শিল্পের উন্নয়নে সকলকে এক হয়ে কাজ করতে হবে: উজ্জল কর্মকার

প্রভাব তো একটু পড়ছেই। যেমন কাস্টমাররা যখন জানছে তখন তাদের কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে যে কিভাবে ৫% থেকে ১৫% ভ্যাট হয়? ধরুন কেউ যদি ১ লক্ষ টাকার প্রোডাক্ট কেনে তাহলে সে কি চাই ১৫% ভ্যাট দিতে? যেমন আগে আমরা কাস্টমারদের কাছ থেকে ৫%ভ্যাট নিতাম কিন্তু নতুন বাজেটে নির্ধারিত ভ্যাট অনুযায়ী আমাদের কে ১৫% ভ্যাট । সেক্ষেত্রে কাস্টমাররা কেনার প্রতি অনিহা দেখাচ্ছে।যখন আমরা ১৫% ভ্যাটের কথা বলছি তখন তারা গোল্ড কিনতে অনিহা দেখাচ্ছে।আমদের দেশের অনেকেই কলকাতা থেকে গোল্ড কেনে মাত্র ১% ভ্যাটে ।এখন আরো বেশি বাইরে থেকে কিনতে চাইবে। কারণ মানুষ এত বেশি ভ্যাট দেওয়ার চেয়ে প্রতিবেশী দেশ ইন্ডিয়া থেকে সমিপরিমান টাকা খরচ করে গোল্ড কিনতে চাইবে। যে পরিমাণ অতিরিক্ত ভ্যাট তাদের এখানে দিতে হচ্ছে তা দিয়ে তাদের যাওয়া আসা খরচ হয়ে যাবে।

এর প্রভাব তো পড়বেই । আমরা ব্যবসায়ীরা তিগ্রস্থ হবো। কাস্টমার কমে যাবে। ব্যবসাটাও ডে বাই ডে কমে যাবে । ১৫% ভ্যাট শুনলে কাস্টমাররা গোল্ড কিনতে যেয়ে অনেক বেশি ভাববে। আমাদের বিক্রি করাটাও অনেক কষ্টকর হবে যার ফলে বিক্রয় কমে যাবে। যা জুয়েলারি শিল্পের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর।

শিল্প উন্নয়নে সরকারের কাছে চাওয়া
স্বর্ণ বা জুয়েলারি শিল্প দেশের অর্থনীতির জন্য একটি সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে, তাই এই ব্যবসার নীতিমালা প্রবর্তনে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। স্বর্ণ আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ট্যাক্স ফ্রি ব্যবস্থার পুন:প্রবর্তন করতে হবে। ভরি প্রতি ৩০০০ টাকার বদলে ১৫০০ টাকা ট্যাক্স চালু করা হলে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করি। স্বাধীন এই দেশে স্বর্ণ ব্যবসায় নীতিমালা নেই এটা একটা বড় ব্যর্থতা। নিজেদের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ি না করে সবাইকে এক হয়ে এই শিল্পের জন্য কাজ করে যেতে হবে।

স্বর্ণকারদের টিকিয়ে রাখার উপায়
বাংলাদেশে স্বর্ণের কারিগররা অতি মেধাবী, বিচক্ষণ ও সূক্ষ্ম কাজে পারদর্শী। যা তাদের কাজ দেখেই বুঝা যায় কারণ তারা তাদের হাতের মাধ্যমে কাজ করে তা ফুটিয়ে তুলছেন। অথচ দেশের বাইরে মেশিনের মাধ্যমে এসব কাজ করা হয়। তাই বলতে পারি আমরা অন্যান্যদের চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। আমাদের দেশে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৮ লাখ মানুষ জুয়েলারি শিল্পে জড়িত ছিল। এখন তা প্রায় ৫০% কমে গিয়ে ৪ লাখে নেমে এসেছে। এর পেছনে প্রথম কারণটি হচ্ছে আমরা দেশের কারিগরদের কাজ দিতে পারছি না কারণ আমাদের দেশের ক্রেতারা বাইরের দেশের স্বর্ণের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছেন। তাই দেশের ক্রেতারা যদি দেশীয় স্বর্ণ অলংকার ক্রয় করেন তবে আমাদের স্বর্ণ শিল্প এগিয়ে যাবে। দেশে অর্ডার বাড়বে ও কারিগররা কাজ পাবেন। আমাদের গৌরবের স্বর্ণ শিল্পকে যদি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে ক্রেতাদের দেশীয় স্বর্ণের প্রতি আগ্রহী হতে হবে। ভাবতে হবে এ দেশ আমাদের, এ শিল্প আমাদের, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরাও প্রত্যেকে আমাদের ভাই-বোন, আত্মীয়-পরিজন। এদের সবাইকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য দেশী স্বর্ণের প্রতি আগ্রহী ও সহনশীল হতে হবে আমাদের ক্রেতদের ।