চীনের সঙ্গে সংঘাত মিটতে না মিটতেই পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নে আবার সঙ্কটে পড়েছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা এখন ভারতের গলার কাঁটা। এ নিয়ে বিভিন্ন স্তরের চাপ কাটিয়ে সমাধানের পথ খোঁজাটাই এখন সাউথ ব্লকের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার জায়েদ রাদ আল হুসেন এই প্রসঙ্গে তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতের। জাতিসংঘে ভারতের প্রতিনিধি সমালোচনার জবাবে বলেন, ‘অন্য অনেক দেশের মতো ভারতও অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত সেই অনুপ্রবেশকারীরা যদি জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান। মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনারের বক্তব্যে আমরা বিস্মিত।’
কিন্তু এই সমালোচনা নিঃসন্দেহে দিল্লির অস্বস্তি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস প্রশ্নে সবসময় ভারতের পাশে দাঁড়ানো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারও ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছে। দুইদিন আগে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোয়াজ্জেম আলি পররাষ্ট্র সচিব এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করে অনুরোধ জানিয়েছেন, বাংলাদেশে বসবাসকারী সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে মায়ানমারে ফেরানোর জন্য সক্রিয় হোক ভারত। মায়ানমারের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক রয়েছে। আমরা সবাই বিমস্টেক গোষ্ঠীভুক্ত। ভারতের জোর দিয়ে মায়ানমারকে বলা উচিত সে দেশে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে যাতে এরা নিজেদের দেশে ফিরতে পারেন।’
ভারতে বসবাসকারী ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিয়ে জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। দুশ্চিন্তার সবচেয়ে বড় কারণ, এই রোহিঙ্গা গোষ্ঠী জম্মু ও কাশ্মিরে ছড়িয়ে পড়ছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, রোহিঙ্গা জঙ্গি গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)-র সঙ্গে সরাসরি যোগ রয়েছে লস্কর ই তাইয়েবা, জইশ ই মোহাম্মদ এবং পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, দেশটিতে থাকা শরণার্থীদেরই মায়ানমারে ফেরানোর অবস্থায় নেই দিল্লি। মোদি এ ব্যাপারে সে দেশের নেত্রী ও সরকারের পরামর্শদাতা অং সান সু চি-র সঙ্গে কথা বলেছেন। কিন্তু রোহিঙ্গা প্রশ্নে এতটুকুও আপস করার জায়গায় নেই সু চি। বিশেষ করে আরসা জঙ্গিরা রাখাইন প্রদেশে ৩০টি পুলিশ চৌকি ও একটি সেনা ছাউনিতে আক্রমণ করার পরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ।
এদিকে গতকাল যুক্তরাষ্ট্র মায়ানমারের সমালোচনা করলেও সু চি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে চীন। ফলে বিষয়টি নিয়ে ভারতের অস্বস্তি আরও বেড়েছে।
রাখাইন প্রদেশের আর্থ সামাজিক উন্নতির জন্য নয়াদিল্লি পদক্ষেপ নেবে বলে মায়ানমার নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। সেখানে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করে পরিস্থিতিকে প্রশমিত করা এবং ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের সেখানে পুর্নবাসনের চেষ্টাও করা হবে।
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭