রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় আবারো ঐক্যের ডাক ফখরুলের

রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোনো ‘দলীয় রাজনীতি’ নয়, ‘জাতীয় ঐক্যে’র মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আবারো সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

২৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই আহ্বান জানান। সার্কিট হাউজ সড়কে জেলা কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।

ফখরুল বলেন, ‘ত্রাণ নিয়ে বা রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে আমরা কোনো দলীয় রাজনীতি করতে চাই না। আমরা চাই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান। আমরা দেখছি, সরকারের এই ব্যাপারে কোনো আন্তরিকতা নেই। তারা এই সমস্যা সমাধান কতটুকু সঠিকভাবে করতে চায় সেই ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। অনেকে অনেক কথা বলছে, নোবেল পুরস্কারের কথা বলেছেন, অন্যান্য সুবিধার কথা বলছেন। আমরা সেই কথা বলতে চাই না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বলতে চাই, আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যা সমাধান করুন। বিভেদ না করে, বিভক্তি না এনে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশের সব অভ্যন্তরীণ শক্তিকে এক করে মিয়ানমারের চাপিয়ে দেয়া এই যে সংকট, এই সংকট মোকাবেলায় একটা জাতীয় ঐক্যের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন। এটাই হচ্ছে আমাদের আহ্বান।’

একই সঙ্গে মায়ানমারকে সমর্থনকারী দেশ রাশিয়া, চীন ও ভারতে বিশেষ দূত পাঠানোর পরামর্শ দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘তাদেরকে (রাশিয়া, চীন, ভারত) পরিস্থিতি বুঝিয়ে এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। আমরা এই কথা বলেছি, প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীকে ভারত, চীন ও রাশিয়া যাওয়া উচিত তারা যেন কোনো নেতিবাচক অবস্থান না নেন।’

ফখরুল বলেন, ‘আমরা একথাও বলেছি যে, নিরাপত্তা পরিষদের আলোচনায় তখন যেন রাশিয়া ও চীন ভেটো দিতে না পারে সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বানও জানিয়েছি। এজন্য বিশেষ দূত পাঠানোর কথাও বলেছি।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা চাই, যারা প্রাণভয়ে পালিয়ে আসছেন তাদেরকে সাময়িক আশ্রয় দেয়া এবং তাদেরকে যেন নাগরিকত্ব দিয়ে সসন্মানে নিজের দেশে নিয়ে যায় সেজন্য মিয়ানমার সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা। এই ইস্যুতে বিশ্বজনমত সৃষ্টির জন্য জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এটাই আজ প্রধান বিষয়।’

ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্য যে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ মন্ত্রীরা এমন এমন কথা বলেছেন, যার প্রয়োজন নেই, এটাকে নিয়ে বির্তক সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই। তাদের কথায় আমরা দুঃখিত হচ্ছি, দেশের মানুষও দুঃখিত হচ্ছে।’

২৫ আগস্ট থেকে রাখাইনে মায়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান ও রোহিঙ্গাদের গণহত্যার ঘটনার পর পালিয়ে আসার নারী-শিশুদের সীমান্তে বাধা দেয়ায় সরকারের নেয়া ভূমিকারও সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের পক্ষে দেশে ও বিশ্বজনমত সৃষ্টি হলে পরেই সরকার তার অবস্থান পাল্টায়।’

অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সরকার কোনো ত্রাণ দিচ্ছেন না। বিদেশ থেকে যেসব ত্রাণ সামগ্রী আসছে সেগুলো বিলি-বন্টন করা হচ্ছে। সারাদেশ থেকে সাধারণ মানুষ যেসব ত্রাণ সামগ্রী জমা দিচ্ছে সেগুলো বিলি বন্টন করা হচ্ছে।’

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে বিএনপি ২২ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে সরকারের বাধা প্রদানের ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা পরে ওইসব ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। এখন একটা কনট্রোল রুমও খোলা হয়েছে।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেনাবাহিনী কর্মপরিধি বৃদ্ধির সেনাবাহিনীর সম্পৃক্ততা ও তার কর্মপরিধি বাড়ানোর দাবি করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ত্রাণ কাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকুন। আমরা বলেছি, সেনাবাহিনী কর্মপরিধি আরও বিস্তৃত করা প্রয়োজন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েছি, পত্রিকায় গতকাল (বুধবার) এসেছে প্রায় ১৪ হাজার সেড (আশ্রয়স্থল) নির্মাণ করা হবে তাদের (রোহিঙ্গা) আবাসনের জন্য। এরমধ্যে চার হাজার সেনাবাহিনীকে দেয়া হচ্ছে বাকি ১০ হাজার সরকার তৈরি করবে। আমরা জানি যে এই সরকার কীভাবে নির্মাণ করবে সেটা সম্পর্কে দেশবাসী ধারণা তৈরি হয়ে গেছে। আমরা দাবি জানাতে চাই, সেনাবাহিনীকে এই কাজের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নের জন্য নিয়োগ দেয়া হোক।’

গত মঙ্গলবার বিকালে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য বিএনপি মহাসচিব কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে কক্সবাজার যান। তিনি উখিয়া, টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরসমূহ পরিদর্শন ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। উখিয়ায় সেনাবাহিনী ত্রাণভাণ্ডারে দলের পক্ষ থেকে দুই ট্রাক ত্রাণ দেন মির্জা ফখরুল।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সারোয়ার, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফর রহমান খান কাজল, শরীফুল আলম, হারুনুর রশীদ হারুন, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, শায়রুল কবির খান, জেলা সভাপতি শাহজাহান চৌধুরীসহ জেলা নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আজকের বাজার : এলকে/এলকে ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭