রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবির দাফন সম্পন্ন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে জানাযা শেষে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জিরাগাঁও গ্রামে নিজ বাড়ির আঙিনায় তাকে দাফন করা হয়।

মুক্তিয়ুদ্ধের উত্তাল দিনগুলোতে ২০টির মতো সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল কাঁকন বিবির। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় এবং সনদে তার নামের সঙ্গে বীরপ্রতীক লেখা হলেও খেতাবের বিষয়টি গেজেটভুক্ত হয়নি।

বুধবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে একাত্তরের এই বীর সেনানী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টের জন্য গত সোমবার রাতে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছিল।

কাঁকন বিবির মরদেহ বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রামের বাড়ি পৌঁছালে একমাত্র মেয়ে সখিনা বেগমসহ স্বজন, রণাঙ্গণের সতীর্থ ও গ্রামবাসী কান্নায় ভেঙে পড়েন।

মরদেহে শ্রদ্মা জানান জেলা প্রশাসক মো. সাবিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ্ খান, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীরপ্রতীক, দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহুয়া মমতাজ, সহকারী পুলিশ সুপার দোলন মিয়া, মুক্তিযুদ্ধ চর্চা ও গবেষণা কেন্দ্র সুনামগঞ্জের আহ্বায়ক বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নুরুল মোমেন, দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ছালেহা বেগম প্রমুখ।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে কাঁকন বিবি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সীমান্তবর্তী ভোগলা বাজারে থাকতেন। ১৯৭১ সালে ৩ মাস বয়সী মেয়ে সখিনাকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যান কাঁকন বিবি।

বুধবার রাতে সখিনা কান্নাজড়িত কণ্ঠে সমকালকে বলেন, সব শেষ হয়ে গেছে। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করলেও পরবর্তী সময়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন কাঁকন বিবি। পাকিস্তান বাহিনীর হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন এই যোদ্ধা।

১৯৯৬ সালে সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করার ঘোষণা দেয়; কিন্তু জীবদ্দশায় তিনি এই খেতাবটি পাননি। এটাই ছিল তার জীবনের শেষ আক্ষেপ। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ঝিরাগাঁও গ্রামের অধিবাসী কাকন বিবি খাসিয়া আদিবাসী নারী হলেও পরে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।

নূরজাহান ওরফে কাঁকন বিবি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করায় তার স্বামী তাকে তালাক দিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন। মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন এই বীরাঙ্গনা। ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। ১৯৯৭ সালে সরকারসহ স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে বিভিন্ন সংগঠন তার সহায়তায় এগিয়ে আসে।

সতীর্থরা বললেন, ‘জীবদ্দশায় শুনে যেতে না পারলেও আমরা চাই নতুন প্রজন্ম কাঁকন বিবিকে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসাবেই জানুক।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মনফর আলী বলেন,‘ভারতীয় খাসিয়া নারী কাঁকন বিবির বিয়ে হয়েছিল তখনকার এক সীমান্তরক্ষীর সঙ্গে। যুদ্ধের সময় ওই সীমান্তরক্ষী এলাকা ছেড়ে চলে গেলে কাঁকন বিবি স্বামীর দেওয়া চিঠি নিয়ে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে ক্যাম্পে যেতেন স্বামীকে খোঁজার উসিলা করে। ওখান থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করে আমাদের এনে দিতেন। তার সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা অনেক অপারেশন করেছেন। তিনি অনেক যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন।তাঁকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করার দাবি আমাদের।’

দোয়ারাবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদ্য বিলুপ্ত কমান্ডার মো. সফর আলী প্রয়াত কাঁকন বিবিকে গেজেটভুক্তির মাধ্যমে বীরপ্রতীক উপাধীতে ভূষিত করার দাবি জানিয়ে বলেন,‘ কাঁকন বিবির সনদে বীরপ্রতীক লেখা রয়েছে, কিন্তু গেজেট নোটিফিকেশনে সেটি উল্লেখ নেই। জীবদ্দশায় এই নিয়ে আপসোস ছিল কাঁকন বিবির।’

আরএম/