শীত এলেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকে দেখা মেলে হাজারো অতিথি পাখি। সুদূর সাইবেরিয়া অঞ্চলের কনকনে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে অস্থায়ীভাবে এ পাখিগুলো অবস্থান নেয় লেকে। কিন্তু এবছর হতাশাজনকভাবে ভিন্ন এ চিত্র।
শব্দদূষণ ও পাখি দেখার জন্য মানুষের ভীড়ের কারণে পরিযায়ী পাখিরা জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাস থেকে চলে যাচ্ছে। লেকের পাশে গাড়ি পার্ক করা ও চলাচলের কারণে শব্দদূষণ সৃষ্টি হচ্ছে। পাশাপাশি পাখি দেখতে আসা আগ্রহী দর্শকদের ভিড়েও লেকের নিরবতা ভাঙছে।
পরিযায়ী পাখিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইটি লেক ছেড়ে নগরীর মিরপুরের বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রের লেকে আশ্রয় নিচ্ছে। এ ব্যাপারে আতঙ্ক প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার- শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
সাধারণত শীতের শুরুতে এই পরিযায়ী পাখিরা চিরসবুজ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। পৃথিবীর উত্তর গোলার্ধের অতিরিক্ত শীত থেকে বাঁচতে মধ্য মার্চ পর্যন্ত এখানেই বাসা বাঁধে তারা।
অন্যান্য বছরের মতো অতিথি পাখিরা মাইলের পর মাইল উড়ে শীতের শুরুতেই জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসে পৌঁছে। তবে পরবর্তীতে দেখা যায়, অতিরিক্ত ভিড় ও গাড়ি চলাচলের কারণে সৃষ্ট শব্দদূষণে অনেক পাখি লেক ছেড়ে চলে গেছে।
প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও জাহানারা ইমাম হলের পাশের লেকটি অতিথি পাখির জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে খুব কমই দেখা গেছে পাখিদের।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এর জন্য অতিরিক্ত দর্শকের ভিড় ও ক্যাম্পাসের লেকে অধিক গাড়ির চলাচলকে এর কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনাকে দায়ী করেছে। আবার অনেকে ক্যাম্পাসে বিশাল পরিমাণে বহিরাগতদের ভিড়কে দায়ী করছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক ও খ্যাতনামা পাখি বিজ্ঞানী ড.কামরুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিদিন বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে বিশাল সংখ্যক দর্শক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ভিড় করেন। তারা লেকের পাশে তাদের গাড়ি পার্ক করেন যা প্রায়সময় ক্যাম্পাসের মূল রাস্তায় চৌরঙ্গি পয়েন্ট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবন পর্যন্ত যানজট তৈরি করে।
তিনি বলেন, এধরণের পরিবেশ পাখিদের শান্তিপূর্ণ বাসের জন্য উপযুক্ত নয়।
জাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের আরেকজন অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, তারা ইতোমধ্যেই ব্যাপারটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। বহিরাগত ও গাড়ি চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপের জন্য প্রশাসনকে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
অত্যধিক কচুরিপানায় ভরা মিরপুরের বোটানিকাল গার্ডেনের পাশের লেকটিও অতিথি পাখিদের জন্য উপযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার আবু বকর সিদ্দিকী একটি বার্তা সংস্থা বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নেবে এবং যত দ্রুত সম্ভব ক্যাম্পাস এলাকা অতিথি পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে নিশ্চিত করবে।
জাবির প্রো ভিসি আমির হুসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ঝামেলা কমানোর জন্য এরমধ্যে ক্যাম্পাস এলাকায় গাড়ি ঢোকা নিয়ে কড়াকড়ি জারি করেছে প্রশাসন।
আজকের বাজার: এলকে/ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭