রোনালদিনহোর আনুষ্ঠানিক ‘অবসর’

EL JUGADOR BRASILEÑO DEL PSG, RONALDINHO CONDUCE EL BALON RODEADO DE LOS JUGADORES DEL OLYMPIQUE DE MARSELLA, DANIEL VAN BUYTEN (IZDA) Y PIOTR SWIERCZEWSKI DURANTE EL PARTIDO DE LA LIGA FRANCESA CELEBRADO ENEL ESTADIO PARQUE DE LOS PRINCIPES,

সর্বশেষ পেশাদার ম্যাচটি খেলেছেন সেই ২০১৫ সালে। এরপর কার্যত অবসরই নিয়ে ফেলেন রোনালদিনহো। বিদায়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটাই কেবল বাকি ছিল। অবশেষে সেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটাও দিয়ে ফেললেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি। পেশাদার ক্যারিয়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলে পাকাপাকিভাবে নাম লেখালেন ‘সাবেক’এর খাতায়।

৩৭ বছর বয়সী রোনালদিনহো নিজ মুখে নয়, তার আনুষ্ঠানিক বিদায় ঘোষণার খবরটা বিশ্ববাসীকে দিয়েছেন তার ভাই অ্যাসিস। যিনি আবার তার এজেন্টও। ইউওএল স্পোর্তকে অ্যাস্টিস বলেছেন, ‘সে আর পেশাদার ফুটবল খেলতে চায় না। খেলবে না।

নিয়তির কি নিষ্ঠুর খেলা! রোনালদিনহোর মতো ফুটবলের একজন জাত শিল্পীকে কিনা বিদায়ের ঘোষণা দিতে হলো মাঠের বাইরে লেঅক-চক্ষুর আড়ালে কোনো এক তালাবদ্ধ অন্ধকার রুমে বসে! সেই ঘোষণাটা প্রচার করতে হলো অন্যকে। এতো বড় ফুটবলার সরাসরি মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলেন না!

নিয়তিকে দায়ী করা হলো বটে। তবে নিজের সঙ্গে এই ফুটবল-নিষ্ঠুরতার দায়টা একমাত্র তারই। একমাত্র নিজেকেই কাঠগড়ায় তুলতে পারবেন তিনি। অন্য কাউকে নয়। ঈশ্বর অমিয় প্রতিভা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন তাকে। সেই প্রতিভা রোনালদিনহো নষ্ট করেছেন খামখেয়ালিপনায়!

‘প্রতিভা অপচয়’ শব্দ যুগল ফুটবলে বহুল প্রচলিত। রোনালদিনহো যেন তার স্বার্থক চরিত্র। তার ক্ষেত্রেই বোধকরি এই যুগল ব্যবহারিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি! মদ, নারী আর নাইটক্লাবের নেশায় পড়ে নিজের প্রতিভার সঙ্গে কি নিষ্ঠুরতাই না করেছেন তিনি।

ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তির উত্থানের গল্পটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া ভালো।

শিল্পী, ছোট্ট এই শব্দটার নিপূণতার সম্পর্ক গভীর। যুগে যুগে পায়ের মোহনীয় ছন্দে ফুটবলকে শৈল্পিক রূপ দিয়েছেন যারা, রোনালদিনহো তাদেরই একজন। ফুটবলের জাত শিল্পী। অসাধারণ ড্রিবলিং, পায়ের শৈল্পিক কারুকার্যে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের বোকা বানানোর দক্ষতা, দুর্দান্ত ফ্রি কিক, ডিফেন্স চেরা পাস, গোল করার দক্ষতা-কোনো কিছুতেই খামতি ছিল না রোনালদিহোর।

সদা হাস্যোজ্জ্বল রোনালদিনহো বিশ্ব ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে পাকা জায়গা করে নেন ২০০২ বিশ্বকাপে। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস সেই ফ্রি কিকের মধ্য দিয়ে। বক্সেরও অনেকটা উপরে সাইডলাইনের কাছাকাছি জায়গায় ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। দলে রবার্তো কার্লোসের মতো ফ্রি কিক স্পেশালিস্ট থাকতেও ফ্রি কিকটি নেন তরুণ রোনালদিনহো।

এতো দূরে ফ্রি কিক পেলে সাধারণত বক্সের মধ্যে জটলা করে থাকা খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে ফ্রি কিক নেন সবাই। ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক ডেভিড সিমনও ভেবেছিলেন রোনালদিনহোও হয়তো তাই করবেন। তিনি তাই পোস্ট ছেড়ে কিছুটা উপরে এসে দাঁড়িয়েছিলেন।

লক্ষ্য ছিল ভেসে আসা বল কেউ হেড করার আগেই দৌড়ে গিয়ে পাঞ্চ করে বিপদমুক্ত করবেন। কিন্তু তার সেই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে তরুণ রোনালদিনহো শট নেন সরাসরি গোলপোস্ট লক্ষ্য করে। বল সিমনের মাথার উপর দিয়ে বার ঘেষে ঢুকে যায় জালে। রোনালদিনহোর সেই গোলেই ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে উঠে যায় ব্রাজিল। পরে তো জিতে নেয় পঞ্চম বারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপাই।

ব্রাজিল জাতীয় দলের হয়ে ৯৭টি ম্যাচ খেলেছেন। দেশকে একবার জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ। লেঅকচক্ষুর বাইরে বসে বিদায়ের ঘোষণা দিলেও একটা বিদায়ী ম্যাচ তার প্রাপ্যই। তার ভাই জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে রোনালদিনহোর ‘বিদায়ী ম্যাচ’ আয়োজনের সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী বিশ্বকাপের পরই ৩৭ বছর বয়সী রোনালদিনহোর সম্মানার্থে একটা বিদায়ী ম্যাচ আয়োজন করা হতে পারে বলে আশাবাদী অ্যাসিস।

আজকের বাজার: সালি / ১৭ জানুয়ারি ২০১৮