দুই অনুসারীকে ধর্ষণের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের সঙ্গে পালিত কন্যা হানিপ্রীত নগ্ন অবস্থায় দেখেছেন বলে দাবি করেছেন করেছেন হানিপ্রীতের সাবেক স্বামী বিশ্বাস গুপ্ত।
গতকাল এমনই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেছেন হানিপ্রীতের সাবেক স্বামী বিশ্বাস গুপ্ত। তিনি দাবি করেন, পালিত কন্যা হলেও হানিপ্রীতের সঙ্গে রাম রহিমের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সংবাদ সম্মেলনে কথা বলতে গিয়ে বারবার কেঁদে ফেলেন হানিপ্রীতের সাবেক এই স্বামী। রাম রহিম ও হানিপ্রীত তাঁর জীবন ধ্বংস করে দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
বিশ্বাস গুপ্ত বলেন, ‘খুব পরিকল্পিতভাবে রাম রহিম আমার সঙ্গে হানিপ্রীতের বিয়ে দেন। মূলত ডেরায় হানিপ্রীতের অবস্থান বৈধ করার জন্যই বিয়েটা দেওয়া হয়। আমরা কখনো স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবন কাটাইনি। হানিপ্রীত সব সময়ই রাম রহিমের অনুরক্ত ছিল।’
বিশ্বাস গুপ্ত বলেন, ‘যখন আমি তাঁদের অবৈধ সম্পর্কের কথা জানতে পারি, তখনই হাইকোর্টে গিয়েছিলাম। গণমাধ্যমের সামনে হাজির হয়েছিলাম। সেটি ২০১১ সালের কথা। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে কিছু মিথ্যা মামলা করা হয়।’
এখন আদালতে বিশ্বাসের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা বিচারাধীন। এসবের মধ্যে যৌতুক চেয়ে হয়রানি করার মামলাও রয়েছে। তিনি বলেন, লোক দিয়ে তাঁকে খুন করারও চেষ্টা করেছিলেন রাম রহিম। তাঁর সম্পত্তি ও অর্থও কেড়ে নিয়েছেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্বাস গুপ্ত বলেন, ‘হানিপ্রীত রাম রহিমের কোনোভাবেই পালিত কন্যা হতে পারে না। কারণ তাঁকে বৈধভাবে দত্তক নেওয়া হয়নি। এটি স্রেফ মিথ্যা কথা।’
রাম রহিম হরিয়ানার সিরসায় নিজের ডেরায় জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এর আদলে প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন বলে জানিয়েছেন বিশ্বাস। এতে ছয় দম্পতি অংশ নিতেন এবং রাম রহিমের গুহায় (গুফা) কাটাতে হতো টানা ২৮ দিন।
বিশ্বাসের দাবি, ‘রাম রহিম সব সময় নিজের কাছে অস্ত্র রাখতেন। কারাগারে থাকলেও তিনি খুব ক্ষমতাবান। তাই এই সংবাদ সম্মেলন থেকে বের হওয়ার পর, আমি সত্যিই জানি না, আমাকে আর আপনারা দেখতে পাবেন কি না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, কারাগারে যাওয়ার সময় হানিপ্রীতের সঙ্গে জেলে রাত্রিবাস করার আবেদন করেছিলেন রাম রহিম। সেই আবেদন খারিজ করে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া কারাগারে যাঁদের সঙ্গে রাম রহিম নিয়মিত দেখা করতে চান, এমন ১০ জনের একটি তালিকা সানোরিয়া কারা কর্তৃপক্ষের হাতে দিয়েছেন রাম রহিম। ওই তালিকায় স্ত্রী হরজিৎ কৌরের নাম না থাকলেও হানিপ্রীতের নাম রয়েছে।
এর আগে ডেরায় থাকা কমপক্ষে দুই হাজার নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছিলেন এক সাধ্বী। রাম রহিম কারাগারে যাওয়ার পর থেকে হরিয়ানায় সিরসার ডেরায় নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। সেখানে অভিযানের শুরুর দিকে বিপুল পরিমাণ কনডম ও জন্মনিরোধক ওষুধ জব্দ করা হয়। ডেরার ভেতর সাধ্বী হোস্টেলে রাম রহিমের সরাসরি যাতায়াত ছিল। ওই যাতায়াতের জন্যই দুটি গোপন সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল। ডেরার ‘গুফা’ থেকে সাধ্বী হোস্টেল পর্যন্ত একটি গোপন সুড়ঙ্গের সন্ধান পাওয়া যায়। এ ছাড়া তাঁর ডেরায় পানির নিচে গোপন ‘সেক্স কেভ’ বা ‘যৌন গুহার’ সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ডেরার প্রাসাদ চত্বরে যে সুইমিং পুল রয়েছে, তার নিচেই ওই ‘যৌন গুহা’ গড়ে তুলেছিলেন ডেরাপ্রধান রাম রহিম। গোপন গুহায় নারীদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ করতেন তিনি। রাম রহিমের ডেরায় শত শত আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ ও ভিডিও চিত্র সাংবাদিকের বিশাল একটি দল অভিযান চালিয়ে এই গুহার সন্ধান পায়।
আজকের বাজার: আরআর/ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭