরব আমিরাতের বারাকা খেজুর ১৩৫-২২০ টাকা; ইরাকের খেজুর ৭০-৯০ টাকা; ছোট খেজুর (ডাবাস) ১৭০-১৮০ টাকা এবং ১০ কেজি কার্টনের রেজিস খেজুর ১৪০০-১৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এক মাসের মধ্যে দুই বার খেজুরের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কিছুটা বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে খেজুর। ফলে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কম খেজুর আমদানি করা হয়েছে। ফলে দাম কিছুটা বেড়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মেয়াদে ২৮ হাজার ৪৩৮ টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ২৭ হাজার ৫০৪ টন ভেজা খেজুর। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে গড়ে প্রতি মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৮৪৪ টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩৫ হাজার ৯৩০ মে টন খেজুর আমদানি হয়েছিল।

ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে দেশে খেজুরের চাহিদা ২৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু এবার প্রায় সাড়ে ২৮ হাজার টন খেজুর আমদানি হয়েছে। চলতি মাসে আরও খেজুর আমদানি হতে পারে।

অর্থাৎ বাজারে সংকট নেই। তবু যোগসাজশে বাড়ানো হচ্ছে রমজানে মুসলমানদের জনপ্রিয় এ খাবারের দাম।

খেজুর ব্যবসায়ীরা জানান, অর্থবছরের শুরুতে খেজুরের বুকিং দর ছিল প্রায় ৫০০ ডলার। এখন সেটা ৮০০ ডলারে দাঁড়িয়েছে। রমজানের আগে খেজুরের বুকিং দর কমার আশা করা হলেও তা কমেনি। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় কম খেজুর আমদানি করা হয়েছে।

রিয়াজ উদ্দিন বাজারের খুচরা ফল ব্যবসায়ী মো, আরাফাত রব্বানি বলেন, রমজানে ৪০ ধরনের খেজুর আমদানি হয়। এখন দুবাই থেকে আমদানি করা নাগাল খেজুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

বিক্রি ও দাম বাড়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রমজানের বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। রমজান শুরু হলে খেজুরের বিক্রি বাড়ে। তবে মাসের ব্যবধানে খেজুরের দাম সামান্য বেড়েছে। রমজানে দাম আরও বাড়তে পারে। আমরা তো দাম বাড়াই না। পাইকার থেকে কিনি; তাতে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া থাকে।

সূত্র:অর্থসূচক

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ২০ মে ২০১৭