রাবি শিক্ষার্থী নাহিদ পড়াশোনার পাশাপাশি মৌ-চাষেও সফল

ঠাকুরগাঁয়ের সন্তান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষার্থী নাহিদের মৌচাষে সাফল্যের খবর ছড়িয়ে পড়েছে। পড়াশোনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাহিদ এখন মৌচাষে ব্যস্ত। তার এ সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় অনেক যুবক মৌ-চাষ করছে ও তার কাছে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।

নাহিদ এখন মৌ-চাষ অনুসরণে নতুন-নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে শিক্ষিত যুবকরা কৃষি ভিত্তিক কাজে নিজেকে যুক্ত করছে। এতে করে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। বর্তমানে সে ওই এলাকায় মধু নাহিদ নামে পরিচিতি হয়েছে।

জানা যায়, জেলার সীমান্ত ঘেঁষা হরিপুর উপজেলার বকুড়াল গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল আহমেদ নাহিদ। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি মৌ-চাষের জন্য খামার করে নতুন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। এই খামারে নাহিদ এখন দেখছেন ব্যাপক সম্ভাবনা।

নাহিদের গড়ে তোলা মৌ খামারে এক বছরেই মধু উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ গুণ। তার উৎপাদিত মধু কিনতে প্রতিদিন বাড়িতে ক্রেতারা ভিড় করছেন। আবার কুরিয়ারের মাধ্যমে তার মধু কিনতে বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা যোগাযোগ করছেন। তার উৎপাদিত মধু প্রতি কেজি ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

এই সংবাদিকের সাথে আলাপকালে নাহিদ জানান, তার বাবা মারা যাওয়ার পর নিজ গ্রামে ২০২০ লকডাউনের পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হলে বাসায় এসে মৌমাছি পালন শুরু করেন। এর আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মৌ খামারের উপর বেশ কয়েকটি।

নাহিদের টিউশনি করে জমানো ৭ হাজার টাকায় কেনা দুটি মৌমাছির বাক্স দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও এখন তার রয়েছে ১০টিরও বেশি মৌ বাক্স। যা থেকে প্রতি মৌসুমে প্রতিটি বাক্স থেকে ৮-১০ হাজার টাকার মধু সংগ্রহ করেন তিনি। গ্রামের সরিষা ক্ষেত, লিচুর মুকুল ও কুমড়া ক্ষেত থেকে মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহ করেন নাহিদ।

মৌমাছি দিয়ে মধু সংগ্রহের প্রক্রিয়া সম্পর্কে নাহিদ বলেন, মৌ বাক্স ফসলের মাঠে রেখে দেই। দিনের বেলা মৌমাছিগুলো ফুল থেকে নেকটার (ফুলের রস) সংগ্রহ করে এবং প্রসেসিং এর মাধ্যমে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে মধুতে পরিণত করে। নেকটার সংগ্রহের সময় তাতে পানির পরিমাণ থাকে ৫০-৬০ ভাগ। পরবর্তীতে সেটা সম্পূর্ণ হাতের স্পর্শ ছাড়া মধু সংগ্রহের মেশিন দিয়ে সংগ্রহ করতে হয়। মেশিনে সংগ্রহের ফলে মৌচাক কিংবা বাচ্চা কিছুই নষ্ট হয় না।

তিনি আরো বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি মৌ-চাষের খামার শুরু করেছি। শুরুটা শখের বশে হলেও আশা করছি আমি নিজেকে স্বাবলম্বী করতে পারবো। এখন আমার লেখাপড়ার খরচের পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিকভাবে সহায়তা করতে পারছি। ভবিষ্যতে আমি নিজেকে একজন উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, যার শুরুটা মূলত এখান থেকেই করেছি। আমি প্রত্যাশা করি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমার স্বপ্ন দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

মধু ক্রেতা ডা. ফরিদুল ইসলাম বলেন, বাজারে খুব একটা খাঁটি মধু মেলে না। নাহিদের কাছে খুব সহজেই খাঁটি মধু পাই। আমি নিয়মিত তার খামার থেকে মধু কিনছি।

স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম ও আমজাদ আলী বলেন, নাহিদের মৌ খামারটি বেশ আলোচিত উপজেলায়। লেখাপড়ার পাশাপাশি তার এই মৌ খামার তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ছেলেটি অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। তার দেখাদেখি আরো দুই ছাত্র মৌ খামারের প্রশিক্ষণ নিয়ে এ চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। তাছাড়া এ নিয়ে শিখতে ও জানতে প্রতিদিনই ওই গ্রামসহ আশেপাশের অনেক ছাত্র ও উদ্যোক্তা এ বিষয়ে তার কাছে পরামর্শ নিচ্ছে। এটা সুন্দর ও ইতিবাচক পরিবর্তনের লক্ষণ।

এই বিষয়ে হরিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নইমুল হুদার সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, মৌ খামার একটি দারুণ উদ্যোগ। এটা সমসাময়িক ও লাভজনকও বটে। এতে পরাগায়ণ ঘটে এবং ফসলের ফলন ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ভালো ফলনের জন্য আমরা কৃষককে ফসলের মাঠে দুটি করে মৌ বাক্স রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নাহিদের এই মৌচাষে সহযোগিতা ও সব ধরণের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু হাসান জানান, কৃষিতে মৌচাষের গুরুত্ব অনেক। বিশেষত শিক্ষিত বেকার যুবকরা কৃষিতে আসলে কৃষির আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে পুরোনো ও মান্দাতার আমলের কৃষির পরিবর্তন করে ইতিবাচক নতুন সুচনা হবে। আর জেলা কৃসি বিভাগের নির্দেশনা মতে, উপজেলা কৃষিবিভাগ নাহিদকে এ কাজে সফল হতে সর্বাতন সহযোগিতা করবে বলেও জানান এই কৃষিবিদ।

এ ব্যাপারে ডোমার সরকারি কলেজের সহকারি অধ্যাপক অর্থনীতিবিদ রেজাউল হক সুমন জানান, নাহিদ একটি সুন্দর সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। যাকে স্বাধুবাদ জানাই। নাহিদের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে কৃষি ভিত্তিক উদ্যোক্তা হলে তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে কাজ করবে। কারণ আমাদের দেশের শিক্ষিত বেকার যুবকরা কখনই উদ্যোক্তা হতে চায় না।

তারা চাকরি খোঁজে নিজের সময় নষ্ট করে পরিবার সমাজ ও দেশের বোঝা হন। আর নাহিদের দেখে উৎসাহিত হয়ে স্থানীয় বেকার শিক্ষিত যুবকদের এই মৌচাষে উৎসাহিত হয়ে কাজ করা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে শিক্ষিত বেকার যুবকদের স্বাবলম্বীতা অর্জনের সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা এ অর্থনীতিবিদের। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান