রোহিঙ্গা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার তিন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পদক্ষেপ তিনটি হচ্ছে- মানবিক পদক্ষেপ, কূটনৈতিক পদক্ষেপ ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ।
১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি, সরকারের অবস্থান ও বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরের তথ্যমন্ত্রী।
মানবিক পদক্ষেপের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সবার ওপরে মানবতা’- এই মন্ত্রে বিশ্বাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়াবহ নৃসংশতার শিকার মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নাগরকিদের খাদ্য, বাসস্থান, অস্থায়ী আশ্রয়, চিকিৎসাসহ সব ধরনের মানবিক সাহায্য দেয়া নিশ্চিত করেছেন। নিয়েছেন ২২টি পদক্ষেপ। গত কয়েক সপ্তাহে এপর্যন্ত চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। সব মিলিয়ে রোহিঙ্গা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আট লাখ।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ১৪টি পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের জন্য ৮০০ মেট্রিক টন খাদ্য ও ৩২ লাখ টাকা সমমূল্যের সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সরবরাহ করা হয়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা সরাসরি এক লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীকে খাদ্য যোগান দিচ্ছে। ৭০ হাজার গর্ভবতী ও স্তন্যদায়ী মাতার বিশেষ পরিচর্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০০০ একর জমিতে অস্থায়ী আবাসন নির্মাণ হচ্ছে। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য নির্মিত হচ্ছে ১৬ হাজার শৌচাগার।বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা হয়েছে। শিশুদের জন্য টিকা সরবরাহ হচ্ছে, বিদ্যুতের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ১৫টি নিরাপত্তা চৌকি, ৪২টি নিরাপত্তা দল ভ্রাম্যমাণ পেট্রল পরিচালনা করছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব ত্রাণ ও খাদ্য সরবরাহ কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সমন্বিত হচ্ছে। সব শরণার্থীকে নিবন্ধন করতে হবে। সরকার নির্ধারিত আশ্রয়স্থল ছাড়া শরণার্থীদের অন্যত্র গমন আইনবিরুদ্ধ।’
বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপের কথা জানিয়ে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার শুরু থেকেই মায়ানমাররের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক ও জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আঞ্চলিক কূটনৈতিক তৎপরকার ফলে ভারত ও চীনসহ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো উদ্বাস্তু সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে উদ্যোগী হয়েছে।’
রাজনৈতিক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ভয়াবহ এই মানবিক বিপর্যয়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে শান্তির দূত হয়ে ছুটে গেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার কক্সবাজারের উখিয়া ও কুতুপালং শিবিরে মায়ানমার নাগরিকদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন তিনি। শরণার্থীদের শিবিরগুলোতে ছুটে গেছেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও রাষ্ট্রের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।’
বেশকিছু বিষয় সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চলমান জঙ্গি দমন প্রক্রিয়াকে আড়াল করার অপপ্রয়াসের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। উদ্বাস্তু সমস্যাকে ব্যবহার করে শেখ হাসিনার বৈধ সরকারের বদলে একটি অস্বাভাবিক সরকার প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত প্রতিরোধ করতে হবে। সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টির উস্কানি রোধ করতে হবে। সম্প্রদায়িক জিগির তোলার মধ্যদিয়ে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘাত ছড়ানোর ষড়যন্ত্র কঠোরভাবে দমন করতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা জাতিগত সমস্যা, কোনো ধর্মীয় সমস্যা নয়। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদে ফেরত পাঠানো এবং নিরাপত্তা মর্যাদার সাথে তাদের নিজ দেশে পুনর্বাসনই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান।’
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭