শরীয়তপুরে তীব্র শীতে বেড়েছে রোগী, হাসপাতালে জনবল সংকট

শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শরীয়তপুরে দুর্ভোগ বেড়েছে ছিন্নমূল মানুষের। প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে শরীয়তপুরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়লেও জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সূর্যের দেখা মেলে না দিনে একবারও। আগুন জ্বালিয়ে চলছে শীত নিবারণের চেষ্টা।

এ দিকে শীতবস্ত্রের দোকানে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে শীতের শুরু থেকেই। স্বল্প আয়ের মানুষেরা ফুটপাথে বা রাস্তার ধারে বসা পুরনো গরম কাপড়ের দোকানে ভিড় করছেন তাদের পছন্দের শীতবস্ত্র কেনার জন্য।ক্রমাগত তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় প্রচন্ড শীতে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী মানুষ।

স্থানীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের সূত্র অনুযায়ী, আগামী কয়েকদিন এই অবস্থা চলমান থাকতে পারে। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে ইউএনবির এ প্রতিনিধি দেখেন, শিশু ও বৃদ্ধরা ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ সর্দি, কাশি ও হাঁপানিতে আক্রান্ত হচ্ছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর উপচেপড়া ভিড় রয়েছে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু এবং তারা শীতের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। রোগীর স্বজনরা অনেকে অভিযোগ করছেন যে চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে তারা এখান থেকে পুরোপুরি চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. খাজা হুমায়ুন কবির বলেন, শীতের কারণে এসময় শিশুদের ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রোনকাইলেজিস্ট, শ্বাসকষ্ট এবং প্রচুর ডায়রিয়ার রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ সময় মায়েদের সচেতন থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. সুমন কুমার পোদ্দারের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুই বেশী ভর্তি হচ্ছে। বৃদ্ধ রোগীরা শ্বাসকষ্ট রোগে বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। শীতের শুরু থেকেই এ ধরনের রোগীর চাপ বেশি।

‘হাসপাতালে যে পরিমান বেড আছে তার চাইতে রোগী বেশি হওয়ায় স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম খেতে হচ্ছে,’বলেন তিনি।

১০০ শয্যা শরীয়তপুর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মুনীর আহমেদ খান জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে বলেন,‘মোট ৫১টি পদের মধ্যে ১৬টি পদে জনবল রয়েছে, বাকি ৩৫টি পদই শূন্য রয়েছে। এই স্বল্প জনবল দিয়ে আমাদের সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’

‘আমাদের এখানে ৭০ শতাংশ ওষুধ সরবারহ করতে পারি। বর্তমানে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে যাওয়ায় ওই বিভাগের কিছু ওষুধের ঘাটতি রয়েছে,’যোগ করেন তিনি।শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, জেলার গোসাইরহাট, ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, জাজিরা ও সদর উপজেলা জুড়ে নেমে এসেছে উত্তর পশ্চিমের কনকনে শৈত্যপ্রবাহ।

ঘন কুয়াশার কারণে যাবাহনগুলোকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

মহোর বাজার এলাকার ভ্যান চালক দেলোয়ার হোসেন ঢালী বলেন,‘ভ্যান চালিয়ে আমার সংসার চালাই। প্রচন্ড শীতের কারণে ভ্যান নিয়ে বের হতে পারিনি। যদি এ রকম শীত থাকে তাহলে আমার সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাবে।’গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্রির আব্দুর রহিম বলেন,‘প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে আমরা খেতে কাজ করতে যেতে পারছি না।’

শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক কাজী আবু তাহের বলেন, অন্যান্য জেলার মতো শরীয়তপুরেও তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে জন জীবন কিছুটা অচল হয়ে পড়েছে।‘অন্যান্য বছরের ন্যায় এ বছরও শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র সব উপজেলায় পৌঁছে দিয়েছি। উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা দুয়েকদিনের মধ্যেই শীত বস্ত্র বিতরণ করবে,’যোগ করেন তিনি। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আথনূর রহমান