লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা থেকে উন্নতমানের কম্পোস্ট সার তৈরি

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুবিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক লেয়ার মুরগির বিষ্ঠা থেকে স্ট্রুভাইট সমৃদ্ধ এক ধরনের উন্নতমানের কম্পোস্ট তৈরি করেছেন, যা কৃষিক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, এ কম্পোস্ট ব্যবহার করে পাকচং ঘাস ও ভুট্টার ফলন পূর্বের তুলনায় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআআইসি)তথ্যমতে বাংলাদেশ বাণিজ্যিকভাবে প্রায় ১১ কোটি লেয়ার মুরগি পালন করা হয়।

এতে বিপুল সংখ্যক মুরগির বিষ্ঠার সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এটি পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।বিষ্ঠা থেকে নির্গত আ্যামোনিয়া  ও অন্যান্য দূষণ

উৎপাদন বায়ু ও পানির গুণগত মানের অবনতি ঘটাচ্ছিল। এ সমস্যার সমাধানে বাংলা দেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু  বিজ্ঞান বিভাগেরএকদল বৈজ্ঞনিক এগিয়ে আসেন ।

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ৩ বছর ধরে গবেষণা প্রকল্পটি চলমান রয়েছে। আরও পরীক্ষার মাধ্যমে এর কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

পশুবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মোখলেছুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত এ গবেষণায় পিএইচডি গবেষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন মো. মোর্শেদ হাসান মোস্তফা। গবেষণা কার্যক্রমের সঙ্গে আরও যুক্ত ছিলেন অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেন সুমন। গবেষকদল লেয়ার মুরগির বিষ্ঠার সাথে কাঠের গুঁড়া ও ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড মিশিয়ে এরোশনের মাধ্যমে এ বিশেষ ধরনের কম্পোস্ট তৈরি করেছেন যা স্ট্রুভাইট সমৃদ্ধ।

সম্প্রতি পশুবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজিত পিএইচডি সেমিনারে এসব তথ্য জানান প্রধান গবেষক ড. মো. মোখলেছুর রহমান। ওই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন ইউজিসি অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরী, পশুবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রহুল আমিন, অধ্যাপক ড. মো. আবুল হাশেম প্রমুখ।

প্রধান গবেষক ড. মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, স্ট্রুভাইট সমৃদ্ধ এ কম্পোস্ট ব্যবহার করলে ভুট্টা ও পাকচং ঘাসের ফলন প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় বেশি হয়। স্ট্রুভাইট এক ধরনের দানাদার ফসফেট খনিজ যা ম্যাগনেসিয়াম অ্যামোনিয়াম ফসফেটের সমন্বয়ে তৈরি। এটি মাটির উর্বরতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব একটি সমাধান হতে পারে।’

পিএইচডি গবেষক মো. মোর্শেদ হাসান মোস্তফা বলেন, ‘এ কম্পোস্ট ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরতা কমবে। তাছাড়া, মুরগির বিষ্ঠা ব্যবস্থাপনার একটি টেকসই সমাধান হতে পারে এটি।’

তিনি এ কম্পোস্টের সম্ভাবনা নিয়ে আরও জানান, ‘এ কম্পোস্ট বিপুল পরিমাণ মুরগির বিষ্ঠার সঠিক ব্যবস্থাপনা পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’ গবেষকরা আশা করছেন, এ নতুন কম্পোস্ট প্রযুক্তি দেশের কৃষকদের জন্য একটি কার্যকর ও লাভজনক সমাধান হবে। (বাসস)