এমপিওভুক্তির দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের মতো আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। তিন দিনের অনশনে এ পর্যন্ত ৩৫ জন অসুস্থ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গত সোমবার (২৫ জুন) থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের উত্তর পাশে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে 'নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। বুধবার (২৭ জুন) ছিলো কর্মসূচির তৃতীয় দিন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রেস ক্লাবের উত্তর পাশে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এদের মধ্যে অনেকের শরীরে স্যালাইন লাগানো রয়েছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিকেও পরোয়া করছেননা তারা।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা জানান, দেশের বিভিন্ন জেলার নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রাখাসহ তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বেন না, এজন্য শপথ গ্রহণ করেছেন তারা।
শিক্ষকরা তাদের বক্তব্যে বলেন, গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতিতে আমরা এমপিওভুক্তির দাবিতে রাজপথের আন্দোলন স্থগিত করেছিলাম। এরপরও আমরা বিভিন্ন কর্মসূচিতে আটকের শিকার হয়েছি।
সংগঠনটির নেতারা জানিয়েছেন, এবার স্বীকৃতি পাওয়া সবকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আশ্বাস প্রত্যাখ্যানের পর শিক্ষকদের এখন একটাই বক্তব্য—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে দাবি পূরণের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাদের অনশন চলবে। প্রয়োজনে আমরা জীবন দেবো। তবুও দাবি আদায় না করে ফিরবোনা।
আন্দোলনকারীরা বলেন, গত ১৬ দিন ধরে বিভিন্ন রকম কর্মসূচির পালন করার পর ২৫ জুন থেকে আমরা বাধ্য হয়ে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করা শুরু করেছি। আমরা অনশনরত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা গত ২০ থেকে ২৫ বছর আগে সরকারি বিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে শিক্ষকতা করে আসছি। কিন্তু শিক্ষকরা সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণে এক টাকাও বেতন পান না।
তারা বলেন, ৭ জুন জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ বাজেট প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রীও তার বক্তব্যে শিক্ষকদের গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী প্রহসনের এমপিও নীতিমালা করে শিক্ষকদের রাজপথে ঠেলে দিয়েছেন। এমপিওভুক্তির বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করেছেন। তাহলে আমরা যারা আগে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি তারা কী করবো?
দেশের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষকের জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত করুণ ও অবজ্ঞার। এ অবস্থায় আমরা নিজেদের পরিবারে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছি। যা আমাদের পাঠদানের দায়িত্ব থেকে বিরত রাখছে। এ কারণে গত ২৩ জুন থেকে দেশের নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কর্মসূচি বন্ধ আছে।
আন্দোলনরত শিক্ষকরা আরো জানান, এই আন্দোলন কর্মসুচি পালন করতে গিয়ে আমাদের ৩৫ জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ৭০২ নম্বর ওয়ার্ডের ফ্লোরে চিকিৎসাধীন। সেখানে ১২ জন শিক্ষক স্যালাইনরত অবস্থায় আছেন। এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ ও কোনো ধরনের আশ্বাসও দেয়নি।
নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ বিনয় ভুষণ রায় জানান, আমরা টানা ১৫ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও এখনও আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা গত ৩ দিন ধরে আমরণ অনশন পালন করছি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঘোষণা এলেই এ কর্মসূচি স্থগিত করা হবে।
জানা যায়, একই দাবিতে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাগাতার কর্মসূচি শুরু হয়। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের ডাকে টানা ওই অবস্থান ও অনশনের একপর্যায়ে গত ৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তার তৎকালীন একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান সেখানে গিয়ে আশ্বাস দিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।
এরপর সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বলা হয় আসন্ন অর্থবছরে নতুন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের যে বাজেট প্রস্তাব করেন, সেখানে তিনি নতুন এমপিওভুক্তির বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।
এবারের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের জন্য ৫৩ হাজার ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে খাতওয়ারি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ। বাজেট বরাদ্দে প্রাথমিক বিদ্যালয়, কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো নির্মাণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আজকের বাজার/এসএম/রাসেল