লাল শাকের বীজ উৎপাদন করে স্বাবলম্বী চুয়াডাঙ্গার লাইলা

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র মোছাম্মৎ লাইলা খাতুন। হঠাৎ করেই স্বামীর অসুস্থতার পর একেবারে দিশেহারা হয়ে পড়েন। সাত সদস্যের পরিবার কিভাবে চালাবেন ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছিলেন না। আবার এরমধ্যে স্বামীর চিকিৎসার জন্যও অনেক টাকা দরকার। ইতোমধ্যে কয়েক শতাংশ জমি বিক্রী করে চলেছে চিকিৎসা খরচ। কোন কিছুতেই যেন খেই পাচ্ছিলেন না লাইলা খাতুন। কোনভাবেই যেন তার সংসার চলছিলো না।

পরিবারের যখন এমন অবস্থা, তখন লাইলার সাথে দেখা হয় স্থানীয় এক এনজিও কর্মীর সাথে। সেই এনজিও কর্মী তাকে পরামর্শ দেন এলাকার অন্যান্য কৃষকের মত শাকের বীজ উৎপাদন করে তা বিক্রী করার জন্য। পরামর্শটি পছন্দ হয় তার। দুই ছেলেকে নিয়ে নিজেদের জমিতে শুরু করেন লাল শাকের বীজ উৎপাদন। আর এতেই বদলে যায় তার পুরো পরিবারের ভাগ্য। এ এলাকায় প্রচুর শাক-সব্জি উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার শাক-সব্জি যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

শুধু লাইলা খাতুন নয়, জীবননগর উপজেলার অনেক কৃষকের ভাগ্য বদলে গেছে এই শাকের বীজ উৎপাদনে।

স্থানীয় কৃষি দপ্তরের সূত্র মতে, এই উপজেলায় কৃষি খাতে নিরব বিপ্লব ঘটেছে। এখানকার কৃষকরা এক সময় সাধারনত ইরি-বোরো আর আমন ধান চাষের মধ্যে তাদের কৃষিকাজ সীমাবদ্ধ রাখত।

এর পাশাপাশি তারা অল্প শাক-সব্জির চাষ করত। কিন্তু এখন স্থানীয় অনেক কৃষকই আধুনিক পদ্ধতিতে নানা জাতের লাল শাক উৎপাদন করছে। আর সেখান থেকে বীজ উৎপাদন করে আয় করছে লাখ লাখ টাকা। লাভের মুখ দেখায় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই লাল শাকের বীজ উৎপাদন। এছাড়াও এই বীজ উৎপাদনে খুব বেশি সময়ও লাগেনা। যার করনে কৃষকরা অল্প সময়ে অধিক মুনাফা পাচ্ছে। আবার এতে বেশি পুঁজিও লাগেনা।

জানা যায়, জীবননগর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর, অনন্তপুর, বাঁকা, মুক্তারপুর, পুরন্দপুর, আব্দুলবাড়িয়া এবং কাশিপুরসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ১৩০ হেক্টর জমিতে এ বছর উচ্চফলনশীল লাল শাকের আবাদ করা হয়েছে। পরে এসব শাক থেকে বীজ উৎপাদন করা হবে।

নিশ্চিন্তপুর এলাকার কৃষক আব্দুল আলীম বলেন, আমিও আগে আমার জমিতে শুধু ধান চাষ করতাম। এছাড়া বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন সব্জির চাষ করতাম। কিন্তু এভাবে যে লাল শাকের বীজ উৎপাদন করে লাভবান হওয়া যায়, তা কখনো ভাবিনি। এলাকার অন্য কৃষকদের দেখে আমিও বীজ উৎপাদন শুরু করি। যদিও শুরুতে শুধুমাত্র এক বিঘা জমিতে চাষ করেছিলাম, এখন তিন বিঘা জমিতে চাষ করি। পাশাপশি ধান চাষও করছি অন্য জমিতে।

তিনি বলেন, এই বীজ উৎপাদনে সুবিধা হচ্ছে এতে বেশি সময় লাগেনা। আবার পুঁজিও খুব কম। কিন্তু লাভ অনেক বেশি।

তিনি বলেন, মূলত অগ্রহায়ণ মাসে জমি নিড়ানি ও সার দিয়ে জমিকে শাক চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। জমিতে বীজ বপনের মাত্র দশ থেকে পনের দিনের মাথায় চারা গজায়। আর চার মাসের মাথায় জমি থেকে গাছ কেটে বীজ সংগ্রহ করা হয় এবং প্রতিবিঘা জমিতে ৬ থেকে ৮ মণ বীজ উৎপাদিত হয়।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, লাল শাকের বীজ উৎপাদন বদলে দিয়েছে গ্রামীণ অর্থনীতির চিত্র। এসব গ্রামের কৃষকরা এখন এই বীজ উৎপাদনে অনেক বেশি অভিজ্ঞ। এছাড়া কৃষিকাজের ক্ষেত্রে তাদের যে ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তার সবটুকুই আমাদের কাছ থেকে পায়।

তিনি বলেন, এই উপজেলার মধ্যে আন্দুলবাড়িয়া এলাকার জমিগুলো সবজি চাষের জন্য বেশি উপযোগী। এখানকার চাষিরা সবজি চাষের ব্যাপারে বেশ অভিজ্ঞও।

আরেক কৃষক জোবেদা বলেন, জমি তৈরি থেকে বীজ সংগ্রহ পর্যন্ত প্রতিবিঘা জমিতে খরচ হয় চার থেকে দশ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত বীজ বিক্রি হয়ে থাকে পঁয়ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা পর্যন্ত। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান