আজকাল আমাদের টেলিভিশন ছাড়া চলেই না। দৈনন্দিন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজের রুটিনেও জায়গা করে নিয়েছে টেলিভিশন। অথাৎ বিনোদনের এক বিশেষ মাধ্যম টেলিভিশন। তবে বিনোদনের পাশাপাশি টেলিভিশন যে ক্ষতিও করছে এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবেনা বৈকি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শীকার হচ্ছে শিশুরা। এ থেকে বেরিয়ে আসা জরুরি।
শুধু কার্টুন নয়, অ্যাকশন মুভি, এগ্রেসিভ খেলা সবই শিশুর আচরণে প্রভাব ফেলে। পাশাপাশি তাদের কল্পনার জগৎকে ছোট করে তোলে। তারা তখন সৃজনশীল চিন্তা করতে পারেনা। বাস্তবের জগৎকে তাদের মনে হয় পানশে ও মজাহীন এক পৃথিবী।
ভাবছেন কীভাবে? তাহলে জেনে নিন টিভি এবং ভিডিও গেইম কীভাবে আপনার শিশুর ক্ষতি করছে।
সময় নষ্ট করা
মূলত টিভিতে ২ বছরের ছোট শিশুদের জন্য কোন শিক্ষানীয় কিছু দেখায় না। ছোট শিশুদের জন্য টিভি দেখা সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই না। টিভি দেখা সময়টিতে আপনার শিশুকে অন্য কোন কাজ যেমন ছবি আঁকা অথবা লেগো খেলা ইত্যাদি করতে দিন। টেভি অথবা ভিডিও গেইমের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে এইগুলো তার মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে।
চোখের সমস্যা
আজকাল অনেক শিশুকে চোখে চশমা পড়তে দেখা যায়। এত ছোট বয়সে চশমা পড়ার মূল কারণে রয়েছে অতিরিক্ত টিভি দেখা এবং ভিডিও গেইম খেলা। খুব কাছ থেকে টিভি দেখা অথবা টানা ভিডিও গেইম খেলার ফলে চোখের সমস্যা সৃষ্টি হয়। অনেক সময় মাথাব্যথা দেখা দিয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এক গবেষণায় দেখা গেছে যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা টিভি দেখে, তাদের শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমার ঝুঁকি বেশি!
ঘুমের সমস্যা
অতিরিক্ত টিভি দেখা শিশুদের ঘুমের সমস্যা তৈরি করে। বিশেষ করে রাতে টিভি দেখার কারণে অনিয়মিত ঘুমের চক্রের মধ্যে পড়ে যায় শিশুরা।
বোকা করে তুলে
টিভি শিশুর চিন্তা করার ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। টিভিতে খুব কম অনুষ্ঠান আছে যা শিক্ষানীয়, যা শিশুর চিন্তার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করতে পারে। টিভিতে এমন অনেক কিছুই দেখানো হয় যা বাস্তবাতার সাথে অসামঞ্জস্য।
আচরণে অসামঞ্জস্যতা
মারামারি বা ধ্বংসাত্মক অনুষ্ঠান বেশি দেখার ফলে শিশুর উগ্র স্বভাব ও আচরণগত সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এমনিকি এটি তাদের মধ্যে সহিংস আচরণ তৈরি করে। পড়ালেখায় অমনোযোগী করে তোলে।
অনুকরণ করা
শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। তারা যা দেখে তাই অনুকরণ করে থাকে। যার ফলে টিভিতে তার প্রিয় চরিত্র যা করে, তাই করার চেষ্টা করে। যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। যেমন সুপারম্যানের চরিত্র দেখে অনেক শিশু ছাদ থেকে উড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারায়। আবার কিছু শিশু টিভিতে ভয়ংকর, অবাস্তব কাহিনী দেখে ভীত হয়ে যায়।
অসামজিক হওয়া
অতিরিক্ত ভিডিও গেইম খেলা শিশুদের নেশায় পরিণত হয়। যা তাদের অসামজিক হিসেবে গড়ে তোলে। গেইম খেলার নেশায় শিশুরা বাইরের সমাজ জগৎ থেকে দূরে সরে যায়।
একা হয়ে পড়া
বন্ধু তৈরির সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল শৈশবকাল। আর এইসময়টি বন্ধুদের না দিয়ে ভিডিও গেইমের দেওয়ার কারণে আপনার শিশু একসময় বন্ধুশূন্য হয়ে পড়ে।
ওজন বৃদ্ধি
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব শিশুরা দিনে চার ঘণ্টা বেশি সময় টিভি দেখে তাদের ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেশি থাকে। তিনভাবে তাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। এক দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা (কোন শারীরিক কর্মকান্ড না করা)। দুই টিভি দেখার সময় অতিরিক্ত ক্যালরি খাবার যেমন চিপস, চকলেট, ক্লোড ড্রিংক্স গ্রহণ। তিন খাবার সঠিকভাবে হজম না হওয়া।
মানসিক বিকারগ্রস্ত হওয়া
ভিডিও গেইমের আসক্তি অতিরিক্ত হয়ে গেলে একসময় তা আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শিশুরা সারাক্ষণ নতুন নতুন ভিডিও গেইম এবং তার ভার্সনের কথা চিন্তা করতে থাকে। এক পর্যায়ে এটি মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ভাবছেন কীভাবে টিভির এই কুফল থেকে আপনার শিশুকে রক্ষা করবেন?
ব্রিটেনের স্ট্যান্ডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাতে বলা হয়েছে, টিভি শিশুদের আবেগ কমিয়ে দিচ্ছে। এই শিশুরা চটপটে তো হয়ই না, সিদ্ধান্তও নিতে পারে না। ছোটখাট বুদ্ধির খেলা হোক বা ছবি আঁকা কোনও কাজই তেমন গুছিয়ে করতে পারে না এই শিশুরা।
এই সমস্যার সমাধানে গবেষকগণ বলেন, ছোটদের স্ক্রিন থেকে দূরে রাখুন। দিনে অন্তত একটা ঘণ্টা নিজের মতো খেলতে দিন। চারপাশের পৃথিবীকে বোঝার জন্য তাদের তৈরি করুন।
শহরগুলোতে মাঠের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যার কারণে শিশুরা খেলাধুলা করার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আর এই অবসর সময় কাটানোর জন্য শিশুরা টিভি অথবা ভিডিও গেইমের উপর নির্ভর হচ্ছে। কিন্তু শিশুদের শারীরিক ও মানসিক গঠনের জন্যে খেলাধুলা করাটা বেশ জরুরী। এই ভিডিও গেইম এবং টিভি শিশুর মারাত্নক ক্ষতি করছে।
কখনও শিশুদের একা একা টিভি দেখতে দিবেন না। এতে সহিংস ও যৌন বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখার ঝুঁকি তৈরি হয় শিশুদের।
ছোট থেকে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ভিডিও গেইম খেলার নেশা কমে যাবে।
টিভি দেখার একটি সময় নির্দিষ্ট করে দিন। কিংবা টিভি দেখাটাকে পুরষ্কার হিসেবে প্রদান করতে পারেন। যেমন পরীক্ষা ভাল নম্বর পেলে অথবা দ্রুত পড়া শেষ করা হলে টিভি দেখার অনুমতি দেওয়া হবে।
আপনার শিশুকে সময় দিন। তার সঙ্গে খেলা করুন। গল্প পড়ে শোনান। এই ছোট ছোট কাজগুলো আপনার শিশুকে টিভি দেখা এবং ভিডিও গেইম খেলা থেকে বিরত রাখবে।
আজকের বাজার : আরজেড/আরএম/১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮