শিগগিরই আসছে পুলিশ ব্যাংক

এস এম জাকির হোসাইন: ব্যাংক স্থাপনের জন্য মূলধন সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় অনেকদূর এগিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। গত নভেম্বর পর্যন্ত ৪০০ কোটি টাকার স্থিতি মূলধনের মধ্যে ৩৬৫ কোটি টাকা জমা করতে পেরেছে এই বাহিনী। বাকি ৩৫ কোটি টাকা জমা হলেই পুলিশ ব্যাংক গঠনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত গতি পাবে।

এদিকে প্রাথমিক খরচ সামলানোর জন্য মূলধনের বাইরে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার একটি তহবিলও গঠনের প্রক্রিয়া ডিসেম্বর থেকে শুরু করেছে এই বাহিনীটি।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামী জানুয়ারির পর তারা মূলধন এবং প্রাথমিক খরচের ৪৪০ কোটি টাকার পুরোটাই সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন। এরপর শুধুমাত্র সরকারি অনুমোদন বাকি থাকবে। অনুমোদন পাওয়া মাত্র যাতে ব্যাংকটির কার্যক্রম দ্রুত শুরু করা যায় সেজন্য সব প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করে রাখছে পুলিশ।

২০১৬ সালে পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাংক স্থাপনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী ৪০০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করতে পারলে ব্যাংকের অনুমোদন দিতে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্রমতে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সভায় পুলিশের কর্মরত সকল সদস্যের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইজিপি থেকে কনস্টেবল এবং সিভিল স্টাফ মিলিয়ে এক লাখ ৬০ হাজার সদস্য ধরে প্রত্যেকের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিন্তু সম্প্রতি পুলিশ ব্যাংক গঠনের আগে প্রাথমিক ব্যয় নির্বাহের প্রসঙ্গ আসে। গত ৩ ডিসেম্বর পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের এ বিষয়ে একটি জরুরি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকার একটি আলাদা তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর এই সিদ্ধান্তের অনুলিপি পৌঁছেছে পুলিশের সকল ইউনিটে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্ঠা এ বি মির্জা মো: আজিজুল ইসলাম আজকের বাজারকে বলেন,দেশের অর্থনীতির কাঠামো অনেক ছোট। তার তুলনায় আগে থেকেই ৫৭টি ব্যাংক অনেকে বেশি। এর উপর ফের নতুন করে আবার কোন ব্যাংক দেয়ার পক্ষে মত নেই এই অর্থনীতিবিদের। হোক তা কোন বাহিনী বা বড় কোন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের। বেশ কয়েকটি বাহিনীর আগে থেকেই ব্যাংক কার্যক্রম থাকায় হয় তো পুলিশও সেই ধারায় ব্যাংক করতে চায়। কিন্তু দেশের অার্থিক কাঠামো এতই ছোট যে,এখানে আর একটি ব্যাংকও কোন ভাবেই অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি করবে না।

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত উপমহা পরিদর্শক (অ্যাস্টেট অ্যান্ড রেভিনিউ) ড. শোয়েব রিয়াজ আলম বলেন, নভেম্বর পর্যন্ত ৩৬৫ কোটি টাকা স্থিতি মূলধন আমরা কালেক্ট করেছি। জানুয়ারির শেষের দিকে আমরা ৪০০ কোটি টাকাই তুলতে পারব। প্রাথমিক খরচের জন্য যে ফান্ড আমরা নির্ধারণ করেছি সেটাও জানুয়ারির মধ্যেই তুলতে পারব।

ব্যাংক গঠনের জন্য শুধুমাত্র পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত সদস্য এবং সিভিল স্টাফদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এজন্য প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে নির্ধারিত অর্থ ২৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৭ হাজার টাকা করে সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

ট্রাস্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ব্যতীত অন্য ইউনিটের সদস্যদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে যা এই (ডিসেম্বর) মাসে শেষ হচ্ছে। একই প্রক্রিয়ায় ডিএমপিতে অর্থ সংগ্রহ শুরু হয়েছে চলতি বছরের মার্চ থেকে যা শেষ হবে আগামী বছরের জানুয়ারিতে।

প্রত্যেক সদস্যকে প্রথম ৫ মাস ২ হাজার টাকা করে ১০ হাজার, এরপরের ৬ মাস ২৫০০ টাকা করে ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ২৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। মূলধন সংগ্রহ শেষের পরের মাসে প্রত্যেককে জমা দিতে হবে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা।

এদিকে প্রশিক্ষণ শেষে যোগদান করা কনস্টেবলদের কাছ থেকে চলতি বছরের জুনে এবং পিএসআইদের কাছ থেকে অক্টোবর থেকে মূলধনের জন্য অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২৫০০ টাকা করে ১০ মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তী মাসে অতিরিক্ত ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে।

অতিরিক্ত ২০০০ টাকার বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অর্থ) একেএম শহীদুর রহমান বলেন, ব্যাংক শুরু করার আগেই ব্রাঞ্চ খোলা, লোকবল নিয়োগ, ইক্যুইপমেন্ট কেনা-বিভিন্ন খরচ আছে। এজন্য আমরা ৩৫ থেকে ৪০ কোটি টাকা লাগবে বলে মনে করছি। কারণ শুরুতেই তো আমরা লাভে চলে যেতে পারব না। প্রাথমিক খরচের যোগান দেওয়ার জন্যই ২০০০ টাকা করে বাড়তি নিচ্ছি।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং আনসার-ভিডিপির নিজস্ব ব্যাংক আছে। ১৯৯৫ সালে আনসার-ভিডিপি ব্যাংক চালু হয়। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনা কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে চালু হয় ট্রাস্ট ব্যাংক। ২০১৬ সালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে চালু হয় সীমান্ত ব্যাংক।