মায়ানমারে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রাখার ঘোষনা দিয়েছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই সহায়তা অব্যাহত রাখবে সংস্থাটি।
ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার ঢাকায় বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী সঙ্গে বৈঠক করে এ আশ্বাসের কথা জানান।
ডেভিড বিসলে সাংবাদিকদের বলেছেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের সরকার খুব ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। ডব্লিউএফপি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি মায়ানমার যাতে তার নাগরিকদের দ্রুত তাদের দেশে ফেরত নেয় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সে ব্যাপারে চেষ্টা চালাবে।
এ সময় দুর্যোগমন্ত্রী বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের নিয়ে স্বল্প,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। স্বল্প মেয়াদে তাদের খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং মধ্য মেয়াদে তাদের বাসস্থান ও অন্যান্য সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যদি তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া বিলম্বিত হয় তাহলে তাদের নোয়াখালীর ভাষাণচরে স্থানান্তর করার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। ওই চরটিকে রোহিঙ্গাদের বসবাসের উপযোগী করছে নৌবাহিনী। তবে আমরা চাই খুব দ্রুতই তারা তাদের দেশে ফিরে যাক।
তাছাড়া, জাতিসংঘের আপর এক সংস্থা ইউনিসেফ বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য আরও এক হাজার ৩০০টি শিক্ষাকেন্দ্র তৈরির ঘোষণা দিয়েছে
সংস্থাটি শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে ইউনিসেফ কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও অস্থায়ী বসতিগুলোয় বর্তমানে ১৮২টি শিক্ষাকেন্দ্র পরিচালনা করছে, যাতে ১৫ হাজার শিশু নিবন্ধিত রয়েছে। শিশুদের এই শিক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা দেড় হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে তারা, যাতে আগামী বছরের মধ্যে অন্তত দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশুর কাছে মৌলিক শিক্ষা পৌঁছাতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গার বোঝা বহন করছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর নতুন করে অন্তত পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এর মধ্যে একটা বড় অংশই শিশু।
ওদিকে, মায়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে এখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ভোররাত থেকেই সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকতে দেখা গেছে তাদের।
সবচেয়ে বেশি রোহিঙ্গা আসছে শাহপরীর দ্বীপ হয়ে হাড়িয়া খালি পয়েন্ট দিয়ে। মায়ানমান সেনাবাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে পালিয়ে আসছেন তারা। পালিয়ে আসার পথে সাগরে সলিল সমাধি হয়েছে অনেকের।
রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকা ডুবে গত বৃহস্পতিবার ৬০ জনের অধিক মৃত্যু হয়েছে বলে শঙ্কা করছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ট্রলারডুবির পর এ পর্যন্ত ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া, জীবিত ২৭ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৯ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ওদিকে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের মধ্যে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা গ্রহণ করার কোন ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছে ভারত। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে দৈনিক স্পুটনিক ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, তবে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারকে মানবিক সহায়তা দেবে তারা।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭