রাত পোহালেই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচনকে ঘিরে রংপুরে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিয়ে, নিজেদের পছন্দের প্রার্থী নির্বাচিত করার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে মহানগরীর সবখানেই চলছে জোর আলোচনা। প্রার্থীরা চুলচেরা হিসেব-নিকেষ কষছেন জয়-পরাজয়ের। চায়ের আড্ডা, বাজার, বাসস্ট্যান্ড কোথায় নেই ভোটের আমেজ।
নগর পিতা নির্বাচনের জন্য সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট দিতে ভোটাররা যেমন প্রস্তুত তেমনি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণের লক্ষ্যে প্রস্তুত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ নির্বাচন কমিশন।
ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে পৌঁছানো হয়েছে ব্যালট বাক্সসহ আনুষাঙ্গিক সরঞ্জাম। মোতায়েন করা হয়েছে নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। চলছে নগরজুড়ে টহল। জোরদার করা হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষ করে অনুন্নত ও সংখ্যালঘু এলাকাগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সব ধরনের সতর্ক অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন।
নিয়মিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি কাজ শুরু করেছে নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের সমন্বয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও নিজস্ব কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে তিনটি ওয়ার্ডে একজন করে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, মোট ১৯৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০৮টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বুধবার ২০ ডিসেম্বর সকালে রংপুর পুলিশ লাইনস মাঠে ভোটের কাজে নিয়োজিত পুলিশ, বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), ব্যাটালিয়ন আনসার, ভিডিপি সদস্যদের ব্রিফিং করেন রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক ও রংপুরের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। নির্বাচনে কাউকে প্রভাব বিস্তার ও কেন্দ্র দখলসহ কোনও ধরনের অরাজকতা করতে দেয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আর যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াডসহ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে র্যাব। ভোটকেন্দ্রগুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সিটি করপোরেশন এলাকায় হেলিকপ্টার টহলও দেবে সংস্থাটি।
দুপুরে রংপুরের পায়রা চত্বরে ব্রিফিং করেন র্যাব-১৩ রংপুরের কমান্ডার আতিকুল্লাহ্ আতিক।
এসব ব্রিফিং থেকে জানানো হয়, এবার নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করবেন সাত হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। এরমধ্যে পুলিশ ও আনসার থাকবে সাড়ে পাঁচ হাজার, বাকিরা র্যাব ও বিজিবি সদস্য। ঢাকা থেকে নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব গোলাম ফারুকের নেতৃত্বে ২২ সদস্যের একটি টিম মাঠে থেকে সার্বিক মনিটরিং করবেন।
এ ছাড়া স্ট্রাইকিং ফোর্স সহ ২২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ২২ টি দল এবং ১১ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন।
মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকে নগরীর সব এলাকায় ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে। আজ রাত ১২টার পর থেকে সিটি এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে এবং কাল রংপুরের সব সরকারি বেসরকারি অফিস, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ২০৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত রংপুর সিটি করপোরেশনে ওয়ার্ড রয়েছে ৩৩টি। মোট ভোটার তিন লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ হচ্ছে এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৬ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৩৮ জন।
এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১২ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে লড়ছেন সাবেক মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু, বিএনপির কাওছার জামান বাবলা, জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, বাসদের আব্দুল কুদ্দুস, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের এ টি এম গোলাম মোস্তফা বাবু, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সেলিম আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়রপদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয়পার্টি থেকে বহিস্কৃত এইচ এম এরশাদের ছোট ভাইয়ের ছেলে হুসেইন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ।
আজকের বাজার: এলকে/ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭