রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছে ট্রান্সান মোবাইল

‘বলতে গেলে বর্তমান বিশ্বের সব দেশই মোবাইল ফোন সরবরাহে বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী। এর কারণ হচ্ছে বাংলাদেশে এখনো স্মার্টফোনের একটি বিশাল বাজার পড়ে রয়েছে। এবং এই বাজার খুবই সম্ভাবনাময়। আর ফোনের দিক থেকে আমরা বর্তমানে সেকেন্ড জেনারেশনে চলে এসেছি। আগে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য একটা ফোন ব্যবহার করা হতো। এখন কিন্তু সে অবস্থায় সীমাবদ্ধ নেই। এখন নতুন ইউজারের চেয়ে পুরোনো ইউজারের সংখ্যা বেশি। যে একটি স্মার্ট ফোন কিনেছে এটা তার সেকেন্ড বা থার্ড ফোন। আর ফোন সম্পর্কে অনেক কিছু এরইমধ্যে জেনে গেছে সে। কোন প্রোডাক্টটা ভালো সার্ভিস দিবে। কোনটিতে বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে’— কথাগুলো বলেছেন ট্রান্সান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজোয়ানুল হক। এ দেশের মোবাইল ফেনের বাজার, ব্যবহারকারীর সংখ্যা, বাজাারের প্রবৃদ্ধি, সেট ব্যবহারের প্রবণতাসহ নানা বিষয়ে আজকের বাজার ও আজকের বাজার টেলিভিশন, এবি টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তাঁর কথপোকথনের চুম্বক অংশ তাঁরই ভাষায় প্রকাশ করা হলো।

মোবাইল ফোন ব্যবসার বর্তমান অবস্থা:বর্তমানে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় তিন কোটি মোবাইল ফোন বিক্রি হয়। যদিও এই তিন কোটি বিক্রি হওয়ার পরও আমি মনে করি পর্যাপ্ত নয়। কারণ জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান নবম এবং মোবাইল ফোন ব্যবহারের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দশম। অর্থাৎ মোবাইল ফোন ব্যবহারে এখনো আমরা এক ধাপ পিছিয়ে আছি।

আরেকটা বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশে এই মুহূর্তে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা নয় কোটি। আর এই ৯ কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে দেখা গেছে আগে যেখানে একজন গ্রাহক একটি মোবাইল ৪/৫ বছর ব্যবহার করতো এখন সেটি ২/৩ বছরে চলে এসেছে। তিন বছরের ব্যবধানে যদি রিপ্লেস ধরা হয় তাহলেও কিন্তু তিন কোটির সমান হয়ে যায়। সেখানে নতুন করে জনসখ্যা যোগ হচ্ছে। কিন্তু মোবাইল ফোন ব্যবহার বাড়ছে না। খুব শিগগিরই দেখা যাবে মোবাইল ফোন ইউজাররা একই ডিভাইস দুই বছরের বেশি ব্যবহার করবে না। এতেও একটা সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবছর যদি ৫০% হারে ধরেন, তাহলে দেখা যাবে সাড়ে ৪ কোটি সেট প্রতিবছর বিক্রি হবে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে স্মার্টফোনের গ্রোথ। গত ৩/৪ বছর ধরে বাংলাদেশের বাজারে স্মার্টফোনের বাজার বেশ এগিয়েছে। যদিও ইউজারের সংখ্যা এখনো কম। বাংলাদেশে মাত্র ২ কোটি বা তার কিছু বেশি স্মার্ট ফোন গ্রাহক রয়েছে। ১৬ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ২ কোটি মানুষ স্মার্টফোন ইউজ করছে। অর্থাৎ ৮০% লোক স্মার্টফোন ইউজ করছে না। তবে আশা করি ৪-৫ বছরের মধ্যে আরো বহু মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করতে শুরু করবে। সেদিক থেকে বলতে গেলে বর্তমান বিশ্বের সব দেশই মোবাইল ফোন সরবরাহে বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহী। এর কারণ হচ্ছে এখনো বাংলাদেশে স্মার্টফোনের একটি বিশাল মার্কেট পড়ে রয়েছে। এবং এই বাজার খুবই সম্ভাবনাময়। আর ফোনের দিক থেকে আমরা বর্তমানে সেকেন্ড জেনারেশনে চলে এসেছি। আগে শুধুমাত্র কথা বলার জন্য একটা ফোন ব্যবহার করা হতো। এখন কিন্তু সে অবস্থায় সীমাবদ্ধ নেই। এখন কিন্তু নতুন ইউজারের চেয়ে পুরাতন ইউজারের সংখ্যা বেশি। যে একটি স্মার্ট ফোন কিনেছে এটা তার সেকেন্ড বা থার্ড ফোন। আর সে ফোন সম্পর্কে অনেক কিছু ইতোমধ্যে জেনে গেছে। কোন প্রোডাক্টটা ভালো সার্ভিস দিবে। কোনটিতে বেশি সুবিধে পাওয়া যাবে। কোনটি ব্যবহার করে বেশি আরাম পাওয়া যাবে। যেহেতু সে আগেও ইউজ করেছে। ফলে তার স্কিল লেভেলটা অনেক হাই। আগে যেমন একজন কাস্টমার বাজারে গিয়ে একটা ফোন কিনে ফেলত এখন সে কেনার আগে নেটে সার্চ দিয়ে হোক বা অন্যদের থেকে শুনে হোক ভালোভাবে জেনে নেয় কোন ব্রান্ড ভালো। কোন ব্রান্ডের ফোন বেশি টেকসই ইত্যাদি। এসব দিক বিবেচনা করলে দেখা যাবে- যারা হাই কোয়ালিটির প্রোডাক্ট দিতে পারবে। ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে কোয়ালিটি মেইনটেইন করে প্রোডাক্ট ছাড়তে পারবে তাড়াই টিকতে পারবে।

মোবাইল ফোন ব্যবসার সম্ভাবনা
বাংলাদেশের মোবাইল মার্কেটের প্রতি পুরো বিশ্বেরই আলাদা আগ্রহ রয়েছে। ট্রান্সান হোল্ডিং নামে একটি অর্গানাইজেশন আছে। এটি মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মধ্যে বিশ্বের অন্যতম। যদিও তারা চায়না ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। কিন্তু চায়নাতে তারা সেভাবে বাজারজাত করছে না। চায়না ছাড়া বিশ্বের ৫৮ টি দেশে তারা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ট্রাংসাঙ হোল্ডিংয়ের তিনটি মোবাইল ব্র্যান্ড আছে। আইটেক, টেকনো, ইনভিনিস্ট। চিন্তা করার মতো বিষয় হচ্ছে- মোবাইলের গ্রাহক ৭০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ হাজার ৭০ হাজার টাকার গ্রাহক রয়েছে। সেখানে যদি একটি ব্র্যান্ড দিয়ে ফোকাস করার চিন্তা করা হয় সেটা ভুল হবে।

আপনাদের নতুন সেট নিয়ে আপনারা কতটা আশাবাদী
আমরা ট্রান্সান হোল্ডিংয়ের ব্র্যান্ডটি নিয়ে বাজার ধরার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে আমি খুবই আশাবাদী। ট্রাংসাঙ হোল্ডিং বিভিন্ন ধরনের ফোন দিয়ে বিভিন্ন ধরনের গ্রাহক ধরার চেষ্টা করছে। যেমন আমাদের আইটেক ব্র্যান্ডটি একটি ইকোনোমিক ব্র্যান্ড। এটির মাধ্যমে লোয়ার মার্কেটটিকে হ্যান্ডেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। টেকনো, ফোনটি এর চেয়ে একটু ভালোমানের। বা প্রিমিয়ার লেভেলের বলা যায়। এটি দিয়ে মিডিয়াম বা হাই লেভেলের কাস্টমার ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই আমাদের সুবিধা হচ্ছে আমরা বিভিন্ন ধরনের কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী প্রোডাক্ট সাপ্লাই দিতে পারবো। সব মিলিয়ে আমাদের কাছে মনে হয়েছে ট্রান্সান হোল্ডিং বাংলাদেশের বাজারে তাদের কিছু বিশেষত্ব নিয়ে আসবে। এবং কাস্টমাররাও আগ্রহী হবে এই ব্র্যান্ডের মোবাইল চালাতে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কোয়ালিটির বিষয়ে আমরা কোনো ছাড় দেব না। আমাদের উদ্দেশ্য বাজারে শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করা নয়। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একজন গ্রাহক একবার আমাদের ফোন ব্যবহার করলে তার পরবর্তী ফোনটিও যেন আমাদেরটাই হয়। কাস্টমারদের জন্য আমরা তো ১২ মাসের ওয়ারেন্টি দিচ্ছিই। এছাড়াও প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ডিভাইসে কোনো প্রবলেম হলে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি। অর্থাৎ আমরা কাস্টমারদের একটা এডিশনাল কনফিডেন্স দিচ্ছি। সব মিলিয়ে আমরা কনফিডেন্ট যে ইউজারের সন্তুষ্টির জায়গাটায় আমরা বেশ ভালো করতে পারবো।

টেকনো মোবাইল কেন আলাদা
আমাদের একটা বিষয় হচ্ছে- থিংক গ্লোবালি বাট অ্যাক্ট লোকালি। অর্থাৎ আমাদের চিন্তা চেতনা গ্লোবালি কিন্তু লোকাল কাস্টমারদের আলাদা মূল্যায়ণ।
আমরা একটু ভিন্নতা আনতে পেরেছি। যেমন আপনি যদি চিন্তা করেন বাংলাদেশের মানুষ হাত দিয়ে ভাত খাচ্ছে হাত দিয়ে নানা ধরনের কাজ করছে। সেখানে আমরা এন্টি ওয়েল টাচ ফ্রি করেছি। বর্তমানে স্মার্ট ফোনের জন্য ফিংগার প্রিন্ট টাচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফিংগার প্রিন্ট টাচ দিয়ে সিকিউরিটি লক করা, আনলক করাসহ নানা ধরনের অপারেটিং ওয়ার্ক হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় ফিংগারে তৈলাক্ত কিছু থাকলে টাচ নিতে চায় না। আমরা সেখানে অ্যান্টি ওয়েল টাচ ফ্রি করেছি। অর্থাৎ হাতে তৈলাক্ত পদার্থ থাকলেও টাচ ইজিলি কাজ করবে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে আমাদের দেশের স্ক্রিন টোন কিন্তু ওয়ার্ড ওয়াইড স্ক্রিন টোন থেকে আলাদা। আমাদের যে গায়ের রঙ বা আমাদের যে নান্দনিক যৌন্দর্য্য; এগুলো আলাদা। এখন যারাই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করুক তারা ক্যামেরার দিকে অনেক গুরুত্ব দেয়। এবং ক্যামেরাটা শুধু ছবি তোলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। ছবিটা কতটুকু ভালো তুললো এবং রেজ্যুলেশন, ব্রাইটনেস সব দিকে খেয়াল করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন রকমের ফেইস বিউটি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। এটি ছবির সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দেয়। আমাদের ফেস বিউটি সফটওয়্যারটা তৈরি করা হয়েছে শুধুমাত্র এশিয়া মহাদেশের এবং স্পেশালি বাংলাদেশের মানুষের ফেইস লুক অনুসরণ করে। প্রায় ২০ হাজার মানুষের ওপর এনালাইসিস করে একটি স্পেশাল ফেইস বিউটি সফটয়্যার তৈরি করা হয়েছে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে রাতের বেলা যে ছবিগুলো তোলা হয়; বাংলাদেশে আলোর অনেক স্বল্পতা রয়েছে। এগুলো চিন্তা করে একটা স্পেশাল সফটওয়্যার ইউজ করা হয়েছে। যেটার কারণে বলা হচ্ছে নাইট সেলফি ক্যামেরা। যেটা দিয়ে রাতে ছবি তুললে দেখা যাবে অন্যান্য ক্যামেরা থেকে অনেক বেশি পরিষ্কার এবং সুন্দর ছবি আসবে। এটাকে আমরা বলছি নাইট ফটোগ্রাফি। আমাদের ক্যামেরাটি স্পেশালি যারা নাইট ফটোগ্রাফি করেন তাদের জন্য করা হয়েছে। এসব বিষয় পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে লোকালি যে রিকয়ারমেন্ট সেগুলো আমরা পূরণ করছি। এগুলো কিন্তু গ্লোবালি হচ্ছে না। এগুলোর কারণে অন্যান্য স্মার্ট ফোনগুলো থেকে আমাদেরটিকে আলাদা করা যাবে।

আমাদের ফোনের ব্যাটারি সাপোর্ট
ফোন ইউজাররা ব্যাটারি সাপোর্টটিকে অধিক গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। কারণ একটি স্মার্টফোনের সব থেকে বড় সাপোর্টার হচ্ছে ব্যাটারি। কারণ স্মার্টফোন কিনেই কিন্তু স্যোসাল নেটওয়ার্কিং থেকে নানাবিধ কার্যক্রম শুরু হয়ে যায়। এজন্য ব্যাটারি সাপোর্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। তাই কাস্টমারের প্রধান চাহিদা হচ্ছে যেন দ্রুত চার্জ হয়। কারণ এখন আর মানুষ ফোন চার্জে বসিয়ে অপেক্ষা করতে চায় না। আমরা এসব বিষয় আইডিয়েন্টিফাই করে প্রতিি মোবাইল ফোনে ২ হাজার থেকে ৪ হাজার এমপিআরের ব্যাটারি দিচ্ছি। ব্যাটারির সঙ্গে সঙ্গে থিকনেসটাও ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। এছাড়াও আমরা কয়েকটি মডেলের ফোনে ফার্স্ট চার্জের ব্যবস্থা করেছি। যেন এক ঘণ্টার মধ্যে ৮০% চার্জ সম্পন্ন হয় সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইভেন মাত্র ৫ মিনিট চার্জ করে ৬ ঘণ্টার মতো সাপোর্ট পাবেন এমন ব্যবস্থাও রয়েছে। আর আমরা চাচ্ছি আমাদর কাস্টমারদের যেন হ্যান্ডসেট নিয়ে কাস্টমার কেয়ারে না আসতে হয়। আর যদি কোনো প্রবলেম হয় সেজন্য ইতিমধ্যে ১৬ টি সার্ভিসসেন্টার হয়ে গেছে। আরও ১৭ টি সার্ভিস সেন্টার হচ্ছে। অর্থাৎ আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে সারাদেশে প্রায় ৩৩টির মতো সার্ভিস সেন্টার হয়ে যাবে। এবং সারাদেশে প্রায় ৬৬ টি কালেকশন পয়েন্ট আছে। কালেকশন পয়েন্ট থেকেও গ্রাহকরা ১/২ দিনের মধ্যে হ্যান্ডসেট রিপিয়ার করে আসতে পারবে।

টেকনো মোবাইলের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের জন্য বাড়তি সুবিধা
এরইমধ্যে অনেক সুবিধার কথা জানিয়েছি। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে ডিভাইসে প্রবলেম দেখা দিলে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি। এটি কাস্টমারদের জন্য অবশ্যই একটি বাড়তি সুবিধা। যদি একটু খোলাসা করে বলি- ধরুন কারো একটি ব্যাটারিতে সমস্যা দেখা দিল। তাকে ব্যাটারি বদল করে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তো ফোন চেঞ্জ করার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি একটি হেডফোন নষ্ট হয়ে যায় তবে তাকে আরেকটি নতুন হেডফোন দেওয়া হবে। আর হ্যান্ডসেটের সফটওয়্যারগত কোনো সমস্যা হলে সেটা তো ভিন্ন বিষয়। সেক্ষেত্রেও সমস্যার সমাধান করে দেওয়া হবে। অনেক সময় গ্রাহক নিজে অনেক সমস্যা তৈরি করে নিয়ে আসে। যেমন- পানিতে পড়ে গিয়ে কোনো সমস্যা দেখা দিল বা হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেল। এমন সমস্যা হলে তো আমাদের কিছু করার থাকবে না। আমরা যেটা অ্যালাও করছি, ম্যানুফ্যাকচারিংগত ফল্টগুলো আমরা সমাধান করিয়ে দিব। আমরা যে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি এটাও ইতিপূর্বে কোনো কোম্পানি দেয়নি। তাই আমাদের কাস্টমাররা বিপুল উৎসাহ পাচ্ছে। আর আমরা মার্কেট রিসার্চ করে দেখেছি আমাদের কোয়ালিটিতে কাস্টমাররা খুবই সন্তুষ্ট। মানেও আমরা অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে।

যে মডেলটি গ্রাহকদের মাঝে বেশি চাহিদা রয়েছে
আমরা দুটি ব্র্যান্ড নিয়েছি। আইটিএল এবং টেকনো মোবাইল। আইটিএলের মধ্যে ৭ হাজার টাকার মধ্যে অনেকগুলি মডেল রয়েছে। প্রায় ১৫ টি মডেলের মতো। সেখানে আমরা দেখেছি এস ওয়ান প্লাস মডেলের একটি স্মার্টফোন আছে। যার দাম রাখা হচ্ছে ৬৮৯০ টাকা। ২ জিবি র‌্যাম সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এটায় বিপুল পরিমাণ সাড়া পাচ্ছি। ক্যামেরা সুবিধা দিচ্ছ ৫+৫। অর্থাৎ ফ্রন্টে ৫ এবং ব্যাকে ৫। দামের কথা চিন্তা করলে খুবই রিজনেবল। বাংলাদেশে ৬/৭ হাজার টাকার মধ্যের কাস্টমার সব থেকে বেশি। এই জাায়গা থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। এ ছাড়া আইটিএল ১৫১৩ নামে একটা মডেল আছে। যেটার দাম ধরা হয়েছে ৪৮০০ টাকা। এটায়ও ভালো সাড়া পাচ্ছি।
আর টেকনোর পাঁচটি মডেল লঞ্চ করেছি। নাইট ক্যামেরার কথা বলছি। বা বেস্ট সেলফি ক্যামেরার কথা বলছি। সত্য বলতে এই পাঁচটি মডেলেই আমরা প্রচণ্ড সাড়া পাচ্ছি। এই পাঁচটি মডেল ৬০০০ থেকে শুরু করে ১৯৯৯০ টাকার মধ্যে দাম রেখেছি।

কম্পিউটারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে যেটি
বাংলাদেশের বাজারে আসলে তিন ধরনের কাস্টমার রয়েছে। একটি হচ্ছে প্রফেশনাল; যারা প্রফেশনালি ফোন ইউজ করতে হবে তাই করছে। আরেকটি হচ্ছে ফ্রেন্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি অর্থাৎ স্যোস্যাল নেটওয়ার্কিং, যোগাযোগ বা বন্ধুত্বের সংযোগ সব করছে ফোনের মাধ্যমে। আরেকটি হচ্ছে ইয়াং জেনারেশন। যারা মাত্র স্মার্টফোন ব্যবহার শুরু করেছে। তারা হ্যান্ডসেট ইউজ করছে একদম এক্সপ্লোরিংয়ের জন্য। আমরা ওই তিনটিকেই আলাদা আলাদা করেছি। আমরা খুব প্রফেশনালি আইসেভেন মডেলের একটা ফোন করছি। ১৯৯৯০ টাকা। যেটায় ৪ জিবি র‌্যাম, রম ৩২জিবি, ক্যামেরা ফ্রন্ট ১৬ এবং ব্যাক ১৩ এমপি। ব্যাটারি ৪০০০ এমপিআর। ফাস্ট চার্জার। সব কিছু চিন্তা করে যদি কোনো পেশাদার মানুষ ব্যবহার করতে চায়, তার যা যা দরকার তার সবগুলো এটিতে পাবে। এবং মূল্যের দিকেও আমরা খুবই কম মূল্যে দিচ্ছি।

বাংলাদেশের মোবাইল ফোন সম্পর্কে একটি মজার তথ্য হচ্ছে- প্রতি বছর যে ৩ কোটি ফোন বিক্রি হয় এর ৭০% হয় ফিচার ফোন। তাই বলতেই হয় ফিচার ফোনের মার্কেটটা অনেক বড়। আমরা ফিচার ফোনের দিক দিয়ে মার্কেটে লিড করছি। গ্লোবাল ব্র্যান্ডের কেউ কিন্তু ফিচার ফোনে নেই। আমরা আইটিএল-এর ফিচার ফোন এনেছি। আর ফিচার ফোনের দিক দিয়ে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের মধ্যে আইটিএল বিশ্বের মধ্যে নম্বর ওয়ান। তাই বলতেই হয়, ফিচার ফোনে আমরা খুব ভালো করছি। আর আমরা যে ১০০ দিনের মধ্যে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি সেটা কিন্তু এই ফিচার ফোনেই। একইসঙ্গে ১২ মাসের ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। মানের দিক থেকে গ্লোবাল ব্র্যান্ডই সেরা। এই কারণেই আমরা ফিচার ফোনকে বেশি ফোকাস করছি। কারণ আমরা জানি আমাদের ইউজাররা ফিচার ফোনটি ব্যবহার করার পর তার নেক্সট যে ফোনটিই হবে স্মার্ট ফোন।

ওয়ারেন্টি সম্পর্কে তথ্য
আমরা আইটিএল-এর প্রতিটি ফোনই ১২ মাসের ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। আর টেকনোর ক্ষেত্রে ১৩ মাসের ওয়ারেন্টি দিচ্ছি। আর আইটিএল এবং টেকনো দুটো ব্র্যান্ডই প্রথম ১০০ দিনে রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি দিচ্ছি। প্রথম ১২ মাসের মধ্যে ফোনে যদি কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে আমরা সম্পূর্ণ বিনা খরচে মেরামত করে দিচ্ছি।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা
ট্রান্সান হোল্ডিং আফ্রিকায় বিক্রির দিক থেকে শীর্ষ আইটেম। এদের যে দুটি ব্র্যান্ড আমরা এনেছি আইটিএল এবং টেকনো; দুটিই আফ্রিকায় নাম্বার ওয়ান পজিশনে আছে। ইন্ডিয়ায় মাত্র শুরু করেছে। একবছরের মধ্যেই তারা দ্বিতীয় অবস্থানে চলে এসেছে। ট্রান্সান হোল্ডিংয়ের চায়নাতে একটি ফ্যাক্টরি আছে। আফ্রিকায় ফ্যাক্টরি করেছে। নাইজেরিয়াতে ফ্যাক্টরি করেছে। ইন্ডিয়ায় মাত্র এক বছর আগে শুরু করেছে। এরইমধ্যে ফ্যাক্টরির দিকে এগোচ্ছে। এটি যদিও গ্লোবাল ব্র্যান্ড। কিন্তু কান্ট্রিওয়াইজ তাদের আলাদা ফোকাস আছে। বাংলাদেশেও তাদের আলাদা ফোকাস আছে। বাংলাদেশে তারা মাত্র মোবাইল ফোন শুরু করেছে। তাদের তো শুধু মোবাইল ফোন না। মোবাইল ফোন ছাড়াও হোমাপ্লাস ব্র্যান্ড আছে। একটা সুইস আছে এবং অনেক ধরনের অ্যাপ্লিকেশন মার্কেট আছে। তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা হচ্ছে তাদের যতগুলো প্রোডাক্ট আছে তার সবগুলোই বাংলাদেশে আনতে চায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাজারের ওপর ডিপেন্ড করে ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটও করতে পারে। আর ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট করলে এটা বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় ধরনের সুযোগ বলে আমি বিবেচনা করি। তার স্থানীয় বাজারের চাহিদার ভিত্তিতে তার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট হতে পারে। অথবা বিশ্বব্যাপি তাদের যে ৫৮ টি দেশের মার্কেট রয়েছে সে দেশগুলোর জন্যও বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট করতে পারে। তারা যদি লাভজনক মনে করে তাহলেই এমনটা সম্ভব। সবকিছু নির্ভর করছে বাংলাদেশের বাজার পরিবেশের ওপর। তবে আমি বলতে পারি তাদের বাংলাদেশের বাজারের ওপর একটা স্পেশাল ফোকাস রয়েছে।

প্রতিবন্ধকতা
নানা সুবিধার পাশাপাশি কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। আমাদের সারাদেশে যে কুরিয়ার সার্ভিস নেটওয়ার্ক সেটা কিন্তু সেভাবে এগোচ্ছে না। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন কুরিয়ার সমস্যা। কাস্টমারের হাতে বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কাস্টমারদের হাতে পৌঁছাতে আমাদের কোনো না কোনো কুরিয়ারের সহায়তা নিতে হয়। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কুরিয়ারে যে সমস্যাগুলো দেখা যায় তা হচ্ছে- পরিবেশগত বিপর্যয় থাকে মাঝে মধ্যে আর একটি সমস্যা হচ্ছে ট্রাফিক ইস্যু থাকে। এসবের পরও আমরা চেষ্টা করছি ৩ দিনের মধ্যে পৌঁছাতে। একইসঙ্গে চেষ্টা করছি কীভাবে আরও কম সময়ের মধ্যে পৌঁছানো যায়।

রেজোয়ানুল হক
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)
ট্রান্সান বাংলাদেশ লিমিটেড