রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে উৎপাদনে ধস

খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের উৎপাদনে ধস নেমেছে। আর্থিক সংকটে প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া এবং উৎপাদিত পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় পাটকলগুলোতে দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট। সে কারণে প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে না পারায় টার্গেটের বিপরীতে উৎপাদন কমে গেছে।

বিজেএমসি সূত্রে জানা গেছে, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলীম, ইস্টার্ন এবং যশোরের জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলে শ্রমিক রয়েছেন ১২ হাজার ৪৯৮ জন। এই পাটকলগুলোতে তাঁত রয়েছে ৩ হাজার ৬৫০টি। এর মধ্যে এখন এক হাজার ৮৬৯টি তাঁত চালিয়ে পাটজাত পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, ৯টি পাটকলে প্রতিদিন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ মেট্রিক টন। কিন্তু গত শনিবার উৎপাদন হয়েছে মাত্র ৬৫ মেট্রিক টন। যা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২৪ শতাংশ।

খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোতে মোট চার ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। সেগুলো হচ্ছে- হেসিয়ান, স্যাকিং, সিবিসি ও ইয়ার্ন। বর্তমানে পাটকলগুলোতে ৩৭ হাজার ৫৫২ মেট্রিক টন পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় পড়ে রয়েছে। যার মূল্য প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে বিজেএমসি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের মতে, উৎপাদিত পাটজাত পণ্য সময়মতো বিক্রি করতে না পারায় সবগুলো মিলেই আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে।

চলতি অর্থ বছরে ৯টি পাটকলে কাঁচা পাট কেনার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৬ কুইন্টাল। এ পর্যন্ত কেনা হয়েছে মাত্র ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৬৮ কুইন্টাল। অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে কাঁচা পাট কেনা হয়েছে চাহিদার মাত্র ১৮ শতাংশ। বর্তমানে পাটকলগুলোর জন্য কেনা আছে ৪৫ হাজার ৯০২ মেট্রিক টন কাঁচা পাট। তবে সব পাট পাটকলগুলোর গোডাউনে নেই। কিছু পাট গোডাউনে আছে, আবার কিছু পাট রয়েছে মোকামে। এই পাট দিয়ে মিলগুলোর উৎপাদন চালু থাকবে মাত্র ১৬ দিন।

এ ব্যাপারে ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরান, সিরিয়া ও সুদানে পণ্য রফতানি তেমন হচ্ছে না। ৯০ কোটি টাকার পণ্য সময়মতো তারা বিক্রি করতে পারছেন না। এর ফলে মিলে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। সে কারণে সময়মতো প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কেনা যাচ্ছে না। কাঁচা পাট সংকট ও বিক্রি কমে যাওয়ার কারণেই মূলতঃ পাটকলে উৎপাদন কমে গেছে। তবে শ্রমিক-কর্মচারীদের কোনো মজুরি বকেয়া নেই বলে জানান তিনি।

ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কাঁচা পাট কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না দেয়ায় উৎপাদন কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান এসএম মঈনুল করিম বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের ক্রেতা বাড়েনি, বরং কমেছে। সে কারণে পণ্য বিক্রিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কেনা সম্ভব হচ্ছে না।

ইস্টার্ন জুট মিলের প্রকল্প প্রধান জুলফিকার রহমান বলেন, সবগুলো পাটকলেই উৎপাদন অনেক কমে গেছে। বিষয়টি বিজেএমসিকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিজেএমসির খুলনা জোনের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা শেখ রহমত উল্লাহ বলেন, পাটজাত পণ্য যাতে দ্রুত বিক্রি করা যায় এ জন্য বিজেএমসি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ