শিশুপুত্র শাকিল হত্যা মামলায় পিতার ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন

পটুয়াখালীর দশমিনায় ৮ বছরের শিশুপুত্র শাকিল হোসেন হত্যা মামলায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত শহিদ রাড়ীর সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির ভার্চুয়াল বেঞ্চ আজ এই রায় দিয়েছেন।

একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। দন্ডিত শহিদ রাড়ীকে অবিলম্বে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাকে সাজার ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫ (এ) এর বিধানে উল্লেখিত সুবিধা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নিহত শিশুর পিতা শহিদ রাড়ীর পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ। আদালত শুনানিকালে বলেন, সন্তানের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ হাত হলো পিতা-মাতার হাত। এই আসামি অন্যকে ফাঁসানোর জন্য নিজের পুত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সে একজন পাষন্ড পিতা। এরকম ব্যক্তি সমাজের জন্যও হুমকি।

ঘূর্ণিঝড় সিডরে নিজের বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় শ্বশুরবাড়িতে আশ্রয় নেন শহিদ রাড়ী। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার চরগুনি গ্রামের শশুরবাড়িতেই ঘরজামাই হিসেবে থাকতে থাকেন। এ অবস্থায় শশুরবাড়ি থেকে অন্য ভায়রার টাকা চুরির অভিযোগে শহিদ রাড়ীকে মারধর করা হয়। এর জের ধরে রাগে-ক্ষোভে নিজের ছেলেকে দুই কিলোমিটার দূরে নিয়ে ২০০৮ সালের ২২ মে রাতে হত্যা করেন শহিদ রাড়ী। এরপর বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে চাপ দেন ছেলের জন্য। এ অবস্থায় পরদিন ছেলের লাশ উদ্ধার হওয়ায় শহিদ রাড়ীকে আটক করে পুলিশে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় ২৩ মে মামলা হয়। পরদিনই হত্যার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শহিদ রাড়ী। এরপর পুলিশ ওই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করে।

এ মামলায় পটুয়াখালী জেলা ও দায়রা জজ আদালত ২০০৯ সালের ১৪ মে শহিদ রাড়ীকে মৃত্যুদন্ড দেন। রায় অনুমোদনের জন্য হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। আর নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন আসামি। উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৮ জুন হাইকোর্ট শহিদ রাড়ীর মৃত্যুদন্ড বহাল রেখে রায় দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন শহিদ রাড়ী। শুনানি শেষে আজ আপিল বিভাগ শহিদ রাড়ীর আপিলে দন্ড মডিফিকেশন করে আপিলটি নিস্পত্তি করেন। রায়ে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন জেল দেয়া হয়। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান