শিরোপা জিতলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স

ওপেনার তামিম ইকবালের দানবীয় ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ষষ্ঠ আসরের শিরোপা জিতলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। আজ টুর্নামেন্টের ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসকে ১৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বিপিএলের শিরোপা জিতে নেয় কুমিল্লা। ফলে গেল আসরের মত এবারও রানার্স-আপ হয়ে সন্তুস্ট থাকতে হলো সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটসকে। ফাইনালে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৯৯ রান করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ১০টি চার ও ১১টি ছক্কায় ৬১ বলে অপরাজিত ১৪১ রান করেন তামিম। জবাবে ৯ উইকেটে ১৮২ রান করে ঢাকা।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচে টস জিতে আগে ফিল্ডিং বেছেন নেন ঢাকা ডায়নামাইটসের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
প্রথমে ব্যাট করার সুযোগটা ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারেনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের এভিন লুইস। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন লুইস। ১টি চারে ৭ বলে ৬ রান করে রুবেল হোসেনের লেগ বিফোর ফাঁেদ পড়েন লুইস।
লুইসের বিদায়ে ক্রিজে তামিমের সঙ্গী হন উইকেটরক্ষক ্ওনোমুল হক বিজয়। রান তোলার কাজটা ভালোভাবেই সম্পন্ন করেছেন তামিম। কিন্তু সর্তক ছিলেন বিজয়। তামিমকে স্ট্রাইক দিতেই মনোযোগী ছিলেন তিনি। বিধ্বংসী রূপ ধারন করা তামিম পাঁচ চার তিন ছক্কায় মোকাবেলা করা ৩১তম বলেই হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তামিম।
তামিমের মারমুখী ব্যাটিং, বিজয়ের সর্তকতায় ১১ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৮৭ রানে পৌঁছে যায় কুমিল্লা। এই জুটি ভাঙ্গতে চিন্তায় পড়ে যান ঢাকার অধিনায়ক সাকিব। শেষ পর্যন্ত সাকিব নিজেই ঢাকাকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন। ১২তম ওভারের শেষ বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন বিজয়। ৩০ বল মোকাবেলায় ২টি চারে ২৪ রান করেন বিজয়। আউট হওয়ার আগে তামিমের সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ত ৬১ বলে ৮৯ রানের জুটি গড়েন বিজয়।
দলীয় ৯৮ রানে বিজয়কে হারানোর ক্ষত ভুলতে না ভুলতে ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আবারো উইকেট হারায় কুমিল্লা। মাত্র ১ বল মোকাবেলা করে তামিমের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হন চার নম্বরে নামা শামসুর রহমান। এই আউটের পেছনেও বড় অবদান ছিলো ঢাকার অধিনায়ক সাকিবের। একক প্রচেষ্টায় শামসুরকে রান আউট করেন সাকিব।
৩ বল ও ১ রানের ব্যবধানে কুমিল্লার ২ উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখে ঢাকা। কিন্তু এসময় আরও বেশি মারমুখী হয়ে উঠেন অন্য প্রান্তে ব্যাট হাতে অবিচল থাকা তামিম। ঢাকার বোলারদের পাল্টা আক্রমন করে মাহমুদুল হাসানের করা ১৪তম ওভারে ১২, রুবেলের করা ১৫তম ওভারে ২৩ রান নিয়ে সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যান তামিম।
ঢাকার ক্যারিবিয় খেলোয়াড় আন্দ্রে রাসেলের করা ১৭তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কায় ৯৯ রানে পৌঁছে যান তামিম। আর তৃতীয় বলে চারের মাধ্যমে বিপিএলের ইতিহাসে প্রথমবারের মত নিজের সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম। আট চার সাত ছক্কায় নিজের মুখোমুখি হওয়া ৫০তম বলে তিন অংকে পা রাখেন তিনি। টি-২০ ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি পেয়ে আরো আক্রমনাত্মক হয়ে ওঠেন এ ওপেনার।
রাসেলের করা ১৭তম ওভার থেকে ২২ রান নেয়ার পর ১৮তম ওভারে ঢাকার অধিনায়ক সাকিবের শেষ দুই ডেলিভারিতে একটি করে ছক্কা ও চার মারেন তামিম। ওভার থেকে রান নেন ১৭টি।
এরপর ইনিংসের শেষ দু’ওভার থেকে ২১ রান নিয়ে কুমিল্লাকে রানের পাহাড়ে বসিয়ে দেন তামিম ও অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। ১০টি চার ও ১১টি ছক্কায় ৬১ বলে ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। ২১ বলে ১টি ছক্কায় ১৭ রানে অপরাজিত থাকেন ইমরুল। ঢাকার পক্ষে ১টি করে উইকেট নেন রুবেল ও সাকিব।
শিরোপা জয়ের জন্য ২০০ রানের টার্গেট ঢাকা ডায়নামাইটসের সামনে। যা করতে পারলে বিপিএলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ডও গড়বে ঢাকা। তবে রেকর্ডের কথা মাথায় না থাকলেও, ম্যাচ জয়ের চিন্তা যে ছিলো তা প্রমাণ করতেই নিজেদের ইনিংস শুরু করে ঢাকা। কিন্তু শুরুতেই হোচট খায় তারা। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ওপেনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন শুন্য রানে ফিরেন। কুমিল্লার অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দুরন্তপনায় রান আউট হন নারাইন।
শুরুতেই নারাইনকে হারানোটা আমলে নেয়নি ঢাকার আরেক ওপেনার শ্রীলংকার উপুল থারাঙ্গা ও তিন নম্বরে নামা রনি তালুকদার। ২২ গজে নিজেদের সাহসিকতা দেখিয়েছেন থারাঙ্গা ও রনি। চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে বসেন তারা। ফলে পাওয়া-প্লেতে ৭১ রান পেয়ে যায় ঢাকা। রান তোলার কাজটা বেশি করেছেন রনি। এ সময় মাত্র ২০ বল মোকাবেলা করে ৪০ রান তুলে ফেলেন রনি। থারাঙ্গা ছিলেন ১৬ বলে ২৮ রানে দাঁড়িয়ে।
পাওয়া-প্লে শেষ হবার পরও রানের গতি ধরে রেখেছিলেন থারাঙ্গা- রনি জুটি। ৮ দশমিক ৪ ওভারেই শতরান পেয়ে যায় ঢাকা। এ অবস্থায় দুর্দান্তভাবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয় ঢাকা। কিন্তু শতরানে পৌঁছানোর পরই দ্বিতীয় উইকেট হারায় ঢাকা। ২৭ বলে ৪৮ রান করা থারাঙ্গাকে প্যাভিলিয়নে ফেরত দেন কুমিল্লার শ্রীলংকার খেলোয়াড় থিসারা পেরেরা। ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান থারাঙ্গা।
থারাঙ্গার বিদায়ে উইকেটে আসেন অধিনায়ক সাকিব। অন্যপ্রান্তে ২৬ বলে ৫১ রানে অপরাজিত ছিলেন রনি। তাই রনিকে সঙ্গ দেয়াটাই প্রধান কাজ ছিলো সাকিবের। কিন্তু ফাইনালের মঞ্চে ব্যাট হাতে ব্যর্থই হলেন ঢাকার দলপতি। ৫ বলে ৩ রান করে ফিরেন তিনি।
দলীয় ১২০ রানে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে সাকিবের বিদায়ের পর যাওয়া আসার মিছিল শুরু করেন ঢাকার পরের দিকের ব্যাটসম্যানরা। ফলে ১৪৩ রানেই সপ্তম উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ঢাকা। উইকেট পতনের তালিকায় ছিলেন রনিও। ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৩৮ বলে ৬৬ রান করে রান আউওটর ফাঁদে পড়েন তিনি। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের আন্দ্রে রাসেল ৪, কাইরন পোলার্ড ১৩, শুভাগত হোম ০ রানে ফিরেন।
সপ্তম উইকেট পতনের পর উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান ১৮ ও মাহমুদুল হাসান ১৫ রান করে ঢাকার হার এড়াতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৮২ রান তুলতে সক্ষম হয় ঢাকা। কুমিল্লার পক্ষে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেন পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স : ১৯৯/৩, ২০ ওভার (তামিম ১৪১*, আনামুল হক ২৪, সাকিব ১/৪৫)।
ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৮২/৯, ২০ ওভার (রনি ৬৬, থারাঙ্গা ৪৮, রিয়াজ ৩/২৮)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১৭ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: তামিম ইকবাল (কুমিল্লা)।
টুর্নামেন্ট সেরা : সাকিব-আল-হাসান (ঢাকা ডায়নামাইটস)