জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের সংস্কারের উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অরাষ্ট্রীয় গোষ্ঠী (বিচ্ছিন্নতাবাদী, সন্ত্রাসী, বিদ্রোহী) থেকে যেভাবে হুমকি আসছে, তাতে শান্তিরক্ষীদের আরও সরঞ্জামের মাধ্যমে তাদের পর্যাপ্ত ক্ষমতা দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষীদের সেখানেই পাঠানো হয়, যেখানে কোনো শান্তি নেই। অরাষ্ট্রীয় দুর্বৃত্তদের দ্বারা তারা প্রতিনিয়ত হুমকিতে পড়ছে। অপরদিকে শান্তিরক্ষা মিশনে যারা কাজ করছে তারা বিভিন্ন দেশের ও বিভিন্ন মানের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। ফলে এর মাধ্যমে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম কঠিন ও বিপজ্জনক বটে।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদরদপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসে কর্তৃক আয়োজিত ‘অ্যাকশন ফর পিসকিপিং’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসেও উপস্থিতি ছিলেন। খবর ইউএনবি’র।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের (শান্তিরক্ষী) কার্যক্রমের সফলতার জন্য পর্যাপ্ত ক্ষমতা দেয়ার পাশাপাশি আধুনিক সরঞ্জাম দিতে হবে। তাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘অ্যাকশন ফর পিসকিপিং’ শান্তিরক্ষীদের কার্যক্রমের সফলতার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের যে প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্ট সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব রয়েছে। এটি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে যে ব্যয় হচ্ছে তা মূলত বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে যেসব জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে তার মূল্য হয় না। তাই এখানে বিনিয়োগ কমানো বা শান্তিরক্ষী কমানো বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেবে।
শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে অগ্রাধিকার জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে জাতিসংঘে ডেকেছে আর বাংলাদেশ সাড়া দেয়নি, এমনটা হয়নি কখনো। জাতিসংঘের এই শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে চলতি বছরে আমরা ৩০ বছর পূর্ণ হওয়া উদযাপন করছি।
শান্তিরক্ষায় অনেক বাংলাদেশি দায়িত্বরত অবস্থায় জীবন দিয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপরও আমরা শান্তিরক্ষী পাঠাতে পিছপা হইনি। আমরা যতটা সম্ভব খুব অল্প সময়ের মধ্যে শান্তিরক্ষীদের পাঠাতে পারি। আমরা তাদের উন্নতমানের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। যেকোনো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সাথে তারা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে। জনগণের সেবায় তারা হৃদয় দিয়ে কাজ করে।
বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা ও্ সুরক্ষা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই প্রয়োজন হবে বেসামরিক জনগণকে রক্ষায় তারা এগিয়ে যাবে।
উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শেষ পর্যন্ত আমাদের নিজস্ব উৎস দিয়ে মালিতে অবস্থিত সৈন্যদের মাইন সুরক্ষিত যানবাহন সরবরাহ করেছি। অন্যান্য মিশনগুলোতেও এটা অনুসরনের চেষ্টা করছি। আমাদের শান্তিরক্ষীদের পরিবেশগত বিপর্যয়ের দিকেও নজর দিতে বলা হয়েছে।
শান্তিরক্ষা কার্যকমে বাংলাদেশি নারীদের বেশি অংশগ্রহণের ব্যাপারে ব্যক্তিগত আগ্রহের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক কঙ্গোতে আমরা প্রথমবারের মতো আমাদের নারী হেলিকপ্টার পাইলটদের পাঠিয়েছি। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। জাতিসংঘ সদরদপ্তরে অথবা প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে আরও সিনিয়র শান্তিরক্ষী পাঠাতে পারলে আমরা গর্বিত হবো।
আজকের বাজার/এমএইচ