বর্তমান সময়ে শূন্য থেকে শুরু করে প্রতিকূল পথ ধরে কঠোর পরিশ্রমে অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণ সফল হয়েছেন, উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জেলার সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের খাতাপাড়া গ্রামের উদ্যোক্তা মৃণাল চন্দ্র রায় (পঙ্কজ) তাদেরই একজন। তার বর্তমান বয়স ৩৬ বছর। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা।
ইতোমধ্যে তিনি ড্রাগন ফল, আম, কমলার বাগানের পাশাপাশি ভ্যানিলা চাষেও সফলতা কুড়িয়েছেন। তিনি গত ৫ বছর ধরে গড়ে তোলা বাগান থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করেছেন। তার সম্পূর্ণ বাগানটি রয়েছে দুই একর জমি জুড়ে। মৃনাল ওই এলাকার স্বর্গীয় নরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাত ভাই বোনের মধ্যে মৃনাল সবার ছোট। সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে রাজারহাটের মীর ইসমাইল ডিগ্রী কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে চাকরির পিছনে অনেক সময় ব্যয় করেছেন। চাকরি না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন তিনি।
এরপর তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে থেকে কৃষি উদ্যোক্তাদের নানান প্রজেক্ট সম্পর্কে অবগত হয়ে স্বল্প পরিসরে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। চার বছর আগে নাটোরে একদিন এক উদ্যোক্তার ড্রাগন বাগান দেখতে যান । সেখানে তিনি একটি বাগানেই হরেক রকমের ফল দেখতে পান। অস্ট্রেলিয়ান জাতের কমলা , ড্রাগন ও বেদানা বাগান দেখে আরো অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেও আবারো ব্যাপক আকারে চাষের পরিকল্পনা করেন। তার নিজের ড্রাগন ফলের বাগানের আয় থেকে সঞ্চিত ২ লাখ টাকা দিয়ে কমলা, আম ও ভ্যানিলা গাছ রোপন করেন। সাথী ফসল হিসেবে বাগানে ঠাঁই পেয়েছে বেদানা। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে যেয়ে পরামর্শ ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে তার বাগানের কাজে লাগিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। চলতি মৌসুমে তিনি দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মৃণাল চন্দ্রের বাগানে বারোমাসি আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। রয়েছে কমলা বাগান,ড্রাগন,বেদানা, ভ্যানিলা । দেখা যায়, বাগানে বারোমাসি আমগুলোর বেশি ভাগই পেকে গেছে। ইতোমধ্যে তিনি আম বাজারজাত করা শুরু করেছেন। বাগানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক মজুরি খাটছেন।বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উৎসাহি তরুণ ও চাষিরা তার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন ও পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে আম ও কমলা চাষে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। বাজারে ভেজাল সার ও কীটনাশকের সিন্ডিকেট দূর করার দাবি জানিয়েছেন মৃনাল।
মৃনাল বাসস’কে বলেন, বাজারে বারোমাসি আম ও কমলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করা নিয়ে চিন্তা নাই। ইতোমধ্যে বাগানে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছর প্রতি মণ আম ৮ থেকে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৫ লাখ টাকার আম ও কমলা বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, আগামীতে ২-৩ বিঘা জমিতে ভ্যানিলা বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অত্র এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
জেলা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ বাসস’কে জানায়, উদ্যোক্তা মৃনালের ড্রাগন ফলের বাগানসহ অন্যান্য ফলের বাগানগুলো আমরা সরেজমিনে দেখে কার্যকারী পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, মৃনালের মত তরুন উদ্যোক্তাদের আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রত্যেকটি এলাকায় যদি এরকম উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাহলে বেকারত্ব যেমন দূর হবে সেই সাথে কৃষি ক্ষেত্রেও তা সফলতা বয়ে আনবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইফুল আরিফিন বাসস’কে জানান, মৃনাল একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি সমগ্র জেলার কৃষকদের জন্য উদাহরণ স্বরুপ। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, যে কেউ বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে অনেক নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এ অঞ্চলে। এটি ইতিবাচক কৃষির উদাহরণ বহন করে বলেও মনে করেন এ কৃষিবিদ। (বাসস)