জাতিসংঘ সংস্থাগুলো এবং এনজিও অংশীদাররা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের এবং সেই সঙ্গে আশ্রয়দাতা দেশের স্থানীয় সম্প্রদায়ের চাহিদা মেটাতে মঙ্গলবার ৮৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তা চেয়ে ২০২০ জয়েন্ট রেস্পন্স প্ল্যান (জেআরপি) অনুযায়ী তহবিল সংগ্রহের অভিযান শুরু করেছে। রাজধানীতে আজ ইউএনএইচসিআর এর একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বিগত বছরগুলোর সাফল্যের প্রেক্ষিতে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে মিয়ানমারের আনুমানিক ৮ লাখ ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী ওই অঞ্চলের ঝুঁকিপূর্ণ ৪ লাখ ৪৪ হাজার বাংলাদেশীর জরুরি প্রয়োজন মেটাতে ৮৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮৭ কোটি ৭০ লাখ মার্কিন ডলার) তহবিল সংগ্রহের জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। জাতিসংঘ সংস্থাটি আরো জানায়, বাংলাদেশ সরকার ও এর জনগণ মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাগত জানিয়ে তাদের প্রতি অসাধারণ সংহতি প্রদর্শনের নজির স্থাপন করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর অধিকাংশ রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার তৃতীয় বছর। ২০১৭ সালে এরা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসে। রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও সম্মান এবং স্থানীয় বাংলাদেশীদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য, সুরক্ষা, শিক্ষা, এলাকা ব্যবস্থাপনা, জ্বালানী ও পরিবেশ সবদিক থেকেই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে। ইউএইচসিএনআর জানায়, ‘রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যেতে যায়, এটা স্পষ্ট। কিন্তু তারা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা সেখানে নিরাপদ হলে এবং তাদের মৌলিক চাহিদা ও সেবা সমূহ নিশ্চিত হলে, সর্বোপরি মিয়ানমারের নাগরিকত্ব পেলেই তারা সেখানে ফিরে যাবে।’ জাতিসংঘ জানায়, ২০২০ জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের সহায়তা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারে তাদের টেকসই ও নিরাপদে ফিরে যাবার জন্যও জরুরি।
শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ হাই কমিশনার ফিলিপো গ্রান্ডি বলেন, ‘সেই পরিবেশ না আসা পর্যন্ত, বিশ্ব সম্প্রদায়কে রোহিঙ্গা ও তাদের আশ্রয় দানকারী বাংলাদেশী মানুষের পাশে দাঁড়াতেই হবে।’ তিনি রোহিঙ্গাদের কষ্টের কথা শুনার ও তাদের আশা ও ভবিষ্যতের স্বপ্নকে বুঝার ওপর জোর দেন। ২০২০ জেআরপি সেই সব স্থানগুলো দৃঢ়ভাবে চিহ্নিত করেছে, যে সব ক্ষেত্রে স্থানীয় সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে জনসেবা অবকাঠামো, টেকসই জীবনযাত্রা, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জ্বালানী অন্যতম। আইওএম মহাপরিচালক অ্যান্টোনিও ভিটোরিনো বলেন, ‘যখন থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ২০১৭ সালের আগস্ট মাসের ওই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, আমরা তখন থেকেই এই আশ্রয়হীন রোহিঙ্গারা যেন নিজ ভূমিতে ফিরে যেতে পারে সে জন্য একটি টেকসই, সম্মানজনক বাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষে এবং আশ্রয়দানকারী স্থানীয়দের অর্থবহ সহায়তা দিতে সরকারের সাথে একটি দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগে কাজ করার বিষয়টি দেখভাল করার ব্যাপারে অঙ্গীকার করি।’ ২০২০ জেআরপিএস মূলত অবকাঠামো, জীবিকা, জীবিকা ও পরিবেশের দিকে নজর দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের মিয়ানমারের স্কুলের কারিকুলাম ব্যবহার করার অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২০ জেআরপিও মানবিক অংশীদারদের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণের সুযোগটি গ্রহণ করার অনুমতি দিবে। শিবিরগুলো এখন নিরাপদ। এগুরোর আশপাশে আগের তুলনায় উন্নত পথঘাট, নালা, সেতু ও দোকানপাট হয়েছে। এছাড়াও ৩ হাজারের বেশি প্রশিক্ষিত ও সুসজ্জিত রোহিঙ্গা শরণার্থী জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত। ২০১৯ সালে জেআরপি ৯২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সহায়তার আবেদন জানিয়েছি। এর বিপরীতে তার ৭০%-এর সামান্য কিছু বেশি অর্থাৎ ৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সংগ্রহ হয়েছিল। তথ্য-বাসস
আজকের বাজার/আখনূর রহমান