তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষাক্রমে সাংবিধানিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আজ শনিবার সকালে মৌলভীবাজারের দুসাই রিসোর্টে ‘জুডিসিয়ার ইন্ডিপেনডেন্স এন্ড এফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষাক্রমে সাংবিধানিক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে সংঘটিত বিপ্লব সাংবিধানিকতা ও আইনের শাসনের প্রতি এ দেশের তরুণ প্রজন্মের ক্রমবর্ধমান প্রতিশ্রুতি ও সচেতনতার বিষয়টি আমাদের সামনে নতুন করে তুলে ধরেছে এবং এর মাধ্যমে নতুন একটি প্রজাতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার যে প্রচেষ্টা বর্তমানে চলমান রয়েছে; তার অংশ হিসেবে শিক্ষার প্রাথমিক পর্যায়েই তরুণদের কীভাবে সাংবিধানিকতার মৌলিক দিকগুলোর সঙ্গে পরিচিত করানো যায় তার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত হয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, প্রাথমিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংবিধানে উল্লেখিত নাগরিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কে তরুণদের জ্ঞান অর্জনের সুযোগ করে দেয়া হলে সেই অর্জিত শিক্ষা একটি ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনে এ দেশের তরুণদের অবদান রাখার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে সাহায্য করবে।
এছাড়া প্রধান বিচারপতি তার বক্তৃতায় বিচার বিভাগীয় সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন নতুন পদ্ধতি চালু করার পাশাপাশি সংবিধানের বিদ্যমান বিধানের কার্যকর প্রয়োগের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিশেষভাবে তিনি উল্লেখ করেন যে সংবিধানের ষষ্ঠ অংশের প্রথম অধ্যায়ের বেশ কিছু বিধান, যা কখনো সেভাবে প্রয়োগ করা হয়নি, তা বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতির আলোকে নতুন করে পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে তিনি সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল কমিটি ফর জুডিসিয়াল রিফর্ম’র সভাপতি আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামকে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের আওতায় অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ এবং ১০০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাজধানীর বাইরে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন আয়োজনের সম্ভাবনা অনুসন্ধানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন।
এছাড়া, প্রধান বিচারপতি মতামত প্রকাশ করেন যে সংবিধানের ১০৭ অনুচ্ছেদের (৩) ও (৪) দফার সম্মিলিত পাঠের আওতায় প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা যেতে পারে।
প্রধান বিচারপতি বিচার বিভাগ সংস্কারে তার ঘোষিত রোডম্যাপের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন, ইতোমধ্যে উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগে জুডিসিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে।
অধস্তন আদালতের বিচারকগণের বদলি ও পদোন্নতিতে প্রয়োজনীয় নীতিমালা প্রণয়নসহ বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রধান বিচারপতি ফেলোশিপ চালু করার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট কাজ করে যাচ্ছে।
বিচার বিভাগ ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের কোম্পানি বেঞ্চে কাগজমুক্ত কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়েছে এবং ভবিষ্যতে দেশের জেলা আদালতসমূহে এই প্রক্রিয়া চালু করা হবে।
এছাড়া বিচার সেবা সহজিকরণে সুপ্রিম কোর্টে যে হেল্প লাইন সেবা চালু করা হয়েছে তার মাধ্যমে বিচার সেবা প্রার্থীগণ উপকৃত হচ্ছেন এবং এর মাধ্যমে বিচার সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে, বলেন তিনি।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম। এ সময় সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। (বাসস)