বিশ্বব্যাপী আজ ৫ অক্টোবর পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিক্ষক দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘শিক্ষক: ভবিষ্যত গঠনে পুনর্ভাবনা এবং সংকটে নেতৃত্ব প্রদান’। শিক্ষা খাতের আমূল পরিবর্তনে, শিক্ষা অবকাঠামো, পরিবেশ, উপকরণ, যাবতীয় প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা গ্রহণ ও প্রদানে সরকারের ডিজিটাল কর্মযজ্ঞ দেশের প্রান্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এনেছে নতুন মাত্রা। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহায়তায় পরিচালিত এটুআই প্রোগ্রামের যৌথ উদ্যোগে প্রায় ৯ লাখ শিক্ষককে ‘শিক্ষক বাতায়ন’-এ অন্তর্ভুক্তকরণের কাজ চলছে। শিক্ষক বাতায়ন শিক্ষকদের জন্য তৈরি একমাত্র অনলাইন ওয়েব প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে শিক্ষকরা তাদের তৈরিকৃত ডিজিটাল কন্টেন্ট, ছবি, ভিডিও আপলোড এবং ডাউনলোড করতে পারেন। শিক্ষায় উদ্ভাবনী সংস্কৃতির বিকাশে শিক্ষকরা আধুনিক ও মানসম্মত শিক্ষা শহর থেকে গ্রাম পর্যায়ে নিয়ে যেতে নিত্যনতুন উদ্ভাবনের গল্প শেয়ার করতে পারেন। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা নেতৃত্বের বিকাশ ও ভবিষ্যৎ শিক্ষা বাস্তবায়নে জানাতে পারেন নেতৃত্বের গল্প। শিক্ষায় তথ্য ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শহরের মানসম্মত শিক্ষা উপকরণ চলে যাচ্ছে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে। গ্রামের প্রান্তিক এলাকা থেকে কোনো শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান পেয়ে যান শহর বা নগরের কোনো দক্ষ শিক্ষকের কাছ থেকে।
সাম্প্রতিক করোনায় দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যখন স্থবির, তখন সরকারের উদ্যোগে ডিজিটাল ক্লাসরুম, শিক্ষা কার্যক্রমকে রেখেছে গতিশীল। মহান শিক্ষক দিবস উপলক্ষে আমাদের এ বিশেষ আয়োজনে উঠে এসেছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকদের দৃষ্টিতে তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা।
‘শিক্ষক বাতায়ন’ শিক্ষায় প্রযুক্তির সূতিকাগার
গত এক দশকে শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রযুক্তির সমন্বয় ও ব্যবহার ছিল যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এ সময় শ্রেণিকক্ষের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ ও আরও ফলপ্রসূ করার জন্য বিশেষায়িত সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ব্যবহার শুরু হয়। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে কীভাবে শিক্ষাদান করা যায়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়া হয় সবচেয়ে বেশি। শিক্ষকরা মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর এবং ভিডিওর সমন্বয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানো শুরু করেন। এর ফলে শিক্ষকরা আরও বেশি কার্যকর শিক্ষাদান করতে সক্ষম হন এবং স্কুল-কলেজগুলোর শিক্ষা পরিচালনার কার্যক্রমও সফল হতে থাকে।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলতে গিয়ে রংপুরের অন্নদানগর দ্বি-মুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক এবিএম আখতার হোসেন বলেন, ‘এমন একটা সময়ে আমরা আছি, যখন শিক্ষা ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব কিছু ধারণা উদঘাটিত হচ্ছে, নতুন নতুন কৌশল তৈরি হচ্ছে। এসব সম্ভব হচ্ছে শুধুমাত্র তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে।’ তিনি শিক্ষক বাতায়নের সাথে যুক্ত হন ২০১৩ সালে। তিনি মনে করেন, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের ফলে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত ডিজিটাল শিক্ষা পৌঁছে দেয়া এখন সহজসাধ্য। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমে এসেছে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা। গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যে আমূল পরিবর্তন আসছে, তা এখন আর অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। এটি সম্ভব হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে। ইন্টারনেট এখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্বকে অবারিত করে দিয়েছে। যে যেখানে আছে, সেখানে থেকেই পৃথিবীর যেকোনো উৎস থেকে শিক্ষামূলক তথ্য আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে। এ বিষয়ে শিক্ষক আখতার হোসেন মনে করেন, এসব সুবিধার ফলে বর্তমানে একজন শিক্ষক মফস্বলে থেকেই নিজের প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত করার সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রযুক্তির কল্যাণে মহামারিতেও স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম
সাম্প্রতিক করোনায় যখন দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থবির, তখন সরকার ডিজিটাল মাধ্যম (টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম) ব্যবহার করে শিক্ষাদান এবং শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে। শ্রীমঙ্গলের বিটিআরআই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফয়সাল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘বছরের শুরুতে পিছিয়ে পড়া চা বাগানের একটি শ্রমিক পরিবারের শিশু ভিকারুননিসা, সেন্ট জোসেফ, ক্যাম্ব্রিয়ান স্কুলের শিক্ষকের ক্লাস করতে পারবে এ কথাটা বললে আমাদের কাছে অবাস্তব মনে হতো। কিন্তু আজ শহর-বন্দর, বাগান- হাওর, প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুকিশোরদের সামনে এসব দিগন্ত উন্মোচিত হয়ে গেছে। আবার অনেক নতুন শিক্ষকও অনলাইনে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, ভালো ভালো শিক্ষকদের ক্লাস দেখে নিত্যনতুন অনেক কিছু শিখে নিচ্ছেন। নিভৃতে লুকিয়ে থাকা অনেক গুণী শিক্ষকও নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন বিশ্ব দরবারে। মুক্তপাঠের স্লোগান ‘আকাশ আমার পাঠশালা’ কথাটি এখন যেন অক্ষরে অক্ষরে ফলে গেছে।’ মহামারিতে শিক্ষকদের সম্মেলন হওয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের এ করোনা পরিস্থিতিতে আজ আমরা বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ভার্চুয়ালি ১০০ দেশের শিক্ষকমণ্ডলীকে নিয়ে এত বিশাল একটি আয়োজন করব তা ছয় মাস আগেও কেউ চিন্তা করেননি। উদ্ভূত প্রতিকূল পরিস্থিতিকে সামলে আজ আমরা অনলাইনে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছি। শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ‘মুক্তপাঠ’ অনলাইনে ফ্রি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বাতায়নে সেরা অনলাইন পারফর্মার অপশনটি চালু হওয়ার ফলে শিক্ষকরাও এ ক্ষেত্রে আরও বেশি উৎসাহ পাচ্ছেন। শিশু-কিশোরদের জন্যও রয়েছে কিশোর বাতায়নের অবারিত দ্বার। এখানে শিক্ষা ও বিনোদনমূলক কন্টেন্টের পাশাপাশি সংসদ টিভিতে প্রচারিত ক্লাসগুলোকে শ্রেণি ও বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এসব অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো এখন আন্তর্জাতিকভাবেও বিভিন্ন স্বীকৃতি অর্জন করেছে।’
কিশোরগঞ্জ বাঁশগাড়ীর এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রায়হানা হক বলেন, ‘আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ায় এ সংকটের সময়কেও আমরা শক্ত হাতে মোকাবেলা করেছি। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট হাতের নাগালে পাওয়ার কারণে আজ সারা দেশে ভার্চুয়াল ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে বিদ্যালয়ের সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয়েছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে প্রাণের শিক্ষক বাতায়ন। সর্বদা উৎসাহ দিয়ে এ কাজগুলোকে এগিয়ে নিচ্ছে শিক্ষক বাতায়ন।’
যশোরের পায়রাহাট ইউনাইটেড কলেজের প্রভাষক সৈয়দা মাহমুদা মিতুল ইভা এ সংকটের সময়েও শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে ১৬ মার্চ যখন প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় তখন খুব চিন্তায় পড়ে যাই, কীভাবে শিক্ষার্থীদের সাথে যোগাযোগ রেখে তাদের কিছুটা হলেও পাঠ্যবইমুখী রাখা যায়। কারণ প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা একবার বই থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, এদের ফিরিয়ে আনা প্রায় অসম্ভব। ২৫ মার্চ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নিলাম ক্লাস রেকর্ড করে ইউটিউবে আপলোড করব বা কলেজের পেজে সরাসরি যুক্ত হব। ২৯ মার্চ থেকে কাজটি শুরু করেছিলাম, কিন্তু ৪-৫ জনের বেশি যুক্ত করতে পারছিলাম না কারণ এদের পরিবারে কারও এন্ড্রয়েড ফোন ছিল না। বাবা-মায়ের সাথে ফোনে আলোচনা করে কিছু লোককে অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব বোঝাতে সক্ষম হলাম, তারা ফোন কিনল। কিছু শিক্ষার্থী ঈদের জামার টাকা ও প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের টাকা জমিয়ে ফোন কিনেছে। এরপর আমার প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সব সহকর্মী যুক্ত হয়ে আমরা কলেজের রুটিন অনুযায়ী শ্রেণি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এ কার্যক্রম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আবার আমাদের এলাকায় অনেকই এভাবে ক্লাস নেয়া শুরু করেছে।’
শিক্ষকদের আন্তরিকতা এবং তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এভাবেই প্রান্তিক পর্যায়েও স্বাভাবিক রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। যা অপ্রতিরোধ্য বাংলার অগ্রগতিতে বিশাল ভূমিকা রাখছে।
প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠছেন শিক্ষকরা
মাত্র এক দশক আগেও যে শিক্ষকরা কম্পিউটার বা মোবাইলের মতো তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলোতে অভ্যস্থ ছিলেন না, এখন তারাই মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রদান করার পাশাপাশি অনলাইনে শিক্ষা প্রদানেও অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন। এর পেছনে বড় অবদান রেখেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বাস্তবায়নাধীন এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহায়তায় পরিচালিত এটুআই প্রোগ্রাম। এমনকি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এটুআই সময় উপযোগী বিভিন্ন প্রকার অনলাইন প্রশিক্ষণ চালু করায় কোনো প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছাড়াই লাখ লাখ নিবেদিত শিক্ষক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে অনলাইন ক্লাস পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এতে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে শ্রেণিপাঠ গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছেন। পাশাপাশি শিক্ষকরা হয়েছেন যুগোপযোগী ও দক্ষ এবং শিক্ষা ব্যবস্থা হয়েছে উন্নত। করোনাকালীন ৬৪ জেলায় অনলাইন স্কুলের মাধ্যমে সারা দেশে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে এবং এ পর্যন্ত শিক্ষক পরিচালিত ৬৪ হাজার অনলাইন ক্লাস শিক্ষক বাতায়নে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা কলেজের প্রভাষক আনিসুর রহমান শিক্ষক বাতায়ন সম্পর্কে বলেন, শিক্ষক বাতায়নের কল্যাণে সারা দেশের শিক্ষকদের সাথে চমৎকার নেটওয়ার্কিং তৈরি হয়েছে। যার ফলে সবার সাথে সবার যোগাযোগের একটি সহজ মাধ্যম তৈরি হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, মানুষ যা ভাবে, যা চিন্তা করে তা প্রোগ্রামিং দিয়েও বাস্তবায়ন করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীদের ক্লাস অনলাইনে শুরু হলো, বিভিন্ন সেবামূলক অ্যাপস তৈরি হলো। সাধারণ শিক্ষকরা তা ব্যবহার করে নিজেদের গতিপথের ধারা অপরিবর্তিত রাখলেন। আর সবাইকে তা ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করলেন আইসিটি ফর ই-অ্যাম্বাসেডর শিক্ষকরা। অনেক অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক নব নব উদ্ভাবনে শিক্ষকদের সম্মান শিখরে তুলে দিয়েছেন।
যুগোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হচ্ছেন শিক্ষকরা
খুলনা, ইখড়ি কাটেংগা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লিপিকা পাত্র শিক্ষক বাতায়নের একজন সক্রিয় সদস্য। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার উৎকর্ষ সাধনে শিক্ষক’- এ শ্লোগানকে সামনে রেখে শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট পিডিএফ ওয়েব পোর্টাল শিক্ষক বাতায়নের শুভ সূচনা হয়েছিল। শিক্ষক বাতায়নে সদস্য হওয়ার পর থেকে আমি জেলা এম্বাসেডরদের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে দিনে দিনে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছি। অন্য সহযোদ্ধাদের সাথে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি, এটুআইয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বিভিন্ন মিটিং, কর্মশালা, মতবিনিময় সভার মাধ্যমে যুক্ত হতে পেরেছি। বিশেষ করে করোনাকালে অনলাইন পাঠদানসহ শিক্ষামূলক সকল কর্মকাণ্ডে একত্রিত হতে পেরেছি ভার্চুয়াল মাধ্যমে। শিক্ষক বাতায়নের একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরেছি বলেই আজ আমি শুধু আমার বিদ্যালয়েই নয় বরং সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হয়ে করোনার শুরু থেকেই অনলাইন পাঠদানের সাথে যুক্ত হয়ে ‘ঘরে বসে শিখি’, ‘ডিজিটাল অনলাইন শিক্ষা, খুলনা’সহ বিভিন্ন অনলাইন স্কুলের সাথে যুক্ত হতে পেরেছি।’
বর্তমানে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের মানসিক অবস্থার কথা বলতে গিয়ে কুমিল্লার হারং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আয়েশা আক্তার বলেন, ‘আমি মনে করি, শিক্ষক হিসেবে আমার বড় কাজ হলো, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে কীভাবে সমাজের মানবিক পরিবর্তন আনা যায়, ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটানো যায় সেদিকে মনযোগী হয়ে পাঠদান করা। সাম্প্রতিক তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমানে শিক্ষক, অভিভাবক সবাই বেশ সচেতন। ফলে, তারা প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো ছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে।’
রংপুরের চণ্ডিপুর মডেল হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে টিকতে হলে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থার বিকল্প নেই। আজকের বিশ্ব যখন প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে তখন আমরা তথা বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে? ভবিষ্যতে আমরা শিক্ষক সমাজ এমন দক্ষ হতে চাই যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র ভিশন-২১ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়।’
শিক্ষকদের মিলনমেলা
শিক্ষক বাতায়ন কেবল শিক্ষকদের একটি প্ল্যাটফর্মই নয়, বরং এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষকদের মাঝে তৈরি হচ্ছে সুসম্পর্ক, বেগবান হচ্ছে সামগ্রিক শিক্ষা কার্যক্রম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সুর সম্রাট আলাউদ্দিন খাঁ ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক বাকির আহমেদ হামিম মনে করেন, এটি শিক্ষকদের একটি পরিবার। ‘শিক্ষক বাতায়ন ও মুক্তপাঠের মাধ্যমে আমরা শ্রেণি পাঠদানে মাল্টিমিডিয়ার ব্যবহারে দক্ষ হয়েছি। শিক্ষক বাতায়ন শিক্ষকদের মধ্যে পারস্পরিক শেয়ারিং কার্যক্রমের দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।’
সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো। স্বনির্ভর ও আত্মপ্রত্যয়ী জাতি হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে শিক্ষিত ও দক্ষ জনগোষ্ঠীর বিকল্প নেই। এরই ধারাবাহিকতায় এ ধরনের উদ্যোগ প্রান্তিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য, সর্বোপরি দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আশীর্বাদ। এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রতিপাদ্য যেন এসব অগ্রযাত্রারই বহিঃপ্রকাশ।
লেখক: এডুকেশনাল টেকনোলজি এক্সপার্ট, এটুআই