রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মায়ানমারের প্রতি ১৪ দলের আহবান

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান এবং তাদের নিজ আবাসভূমিতে ফিরিয়ে নিতে ও মানবিকভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট নেতারা।

৯ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান জোট নেতারা।

১৪ দলের মুখপাত্র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ ধরনের মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড রোধ করতে আন্তর্জাতিকভাবে সমগ্র গণতান্ত্রিক শক্তি বা রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ, একটি দেশের ওপর অন্য দেশের লোকের বোঝা চাপানো কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসছে। আমরা চাই এটার সামধান হোক। তাদের শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে নিতে হবে, তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের ওই দেশে মানবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা মিয়ানমার সরকার নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

মায়ানমারের চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যাকে ১৪ দল কোনোভাবেই সমর্থন করে না জানিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, একটি জাতিগোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করতে মায়ানমারে যে নির্যাতন নিপীড়ন চলছে, তা আমরা কোনোভাবেই সমার্থন করতে পারি না। যেকোনো দেশের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হয় রাজনৈতিকভাবে। কোনোভাবেই গণহত্যা চালিয়ে, নির্যাতন করে কোনো সমস্যার সমাধান করা যায় না। এটা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি মায়ানমার থেকে প্রায় কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এবং তারা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। দেশবাসী ও সমগ্র বিশ্ববাসী জানে কিভাবে গণহত্যা চালিয়ে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আসতে বাধ্য করা হচ্ছে। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমাদের সরকার তাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছে।

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল ও সমস্যা-সংকূল দেশে অন্য একটি দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দিয়ে রাখতে পারি না। আমাদের অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিতে এর প্রভাব পড়ছে। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের কারণে ওই এলাকাগুলোতে আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যক্রমের প্রশংসা করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। কারণ, তার যথাযথ পদক্ষেপের কারণে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেকগুলো দেশ আজ এ ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে, কথা বলেছে। আমরা চাই এ ধরনের গণহত্যা বন্ধ করতে কার্যকরভাবে জাতিসংঘসহ বৃহত্তর শক্তিগুলো মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।

চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে নোবেলজয়ী অং সান সুচির বিতর্কিত ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা অত্যন্ত বিস্মিত হয়েছি সুচির ভূমিকা দেখে। তিনি একজন নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব, যাকে বাংলাদেশের মানুষ সমর্থন করেছে ও শ্রদ্ধা জানিয়েছে। তিনি কেন আজ ভূমিকা রাখছেন না। তার দেশের যেকোনো সমস্যা আমরা চাই শান্তিপূর্ণভাবে তিনি সমাধান করবেন।

রোহিঙ্গা সমস্যাকে ইস্যু না বানিয়ে সমস্যা সমাধানে সরকারকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির উদ্দেশে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সব রাজনৈতিক দল এগিয়ে আসছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকারের পদক্ষেপকে সমর্থন করতে। বিএনপির বন্ধুরা, একটি মানবিক বিষয়কে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করবেন না। এটি একটি মানবিক বিপর্যয়ের বিষয়। এখানে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নেয়া হয়েছে। যাই করুন এটিকে অন্তত রাজনৈতিক ইস্যু বানাবেন না।

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, এর সঙ্গে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত। এ সমস্যার সূত্রপাত ঘটেছে বহু আগে। এ অঞ্চল দিয়ে বিভিন্ন সশস্ত্রগ্রুপ তাদের কার্যাবলী পরিচালনা করে। এ বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় যাতে বিঘ্ন না ঘটে, সে ব্যাপারে আমাদের নজর রাখতে হবে।

জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার এ বিষয়ে বলেন, আমরা বারবারই বলছি এটি একটি মানবিক দিক। মানবিকভাবে এ সমস্যা সমাধানে সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা মায়ানমারের অভ্যান্তরীণ সমস্যা। এ সমস্যার সমাধান মিয়ানমার সরকারকেই করতে হবে।

এর আগে, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নাজিবুল বাশার মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে দেশের চলমান সমস্যাগুলো সমাধানে ১৪ দলের করণীয় বিষয়াদি সম্পর্কে আলোচনা হয়।

সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম, গণতন্ত্রী পার্টির ডা. শাহাদাত হোসেন, বাসদের একাংশের রেজাউর রশিদ খান আরো অনেকে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭