মায়ানমার সফররত পোপ ফ্রান্সিস দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক শেষে দেওয়া ভাষণে রোহিঙ্গাদের নাম উচ্চারণ করেননি। মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর ওই ভাষণে দেশটির অভ্যন্তরীণ সংঘাত এবং জনগণের ভোগান্তি তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি প্রতিটা জনগোষ্ঠীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহবান জানান।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবাধিকার সংস্থাগুলো পোপকে রোহিঙ্গা শব্দটি সম্বোধন করার তাগিদ দেন যাতে নিপীড়িত এই জনগোষ্ঠী তাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরে যেতে পারে। কিন্ত পোপ মায়ানমার সফরে যাওয়ার আগে দেশটির ক্যাথলিক চার্চ সংকট এড়াতে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না করার অনুরোধ করে। তবে রাখাইন সঙ্কটের শুরু থেকে রোহিঙ্গাদের অধিকারের ব্যাপারে কথা বলে আসছেন পোপ। রোহিঙ্গাদের তিনি ভাই-বোন বলে সম্বোধন করেন।
ভাষণে রোহিঙ্গাদের উল্লেখ না করে ক্যাথলিক এই ধর্মগুরু বলেন, গৃহ-বিবাদ ও দ্বন্দ্বে প্রতিনিয়ত মায়ানমারের জনগণ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। মায়ানমারের ভবিষ্যৎ অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হবে, আর এই শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মর্যাদা এবং অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।
পোপ বলেন, শান্তিপূর্ণ মায়ানমারে প্রত্যেকটি জাতিগত গোষ্ঠীর সম্মান ও আত্মপরিচয়, আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রত্যেক গোষ্ঠী ও ব্যক্তির মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে; যেখানে ভালো কাজ থেকে কেউই বাদ পড়বে না।
পোপ আরও বলেন, ‘ধর্মীয় ভিন্নতা বিভাজন ও অবিশ্বাসের উৎস নয়, বরং এটি ঐক্য, ক্ষমা, সহিষ্ণুতা এবং বুদ্ধিদীপ্ত জাতি গঠনের শক্তি’।
তার এই ভাষণের আগে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন পোপ ফ্রান্সিস। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে সরাসরি কোনো কথা না বললেও ভাষণে দেশটির জাতিগত সংখ্যালঘুদের জন্য শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন পোপ।
তিনি বলেন, দেশে শান্তি পুনর্স্থাপনের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। আহতদের ক্ষত নিরাময়ের বিষয়কে অবশ্যই রাজনৈতিক ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব দিতে হবে।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় মায়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করেন। দেশটির এ সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান চলছে। জাতিসংঘ এবং যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযানকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে রাখাইনে ব্যাপক নৃশংসতার অভিযোগ উঠলেও তা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে দেশটি। গত আগস্টের শেষের দিকে শুরু হওয়া সেনা অভিযানে ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে।
সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং পোপকে বলেছেন, রাখাইনে কোনো ধরনের বৈষম্য নেই। দেশের শান্তি এবং স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে কাজ করছে সেনাবাহিনী।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২৮ নভেম্বর ২০১৭