রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতেই হবে: কফি আনান

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সম্ভাব্য পদক্ষেপ নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ঐকমত্য রয়েছে বলে মনে করেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। তিনি বলেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে মায়ানমারকে চাপ দিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান।

১৩ অক্টোবর শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইকোসক চেম্বারে মায়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী দুই সদস্য ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের অনুরোধে আয়োজিত এক বৈঠকে কফি আনান এসব কথা বলেন বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ করা হয়েছে। কফি আনান মনে করেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারটা অত সহজ নয়। রোহিঙ্গারা যদি নিরাপদবোধ না করে,তাদের জীবন আগের চেয়ে ভালো হবে এটা ভাবতে না পারে তাহলে তারা হয়তো ফিরে যাবে না। জাতিসংঘের সাবেক এই মহাসচিব বলেন, যারা মায়ানমারে ফিরে যাবে তাদের কোনো আশ্রয়শিবিরে রাখা যাবে না। নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যেতে দিতে হবে। নতুন জীবনের জন্য সব সহায়তা দিতে হবে।

তিনি মনে করেন, রাখাইন কমিশনে যে সুপারিশমালা রয়েছে তার ভিত্তিতে একটি রোড ম্যাপ প্রস্তুত করা সম্ভব। আর সেটি অনুসরণ করলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান অর্জন করা সম্ভব। কমিশনের সুপারিশে সমস্যার মূল কারণ, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের প্রশ্নটি, সমাধানের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। রাখাইন সঙ্কট নিয়ে ময়ানমার সরকার গঠিত কমিশনের প্রধান কফি আনান দেশটির আইন সংশোধন করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নাগরিক স্বীকৃতি দেওয়ার উপরও জোর দেন।

ওই বৈঠকে মায়ানমারের প্রতিনিধি ও দেশটির সামরিক উপদেষ্টা দাবি করেন, রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তাবাহিনীর সামরিক তৎপরতা বন্ধ হয়েছে। সেখানে আর কোনো সহিংসতা নেই। তবে কফি আনান বলেন, সহিংসতা যদি বন্ধ হয়ে থাকে, তাহলে এখনো দলে দলে মানুষ কেন দেশ ছাড়ছে? এর কারণ কি ক্ষুধা, সন্ত্রাসী দলের তৎপরতা, না কি রোহিঙ্গাদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতার ভয়? কফি আনান জোর দিয়ে বলেন, কারণ যাই হোক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।

তিনি জানান, গত ২৮ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের উন্মুক্ত অধিবেশনেই এই মতৈক্য হয়। সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ, উপদ্রুত এলাকায় অবিলম্বে আন্তর্জাতিক ত্রাণ পৌঁছানোর ব্যবস্থা এবং সব উদ্বাস্তুর নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে সবাই একমত হয়েছে। উল্লেখ, আনান মায়ানমার সরকারের আমন্ত্রণে গঠিত রাখাইন রাজ্য প্রশ্নে উপদেষ্টা কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। এই কমিশন গত আগস্ট মাসে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে রাখাইন রাজ্যের সংকট সমাধানের লক্ষ্যে ১০ দফা সুপারিশমালা পেশ করে। এই কমিশনের সভাপতি হিসেবে বিশেষভাবে আমন্ত্রিত হয়ে কফি আনান পরিষদের সদস্যদের পরিস্থিতি বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার এ রূপরেখা তুলে ধরেন।
আনান বলেন, রাখাইন কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে যে ‘রোডম্যাপ’ রয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা বাস্তবায়নে মভয়ানমার কর্তৃপক্ষকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এই সংকট সমাধানে ব্যর্থতা শুধু মিয়ানমার ও তার প্রতিবেশীদের জন্য নয়। এর বাইরেও সংকট দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার তৈরি করতে পারে।

বৈঠক শেষে কফি আনান সাংবাদিকদের বলেন, রাখাইন প্রদেশে স্থিতিশীলতা ফেরাতে তার নেতৃত্বাধীন কমিশনের সুপারিশ মায়ানমার সরকার বাস্তবায়ন করবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি আশা করেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিয়ে নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে পুনর্বাসনে মায়ানমারের উপর চাপ অব্যাহত রাখবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে অনাগ্রহ দেখিয়ে আসা মায়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কফি আনান মায়ানমারের আন্তঃসম্প্রদায়ের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন।

বৈঠকে অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট এর চেয়ারম্যান কফি আনান ছাড়াও জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও মভয়ানমারের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য রাখেন। এছাড়া জাতিসংঘে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও অফিস অব দ্য হাই কমিশন অব হিউম্যান রাইটস, অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স, ইউএনএইচসিআর, ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও সভায় বক্তব্য রাখেন। উল্লেখ গত ২৫ অগাস্ট ময়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতা শুরুর পর ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে থেকে বাংলাদেশে রয়েছে আরও ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৪ অক্টোবর ২০১৭