লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ছিটমহল দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা হাসপাতালে মিলছে না চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত এ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজারের বেশি মানুষ। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবার আধুনিক যন্ত্রপাতি ও অবকাঠামো থাকলেও কার্যক্রম সচল নেই।
১৯৮৫ সালের পর দহগ্রাম ও আঙ্গোরপোতা ছিটমহল পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন নামে অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনবিঘা করিডোরের মাধ্যমে মূল ভূখন্ডের সঙ্গে সম্পৃক্ত এ দহগ্রাম। এ ইউনিয়ন বাসীর জন্য ১৯৯১ সালে নির্মিত হয় দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালটি। ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে হাসপাতালটি পরিচালিত হয়। হাসপাতালটিকে ২০০১ সালে রাজস্ব খাতে আনা হলে নেমে আসে জনদুর্ভোগ।
২০১১ সালের অক্টোবরে হাসপাতালটিতে ইনডোর ও আউটডোর চিকিৎসা সেবা চালু হয়। প্রথম কয়েক মাস ভালোভাবে হাসপাতালটির কার্যক্রম চললেও পরবর্তী সময় প্রায় অচল হয়ে পরে হাসপাতালটি। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। বর্তমানে ইনডোর চিকিৎসা সেবা বন্ধ রয়েছে। আউটডোর ও জরুরী চিকিৎসা সেবা চালু থাকলেও তা নামে মাত্র।
এ ইউনিয়নের কেউ অসুস্থ হলে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হয়। হাসপাতালটির মূল ফটকে প্রায় সময় তালা ঝুলানো থাকে। হঠাৎ কখনো খোলা থাকলেও ভিতরে গিয়ে দেখা যায় হাসপাতালটির মাঠে গরু ও ছাগলের বাসস্থান। হাসপাতালটির ভেতরে অধিকাংশ সময়ে দরজায় তালা ঝুলানোর কারনে ভূতুড়ে পরিবেশের তৈরি হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ইনডোর চিকিৎসা সেবা বন্ধ থাকার কারণে আধুনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলছে।
চলতি বছরের জুলাইয়ের তথ্যমতে হাসপাতালটি কার্যক্রম সচল রাখতে ৪ জন মেডিকেল অফিসার প্রয়োজন হলেও সেখানে কর্মরত আছেন ১জন। ৪জন সহকারী নার্স কর্মরত থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। ফার্মাসিস্ট পদে একজন থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট পদে রয়েছে জনবল শূন্য। অপরদিকে আয়া পদ শূন্য সেখানে প্রয়োাজন ২ জন। অফিস সহায়ক পদে দুইজন থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে কেউ কর্মরত নেই। ক্লিনার পদে দুইজন প্রয়োাজন হলেও কর্মরত আছেন ১জন।
সবমিলে হাসপাতালটির বিভিন্ন পদে ১৪ জনবল সংকট রয়েছে। যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। স্থানীয়দের অভিযোগ, একজন চিকিৎসক দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্টাফ না থাকার কারণে চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত এ ইউনিয়নের মানুষ।
দহগ্রাম ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা হাসপাতালে চিকিৎসা হয়না ডাক্তার আসে দুই ঘন্টা থেকে চলে যায়।
বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হাসপাতালে যে যন্ত্রপাতি আছে সেগুলো যদি চালু থাকে তাহলে আমাদের পাটগ্রাম যাওয়া লাগত না। এখানেই চিকিৎসা পাইতাম।
দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা ২০ শয্যা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নূর আরেফিন প্রধান জানান, এ হাসপাতালটি প্রত্যন্ত এলাকায় কিন্তু হাসপাতালের কার্যক্রমের মধ্যে শুধু আউটডোর চালু আছে ইনডোর চালু নাই। এখানে জনবলের অভাবের কারণে ইনডোর চালু হচ্ছে না। ইনডোর পরিষেবা খুব জরুরী দরকার। হাসপাতালটি শহর থেকে অনেক দূরে। জেলা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে। এখানে জনবল জরুরি ভাবে দেওয়া উচিত। ওষুধ মোটামুটি পাওয়া যায়।
পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ডা. দেবব্রত কুমার রায় বলেন, দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা হাসপাতালে একজন মাত্র চিকিৎসক আছে। একজনের পক্ষেতো ইনডোর চালু রাখা সম্ভব না। চিকিৎসক ও নার্সদের সংখ্যা যদি সম্পূর্ণভাবে ফিলাপ করা যেত তাহলে হয়তো চালু করা যেত। অ্যাম্বুলেন্স একটি আছে চালকের পদ নেই। দীর্ঘদিন পরে থাকার কারণে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাটারি ও টায়ার নষ্ট হয়ে গেছে। ঠিকঠাক করে আবারো চালু রাখার ব্যবস্থা করছি। (বাসস)