লক্ষ্যমাত্রার ৩ গুণ বেশি মাছ উৎপাদন হচ্ছে যশোরে

যশোরে মাছ চাষে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার, অভয়াশ্রম তৈরি, নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিসহ নানান পদক্ষেপে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার তিন গুণ বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যন্তরসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ইতোমধ্যে প্রায় ২৯৪ কোটি টাকার রাজস্বও আয় করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া গত ছয় বছরে জেলাতে প্রায় ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মাছের উৎপাদন বেড়েছে।

যশোর মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে যশোরে মাছের চাহিদা ছিল ৬৫ হাজার ৫৮৯ মেট্রিক টন। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাছ উৎপাদন হয়েছে যশোর সদর উপজেলায়। এখানে ২৯ হাজার ৭২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। এছাড়া মনিরামপুরে ৩৮ হাজার ৩৪০, কেশবপুরে ৩৩ হাজার ৯৯৯, ঝিকরগাছায় ৩১ হাজার ১০৫, অভয়নগরে ২৯ হাজার ৭৯১, শার্শায় ২৫ হাজার ৮৩৮, চৌগাছায় ১৭ হাজার ৯৩১ ও বাঘারপাড়ায় ৮ হাজার ৭৮৩ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে।

সূত্র জানায়, জেলায় মাছ উৎপাদনের রেণু পোনার চাহিদা ছিল ১৮ দশমিক ৯০ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৬৯ দশমিক ২৮ মেট্রিক টন। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রেণু পোণা উদ্বৃত্ত থেকেছে ৫০ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন। এছাড়া মনোসেক্স তেলাপিয়ার চাহিদা ছিল ২৮৭ লাখ পিস। সেখানে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ১১৮ লাখ পিস। যা চাহিদার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি।

জেলা মৎস্য অফিস জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো এক লাখ ৭৯ হাজার ৯৯৮ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দুই লাখ পাঁচ হাজার ৮১১ মেট্রিক টন, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে দুই লাখ ২০ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে দুই লাখ ২১ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে দুই লাখ ২২ হাজার ১৬৮ মেট্রিক টন, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুই লাখ ২৩ হাজার ৭৯২ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়েছিলো। চলতি অর্থবছরে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৮৫৮ দশমিক ১৪ মেট্রিক টন।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, বর্তমানে যশোরে ৭২ হাজার ১৫৫ দশমিক ১৭ হেক্টর জলায়তনে মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এখানে উৎপাদিত রুই, কাতল, মৃগেল, বাগদা, গলদা চিংড়ি, পাঙ্গাস, শিং, মাগুর ও কৈ মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করা হয়েছে।

এছাড়াও ৯ হাজার ৩০১ দশমিক ৮৯ মেট্রিক টন মাছ ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এতে তিন কোটি ৬৭ লাখ ৭০ হাজার ১৫৫ মার্কিন ডলার রাজস্ব এসেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯৪ কোটি টাকা। তাছাড়া ভারত, মধ্যপ্রাচ্যের পর বর্তমানে ইউরোপের বাজার ধরার চেষ্ট চলছে।

মৎস্য কর্মকর্তা আরও জানান, অনেক আগে থেকেই দেশের রেণু পোণার চাহিদা সিংহভাগই উৎপাদন হয়ে আসছিল যশোরে। তাছাড়া জেলায় অনেক ছোট-বড় বিল, বাওড়, নদী নালারাও অবস্থান রয়েছে। বিষয় দুটিকে সামনে রেখে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে উৎপাদন ও বাজারজাতকরণকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা যেমন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করেছি, তেমনি তাদেরকে দক্ষ করেও গড়ে তুলেছি। সেই সাথে উন্নতজাত সরবরাহ করা হয়েছে। আর চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে অত্যাধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি। যার সুফল এখন মিলছে। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান