মায়ানমার থেকে গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে চলে আসা রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা নিজের চোখে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের সঙ্গে কথা বললেন, দিলেন সান্ত্বনা। রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিটিকে কাছে পেয়ে সবহারানো রোহিঙ্গারাও আপ্লুত। এ সময় অনেক অসহায় রোহিঙ্গাকে জড়িয়ে ধরেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তার চোখে ছিল অশ্রু।
প্রধানমন্ত্রী প্রায় আধা ঘণ্টা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বারবার আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং প্রত্যেকের কাছে তাঁর সান্ত্বনার বাণী পৌঁছে দেন। তাঁর বোন এবং বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি তাদের মধ্যে ত্রাণসমাগ্রী বিতরণ করেন।
ত্রাণ বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী রাখাইনের জাতিগত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগণের ওপর অমানবিক আচরণ এবং অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ করে প্রতিবেশী মায়ানমারের প্রতি শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার আহবান জানান। বলেন, ‘বাংলাদেশ নেপিডো’র সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায় তবে কোনো অন্যায়-অবিচার সহ্য করবে না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমরা কোনো ধরনের অন্যায়-অত্যাচার গ্রহণ বা মেনে নিতে পারি না এবং এই ব্যাপারে আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।’
মায়ানমারের যে সংকট, যে জ্বালাও-পোড়াও এবং যে অমানবিক আচরণ তা থেকে শুরু করে বাংলাদেশে এদের অবস্থানের জন্য যা যা করণীয় তার নিশ্চয়তা, ভবিষ্যতে কিভাবে কূটনৈতিকভাবে এই পুরো বিষয়টি বাংলাদেশ মোকাবেলা করবে তারই একটি পরিকল্পনা এবং দিক নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন।
শরণার্থীদের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী রাখাইন সম্প্রদায়ের জনগণের প্রতি অত্যাচার বন্ধ এবং বাংলাদেশ থেকে মায়ানমারের শরণার্থীদের দেশে ফেরত নিয়ে যাবার জন্য মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মায়ারমারের শরণার্থীদের পাশে রয়েছি এবং তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের দেশে ফিরছে আমরা পাশে রয়েছি।’
মায়ানমারের শরণার্থীদের দূরাবস্থা দেখার পর অন্তরের অন্তঃস্থলে গভীর দুঃখ অনুভব করছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারাও মানুষ এবং মানুষ হিসেবেই তাদের বাঁচার অধিকার রয়েছে। তারা কেন এত দুঃখ কষ্ট ভোগ করবে?’
তিনি বলেন, ‘এই নিরীহ রাখাইন সম্প্রদায়ের ওপরে অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধে এবং বাংলাদেশ থেকে তাদের নিজের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ প্রয়োগ করা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রাখাইন সম্প্রদায়কে তাদের নাগরিক হিসেবে অস্বীকার করার মায়ারমারের কোনো অধিকার নেই। তাদেরকে মায়ানমার সরকারের নিরাপত্তা দিতে হবে। যাতে নিজেদের দেশে তারা নিরাপদে বসবাস করতে পারে।’
এই বিষয়ে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মায়ানমারকে সবধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিন্তু আগে তাদের এই রাখাইন জনগণের প্রতি অন্যায়-অত্যাচার বন্ধ করতে হবে।’
তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং জরুরি সেবা শরণার্থীদের জন্য অব্যাহত রাখবে, তাতে কোন সমস্যা হবে না- যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে যদি সবার মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা সরকার বিধান করতে পারে সেক্ষেত্রে মায়ানমারের শরণার্থীদেরও কোন সমস্যা হবে না।
এই বার্তাও প্রধানমন্ত্রী আগত রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে দেন- এইখানে কোন স্বার্থান্বেষী মহল যদি ফায়দা লোটার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সুতরাং বিচ্ছিন্নভাবে হলেও কেউ যেন এ ধরনের কোন অপচেষ্টার সাথে লিপ্ত না হন। সে ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক করে দেন।
এলাকাবাসীর প্রতি তিনি আহবান জানিয়ে বলেন, এই সব আশ্রিত জনগণের সঙ্গে কোনো অস্থির বা অমানবিক আচরণ করা যাবে না। সহনশীলতার সঙ্গে এবং মানবতার সঙ্গে যেন তারা এইসব মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বিবেচনা করেন।
এর আগে সকাল সোয়া ৯টার দিকে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। এক ঘণ্টার মাথায় তিনি কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে সেখান থেকে সড়কপথে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে যান প্রধানমন্ত্রী।
সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ, হুইপ ইকবালুর রহিম, কক্সবাজার-৩ আসনে আওয়ামী লীগের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন নদভী, মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম, মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭