মায়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযান বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত বৈঠকে তিনি এ দাবি জানান।
মায়ানমার সরকারের উদ্দেশে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ বলেছেন, রাখাইনে সেনাবাহিনীর অভিযান অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। সেখান থেকে প্রাণভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের, নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিতে হবে। এছাড়া আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা, মানবাধিকার কর্মী ও গণমাধ্যমকর্মীদের রাখাইনে প্রবেশ নিশ্চিত করার তাগিদ দেন তিনি।
জাতিসংঘ মহাসচিব তার বক্তব্যে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন এবং অবিলম্বে সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশের দাবি জানান।
জাতিসংঘের মহাসচিব বলেন, রাখাইনে সহিংসতা রোহিঙ্গাদের বিশ্বের বড় উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছে, যা মানবিকতা ও মানবাধিকারের জন্য দুঃস্বপ্ন। পালিয়ে আসা, যাদের বেশিরভাগ নারী, শিশু ও বয়স্ক, তাদের কাছ থেকে আমরা রক্ত হিম করা বক্তব্য পেয়েছি। তাদের বর্ণনায় নির্বিচারে গুলিবর্ষণ, বেসামরিকদের বিরুদ্ধে ভূমি মাইন ব্যবহার ও যৌন সহিংসতাসহ অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও মানবাধিকারের গুরুতর লংঘনের কথা বলে।
তিনি বলেন, দশকের পর দশক বৈষম্য ও নির্যাতনের শিকার হওয়ায় রোহিঙ্গাদের ভেতর থেকে চরমপন্থার উত্থান হতে পারে। পাশাপাশি পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদে, কোন বৈষম্যছাড়াই নিজ গ্রামে দ্রুত ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিতে মায়ানমার সরকারের প্রতি আহবানও জানান।
তিনি রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা মিয়ানমারের অন্য এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করে দেন।
২০০৫ সালের পর প্রথমবারের মতো পূর্বনির্ধারিত আলোচ্যসূচিতে এসেছে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ। ১৩ সেপ্টেম্বরের পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা পরিস্থিতি আলোচনা চলছে নিরাপত্তা পরিষদে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন বন্ধের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের কাছে মায়ানমারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আশা করছে বাংলাদেশ। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি নিক্কি হেলি রাখাইনের পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত মায়ানমারের কাছে অস্ত্র বিক্রি না করার আহবান জানিয়েছেন। তবে নিরাপত্তা পরিষদের এ বৈঠকে চীন ও রাশিয়া আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের অধিকাংশ সদস্যই মায়ানমারে জাতিগত নিধন ও গণহত্যা বিবরণ তুলে ধরেন। বৈঠকে মায়ানমারের একজন প্রতিনিধিও বক্তব্য দিয়েছেন।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের সাত সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইডেন, মিসর, কাজাখস্তান ও সেনেগাল ২৩ সেপ্টেম্বর ওই আলোচনার প্রস্তাব দেয়। এসব দেশ জাতিসংঘের মহাসচিবকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতির বিষয়ে পরিষদকে বিস্তারিত জানানোরও অনুরোধ জানায়। মহাসচিব গুতেরেস অধিবেশনের শুরুতে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তিনি গণমাধ্যমে প্রকাশিত রাখাইনে সহিংসতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ, গত ২৫ আগস্ট মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি পুলিশ ও সেনা চৌকিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান স্যালভেশন আর্মির হামলার অভিযোগে দমন অভিযান শুরু করে বার্মিজ সেনারা। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। মানবিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সরকার তাদের কক্সবাজারের কুতুপালং এর বালুখালীতে থাকার অনুমতি দিয়েছে। সেখানে তাদের জন্য ত্রাণ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকারসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা। চলমান সহিংসতার ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধন’ বলে অভিহিত করে আসছেন জাতিসংঘের মহাসচিব।
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭